| রাত ৯:০০ - শুক্রবার - ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

স্বামীর বাড়িতে তরুণীর অনশন ! অবশেষে পুত্রবধূর স্বীকৃতি

সাজ্জাতুল ইসলাম সাজ্জাত, ০৩, জুন, বুধবার,
ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের বাড়িওয়ালাপাড়ায় স্বামীর বাড়ির সামনে অনশন করে অবশেষে ১২ ঘন্টা পর পুত্রবধূ হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন হিন্দু সমপ্রদায়ের এক তরম্নণী।
পৌর শহরের বাড়িওয়ালাপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, শহরের স্টেশন রোড এলাকার ওই তরম্নণীটি গত সোমবার সকালে থেকে স্বামীর বাড়ির আঙ্গিনায় মাটিতে জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকা  বিছিয়ে বসে আছেন মাথা নিচু করে। চারপাশে জড়ো হয়েছেন নানা বয়সী পাড়া প্রতিবেশি। উৎসুক হয়ে আছেন তারা। আর তরম্নণী দৃঢ় চিত্ত। তার চাওয়া একটিই- স্বামী তাকে ঘরে তুলে নিক। বউমা বলে ডাকুক শ্বশুরবাড়ির লোকজন। শুধু এ দাবি পূরণের জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে, লজ্জা-সঙ্কুচ ঝেড়ে ফেলে সকাল থেকে বসে আছেন। কিন্ত কারো কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। অবশেষে শ্বশুরবাড়ির লোকজন হার মানলো অনশনরত সেই তরম্নণীরই কাছে। সোমবার রাতে তাকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিয়ে ঘরে তুলে নিয়েছে। বর্তমানে শ্বশুরবাড়িতে অবস’ান করছেন তিনি।
তরম্নণীটি জানান, ‘প্রায় পাঁচ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কের পরে বছর দুয়েক আগে আমাদের বিয়ে হয়। প্রেমিক রাজীব সরকার আমাকে আদালতে নিয়ে গিয়ে গোপনে বিয়ে করে। বিষয়টি একানত্ম ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বিয়ের পরে ময়মনসিংহ শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে থেকেছি। তখন রাজীব বলতো, আগে প্রতিষ্ঠিত হই, তারপর তোমাকে আমাদের বাড়িতে তুলে নিব। কিন্ত গত এক মাস ধরে রাজীব আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। পরে জানতে পারলাম, সে অন্যত্র বিয়ের চেষ্টা করছে। আর আমাকে বিয়ে করার বিষয়টি পরিবারের কাছে অস্বীকার করছে।’ স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবি আদায়ের জন্য অনশনরত তরম্নণী দাবি করে বলেন, ‘আমার কাছে বিয়ের প্রমাণ আছে। তাই স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর অধিকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যনত্ম অনশন চালিয়ে যাব।’ এদিকে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খবরটি শহরে ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। এরপরেও তরম্নণী তার সিদ্ধানেত্ম অটল থাকেন। অবশেষে বেলা বেড়ে রাত গড়ালেও তরম্নণী অনশন ভঙ্গ না করে নিজের দাবি আদায়ে সিদ্ধানেত্ম অটল থাকায় প্রশাসন, স্থানীয় লোকজন, জনপ্রতিনিধি, ও হিন্দু সমপ্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা রাজীবের পরিবারকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য চাপ দেয়। সোমবার রাত মধ্যরাতে রাজিবের পরিবার অনশনরত তরম্নণীকে ঘরে তুলে নেয়।
গৌরীপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনিরম্নজ্জামান পলাশ বলেন, বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হিন্দু সমপ্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আলোচনা করেছেন। কিন্তু সমাধানে আসতে পারেননি। এ কারণে সোমবার তরম্নণী অবস্থান নিয়ে অনশন করছে বলে খবর পেয়েছি।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য রাজীব সরকারের মুঠোফোনে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী শেখ জানান, ওই তরম্নণীর অনশনের খবর পেয়ে পুলিশ রাতে ঘটনাস’ল পরিদর্শন করেছে। রাতেই অনশনের বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়েছে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৫:৩৯ অপরাহ্ণ | জুন ০৩, ২০১৫