| বিকাল ৫:৪৮ - শুক্রবার - ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আপিল বিভাগে মুজাহিদের ফাসির আদেশ বহাল

 
অনলাইন ডেস্ক, ১৬ জুন ২০১৫, মঙ্গলবার:
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। আজ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ ছিদ্দিকী।
গত ২৭শে মে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের আপিলের শুনানি শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে, আসামিপক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান। এখন পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় রায় ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যে আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী মৃত্যুদ- কার্যকর হয় মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং আবদুল কাদের মোল্লার। আমৃত্যু কারাদ-ের রায় ভোগ করছেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। মৃত্যুর কারণে আপিল পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় গোলাম আযম ও আবদুল আলিমের মামলায়।
২০১৩ সালের ১৭ই জুলাই মুজাহিদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। একই বছর ১১ই আগস্ট ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন তিনি। গত ২৯শে এপ্রিল থেকে আপিলের শুনানি শুরু হয়। মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটির প্রমাণ পান ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ১, ৩, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি। প্রমাণিত ১ নম্বর অভিযোগকে ৬-এর সঙ্গে সংযুক্ত করে এ দুটি অভিযোগে সমন্বিতভাবে ও ৭ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদকে মৃত্যুদ-, ৫ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ৫ বছরের কারাদ-াদেশ দেয়া হয়।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১০ই ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর ৫ নম্বর চামেলীবাগ বাসা থেকে ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন হোসেনকে অপহরণ করা হয়। মুজাহিদের পরিচালনাধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন ৭-৮ যুবক তাকে ধরে মিনিবাসে তুলে নেয়। আজ পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের মে মাসে একদিন মুজাহিদের নেতৃত্বে ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন থানায় বিভিন্ন গ্রামে হিন্দুদের প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা। পরে এলোপাতাড়ি গুলি করে ৫০-৬০ জন হিন্দু নর-নারীকে হত্যা করা হয়। তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে যে কোন একদিন ফরিদপুর শহরের খাবাসপুর মসজিদের সামনে থেকে রাজাকাররা ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট (রথখোলার) মৃত রমেশ চন্দ্রনাথের পুত্র রণজিৎ নাথ ওরফে বাবুনা থকে আটক করে। এরপর ফরিদপুর পুরনো সার্কিট হাউসে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মুজাহিদ পাকিস্তানি সেনা অফিসার মেজর আকরাম কোরাইশীর সঙ্গে কথা বলার পর বাবু নাথের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তার একটি দাঁত ভেঙে ফেলা হয়। নির্যাতনের পর মুজাহিদের ইশারায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিহারি ক্যাম্পের উত্তর পাশে আবদুর রশিদের বাড়িতে নিয়ে রাজাকাররা আটকে রাখে। পরে রাতে রণজিৎ নাথ বাবু সেখান থেকে পালিয়ে জীবন বাঁচান। চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৬শে জুলাই সকাল বেলায় ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থেকে স্থানীয় রাজাকাররা মো. আবু ইউসুফ পাখিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে আটক করে। এরপর পাখিকে ফরিদপুর স্টেডিয়ামে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে আটক করা হয়। আটক বন্দিদের মধ্যে আবু ইউসুফ পাখিকে দেখে মুজাহিদ সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি মেজরকে কিছু একটা বলার পরই তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। সেখানে ১ মাস ৩ দিন আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাঠিয়ে দেয়া হয়। নির্যাতনের ফলে আবু ইউসুফ পাখির বুকের ও পিঠের হাড় ভেঙে যায়। পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ৩০শে আগস্ট রাত ৮টায় পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি মুজাহিদ, পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী ঢাকার নাখালপাড়ার পুরনো এমপি হোস্টেলের আর্মি ক্যাম্পে যান। সেখানে তারা আটক সুরকার আলতাফ মাহমুদ, জহির উদ্দিন জালাল, বদি, রুমি, জুয়েল ও আজাদকে দেখে তাদের গালাগাল করেন। একপর্যায়ে পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে বলেন, প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগেই তাদের হত্যা করতে হবে। মুজাহিদ অন্যদের সহায়তায় আটকদের একজনকে ছাড়া অন্য বন্দিদের অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যা করেন এবং তাদের লাশ গুম করেন। ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৭শে মার্চের পর ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্প তৈরি করে। সেখানে রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করে সেখান থেকে অপরাধজনক নানা কার্যক্রম চালায়। মুজাহিদ ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি হওয়ায় ওই আর্মি ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ছাত্রসংঘের ও আলবদর বাহিনীর নেতা হিসেবে সেখানে উপস্থিত পাকিস্তান সেনাকর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী নানা অপরাধের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করতেন। এ ধরনের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র মাধ্যমে মুজাহিদ গণহত্যা, হত্যা, নির্যাতন, দেশান্তর, একাত্তরের ১০ই ডিসেম্বর থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন। সপ্তম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ১৩ই মে মুজাহিদের নির্দেশে রাজাকার বাহিনী ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করে। সেখানে বিরেন্দ্র সাহা, উপেন সাহা, জগবন্ধু মিস্ত্রি, সত্য রঞ্জন দাশ, নিরোদ বন্ধু মিত্র, প্রফুল্ল মিত্র, উপেন সাহাকে আটক করা হয়। পরে তাদের হত্যা করে তাদের বাড়িঘরে আগুন ধেিরয় দেয়া হয়। এ ছাড়া রাজাকাররা সুনীল কুমার সাহার কন্যা ঝুমা রানীকে ধর্ষণ করে। অনিল সাহাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৪:০৪ অপরাহ্ণ | জুন ১৬, ২০১৫