সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদ বদিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

অনলাইন ডেস্ক| ৬ মে ২০১৫, বুধবার:
কক্সবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি এবং মহাজোট সরকারের সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানসহ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে করা পৃথক তিনটি মামলার তদন্ত শেষে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের এক বৈঠকে পৃথক তিনটি মামলার চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেয়া হয়। তাই আগামীকালের মধ্যে আদালতে এই তিনটি চার্জশিট দাখিল করবেন সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তারা। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বাংলামেইল এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, দুদকের তদন্তে এই তিনজনের মধ্যে কক্সবাজার-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন ৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকার ও ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা আব্দুল মান্নান খানের বিরুদ্ধে ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ এবং তার স্ত্রী সৈয়দা হাসিনা সুলতানার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মেলেছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতিবেদন উল্লেখিত অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে তা যথাযথ বলে মনে হওয়ায় আজ ওই তিনজনের বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্যগোপন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই পৃথক তিনটি চার্জশিট আগামীকালের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় ও মহামান্য আদালতে দাখিল করবে বলেও জানান তিনি।
তদন্তে যা বেড়িয়ে এসেছে:
দুদক সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৩ জানুয়ারি হলফনামায় তথ্য গোপন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আমলে নিয়ে মহাজোট সরকারের হাফ ডজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানে প্রায় ১৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একই বছরের ২১ আগস্ট মামলা করা হয় সাংসদ আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে। দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বাদি হয়ে মামলাটি (মামলা নং- ৩৭) দায়ের করেছিলেন।
পরে মামলার তদন্তভার দেয়া হয় দুদকের আরেক উপ-পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদকে। ওই মামলার তদন্তে দেখা যায়- আব্দুর রহমান বদি কমিশনে যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছিলেন তার মধ্যে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৫৩ হাজার ২৭ টাকার সম্পদ গোপন করেছেন। এছাড়া ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৯৪২ টাকার অবৈধ সম্পদ বেড়িয়ে আসে এ তদন্তে। যা তিনি অবৈধমালিকভাবে এতদিন ব্যবহার করে আসছেন। দুদক আইন- ২০০৪ সালের ২৬(১) ও ২৭ (২) ধারায় অপরাধটি প্রমাণিত হওয়ায় কমিশন এই চার্জশিটের অনুমোদন দিয়েছে।
এদিকে দুদকের অনুসন্ধানে প্রায় সাড়ে ৭৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের একই তারিখে মামলা করা হয় সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের বিরুদ্ধে। রাজধানীর রমনা থানায় দুদকের উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে (মামলা নং- ৩৬) মামলাটি দায়ের করেছিলেন। পরে নাসির উদ্দিনই অভিযোগটি তদন্ত করেন।
তার তদন্তে দেখা যায়, আবদুল মান্নান খানও আব্দুর রহমান বদির মত কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে সঠিক সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। তার বিরুদ্ধে সর্বমোট ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৬১২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া যায়। তাছাড়া ২ কোটি ৬৫ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪২ টাকার অবৈধ সম্পদেরও প্রমাণ পাওয়া যায় সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।
শুধু আব্দুল মান্নান নয়, একই অভিযোগে মামলা করা হয়েছিলো তার স্ত্রী সৈয়দা হাসিনা সুলতানার বিরুদ্ধে। দুদকের অনুসন্ধানে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বছরের ২১ অক্টোবরে একই থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছিলো। মামলার বাদি ও তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিনের তদন্তে সৈয়দা হাসিনা সুলতানার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৩ হাজার ৯১২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার প্রমাণ পাওয়া যায়। তারসঙ্গে তিনি ৩ কোটি ৩৫ লাখ ২৭ হাজার ২৯ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক বলে প্রমাণ মিলে দুদকের তদন্তে।
বিষয়গুলো কমিশনের যাচাই-বাছাই শেষে দুদক আইন- ২০০৪ সালের ২৬ (১) ও ২৭ (২) ধারায় ওই দম্পতির বিরুদ্ধে দুটি চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়েছে।