রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদার হয়েও এদেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন-প্রধানমন্ত্রী

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদার হয়েও এদেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। তার এই ভালবাসা আরো পাকাপোক্ত হলো রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন হলে শুধু এই অঞ্চলের সাধারণ শিক্ষার্থীরাই উপকৃত হবে না, বাংলার মানুষের হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ চিরজীবি হয়ে থাকবেন। ”
শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শাহজাদপুর পাইলট স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এমপি’র সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য হাসিবুর ররহমান স্বপন। স্মারক বক্তৃতা করেন এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব বেগম আকতারী মমতাজ। ধন্যবাদ বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক বিল্লাল হোসেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও ২২৫ মেগাওয়াট সার্কেল ইউনিট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তি প্রস্তরসহ ১৫০ গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিরাজগঞ্জের মুলীবাড়িতে নির্মিত মেরিন একাডেমী, সিরাজগঞ্জ পার্সপোর্ট অফিস, সিরাজগঞ্জ জেলা রেজিষ্টার অফিস এবং সিরাজগঞ্জ শেখ রাসেল পার্কের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ফলে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাহিত্য চর্চায় দেশবাসী উপকৃত হবে। শুধু শাহজাদপুরে নয়, আগামীতে কুষ্টিয়ার শিয়ালদহেও বেসরকারী উদ্যেগে আরো একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।”
তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বাংলার মানুষের মনোজগতের কবি। তিনি জমিদার হয়েও প্রজাদের দুঃখ দুর্দশায় এগিয়ে এসেছেন। তিনিই প্রথম এদেশে কৃষকদের জন্য ক্ষুদ্রঋন প্রচলন করেন। একই সঙ্গে তার নোবেল পুরস্কার পাবার পুরো টাকাই সমবায় ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ হিসেবে বিতরণ করেছেন। শুধু কৃষকদের নয়, দিঘি ও পুকুর খনন করে মৎস্য চাষের ব্যবস্থা করেছেন। নিজের জমিদারীর সারে চার হাজার বিঘা সম্পত্তি গোচারন ভুমি হিসেবে মানুষকে দান করেছিলেন। যার উপর ভিত্তি করে এই্ অঞ্চলে দুগ্ধ খামার গড়ে ওঠে। এখনও শাহজাদপুরে হাজার হাজার মানুষ এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্বাবলম্বীতা অর্জন করেছেন। জালিয়ানা বাগের নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্বকবি বৃটিশ সরকারের দেয়া নাইট উপাধি প্রত্যাখান করেছিলেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, “মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীর ওপর রবীন্দ্র নাথের এই প্রভাবের কারণে এক সময় পাকিস্তানী শাষকগোষ্ঠী ভীত হয়ে পড়ে। তারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সরকারি গণমাধ্যমগুলোতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিষিদ্ধ করে। এমনকি ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র নাথে শতবর্ষ জন্মবার্ষিকী পালনেও নেমে আসে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এ দেশের শিল্পী, সাহিত্যিক সচেতন মানুষ আইয়ুব সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে তা পালন করেছে স্বাড়ম্বরে।”
তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার বহু আগেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গীতিকবিতাটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের অসাম্প্রদায়িক চেতনা আর্ন্তজাতিকতাবাদ মানবকল্যাণ এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার ভাবনাগুলো বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনায় স্থায়ী আসন করে নিয়েছিল।”
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, “যারা সাধারণ মানুষকে পেট্রলবোমা দিয়ে হত্যা করতে পারে তাদের জনগন কিভাবে ভোট দিতে পারে।”
সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারযোগে শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি হেলিপ্যাডে আসেন। সেখান থেকে সড়ক পথে শাহজাদপুর পাইলট স্কুল মাঠে উপস্থিত হন। অনুষ্ঠান শেষে দুপুর একটায় তিনি সড়ক পথে বাঘাবাড়ি গিয়ে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে শাহজাদপুর ত্যাগ করেন।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার ২৫ বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪ তম জন্মবার্ষিকী।
শাহজাদপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে পৌঁছেছেন। কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাস থাকবে। কবির স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ও নওগাঁর পতিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থাকবে।
বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির আইনের খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে। খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। শিগগির মন্ত্রিসভায় এটি অনুমোদিত হবে। আগামী মাসে সংসদ অধিবেশনেই এটি বিল হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এখানে রবীন্দ্র দর্শন বিষয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। এছাড়া কলা, সংগীত ও নৃত্য, চারুকলা, নাট্যকলা, সামাজিক বিজ্ঞান, কৃষি ও সমবায়, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন, বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিসহ নতুন কিছু বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ানো হবে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হলে দেশে স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা হবে ৩৮টি। এর বাইরে খুলনায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করার বিষয়টিও চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছেন ইউজিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।