নরেন্দ্র মোদির সমালোচনায় মার্কিন মিডিয়া
অনলাইন ডেস্ক,২৭ মে ২০১৫, বুধবার:
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতায় বসার এক বছর পূর্তিতে তার সমালোচনাই বেশি এসেছে আমেরিকান গণমাধ্যমে। ভারতীয় ভোটারদের ‘আচ্ছে দিন’ (ভালো দিন)-এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মসনদে আসেন মোদি। কিন্তু আমেরিকার শীর্ষ দু’টি পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও নিউ ইয়র্ক টাইমস মোদির সমালোচনায় সরব। তাদের মতে, মোদির বিভিন্ন সেøাগান মূলত ‘প্রচারণা’। অত্যধিক প্রত্যাশা সত্ত্বেও, কর্মসংস্থানের হার বৃদ্ধির গতি এখনও মন্থর। মোদি-সরকারের এক বছর পূর্ণ হওয়া নিয়ে আমেরিকান বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এমনটিই লিখেছে বার্তা সংস্থা পিটিআই। মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বের এক বছর উপলক্ষে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত একটি লেখার শিরোনাম ছিল- “ইন্ডিয়া’স মোদি অ্যাট ওয়ান ইয়ার: ‘ইউফোরিয়া ফেইজ’ ইজ ওভার, চ্যালেঞ্জেস লুম” (ভারতে মোদির এক বছর: ‘রমরমা অবস্থা’র ইতি, চ্যালেঞ্জ দৃশ্যমান)। সে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ভারতীয় ভোটাররা পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক জাগরণের জন্য নরেন্দ্র মোদির হাতে ‘এক প্রজন্মে একবার’ সমান ম্যান্ডেট দিয়েছে। কিন্তু এক বছর পর বাস্তবতা হলো, সে অবস্থা এখন ডুবতে চলেছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, মোদির ‘মেইক ইন ইন্ডিয়া’র উদ্দেশ্য ছিল, উচ্চমাত্রার উৎপাদন বৃদ্ধি। কিন্তু এ প্রচারণা এখন পর্যন্ত প্রচারণা বৈ কিছু নয়। প্রতিবেদনে আরও রপ্তানি সহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক নির্দেশকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, অর্থনীতি কেবল পঙ্গুই হচ্ছে। বলা হয়েছে, মূলধন বিনিয়োগের জন্য গতবছরের মূল্যস্ফীতি-সমন্বয়কৃত ঋণদান ২০০৪ সালের অবস্থায় পৌঁছেছে। এপ্রিল মাসে টানা পাঁচবারের মতো রপ্তানি ছিল নিম্নগামী। কর্পোরেট আয়ও ছিল কম। বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় স্টক ও বন্ডস থেকে মে মাসেই কেবল ২০০ কোটি ডলার উঠিয়ে নিয়েছে।
এক সংবাদ বিশ্লেষণে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, মোদিকে এ বাস্তবতার অবশ্যই মুখোমুখি হতে হবে যে, তার বেশিরভাগ ইস্যু এখন পর্যন্ত সম্ভাবনার ওপর ঝুলে আছে। ‘আফটার অ্যা ইয়ার অফ আউটসাইজ এক্সপেক্টেশন্স, মোদি অ্যাডজাস্টস হিজ পলিটিক্যাল কোর্স ফর ইন্ডিয়া’ (মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশার এক বছর পর, মোদি ভারতের জন্য তার রাজনৈতিক পথ পরিবর্তন করছেন) শিরোনামের ওই লেখায় বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে ভারতকে উজ্জ্বল স্থান হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এ বছরই চীনকে ছাড়িয়ে ভারত হবে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির দেশ। কিন্তু দেশে, চাকরি বৃদ্ধির হার মন্থর। ব্যবসা-বাণিজ্য এখনও ‘অপেক্ষা করো ও দেখ’ অবস্থায় আছে। মোদির রয়েছে রাজনৈতিক দুর্বল স্থান। দেশটির পার্লামেন্টের বিরোধী দলের নেতারা তার দুইটি কেন্দ্রীয় সংস্কার উদ্যোগ আটকে দিয়েছে। তাকে ‘গরিববিরোধী’, ‘কৃষকবিরোধী’ হিসেবে প্রচার করছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, মোদি নিজেই যে ভয়ানক সমস্যা সৃষ্টি করেছেন, তা হলো, মানুষের মনে অত্যধিক প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছেন। মানুষের প্রত্যাশা ছিল, তিনি ভারতের প্রবৃদ্ধির পথে অন্তরায় সবকিছুকে উড়িয়ে দেবেন। সেখানে ভারতের নেতৃত্বস্থানীয় গার্মেন্ট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্ট ক্রাফটসের ভিমার্শ রাজদানের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, মোদির সরকার নিজেরা যত বড়, তার চেয়ে বড় তাদের ইমেজ। তারা যেন সুপারহিরো হয়ে গেছে। কিন্তু সবাই জানে, সুপারহিরো বলতে কিছু নেই। ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মোদি নিউ ইয়র্ক থেকে প্যারিস, সেখান থেকে সিডনির উজ্জ্বল মঞ্চগুলোতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। ফলে সেসব দেশের বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছে। কিন্তু অপরদিকে, মোদি কিছুটা অনিশ্চিত ভাবভঙ্গিতে দৌড়িয়েছেন। ফলে গত বছরের নির্বাচনের পর যেসব বিনিয়োগকারী সাহসী পরিবর্তনের আশা করেছিলেন, তারা হতাশ হয়েছেন। তার সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রচালিত ব্যাংক ও কো¤পানি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়নি। কেননা, এর ফলে চাকরিচ্যুতির মতো অ-জনপ্রিয় ঘটনা ঘটতে পারতো। অবিশ্বাস্য পরিমাণ কর আদায়ের যে খ্যাতি রয়েছে ভারতের, তাতে উন্নতি আনার অঙ্গীকার করেছিলেন মোদি। কিন্তু সরকার বিনিয়োগকারীদের ওপর আরও করের বোঝা চাপিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এসব কর দেয়ার কথা ছিল না। তবে মোদির প্রশংসাও করেছে আমেরিকার নেতৃত্বাস্থানীয় এ দৈনিক। ওয়ালস্ট্রিট বলেছে, মোদি রেলওয়ে ও প্রতিরক্ষায় আরও বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাও দূর করেছেন। তার সরকার জ্বালানি দামে নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করেছে। কয়লা খনিতে বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা অনুমোদন করেছে, যা বাজারবান্ধব। এছাড়া লাখো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে গরিবদের জন্য। নতুন পেনশন ও বীমা প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভারতে ওয়াল মার্ট স্টোরের প্রধান নির্বাহী ক্রিশ আয়ারকে উদ্ধৃত করেছে পত্রিকাটি। ক্রিশ আয়ার বলেছেন, আমরা ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা নিরসনে অনেক উন্নতি দেখছি। আমরা সরকারের বাজার ও ভোক্তামুখী নীতিতে উৎসাহিত হচ্ছি। অপরদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, দেশটির প্রধান নির্বাহীরা মনে করছেন, মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের ব্যবসায়িক সংস্কৃতি ‘অবশ্যই পরিবর্তিত হয়েছে’। সেখানে বলা হয়েছে, একটি ভালো বছর অতিক্রম করেছে ভারতের অর্থনীতি। ভারত আমদানিকৃত তেলের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। তাই এ বছর তেলের নিম্নমুখী দামের জন্য সরকারের অনেক উপকার হয়েছে। বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনাও সম্ভব হয়েছে। এপ্রিলে মুদ্রাস্ফীতি কমেছে ৪.৮৭ শতাংশ। বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫ শতাংশে।