| রাত ৯:১১ - মঙ্গলবার - ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সাদা পোশাকে তামিমের রঙিন শতক

অনলাইন ডেস্ক |৩ মে ২০১৫, রবিবার:

পঞ্চম দিন ১৯৬ রান করে ক্রিজে দাঁড়িয়ে তামিম ইকবাল। ডবল সেঞ্চুরির জন্য প্রয়োজন মাত্র চার রান। বল হাতে ছুটলেন জুনায়েদ খান। বলটি মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তামিমের শট। ততক্ষণে উড়ে আছড়ে পড়েছে বাউন্ডারির বাইরে। জুনায়েদ খানের ওভারেই পরপর দুই চারের মার হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি করছেন তামিম। তিনি হয়তো ভাবতেই পারেননি ডাবল সেঞ্চুরিও তুলে নেবেন তার বলেই। ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা দুটি সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম ইকবাল। পরদিন সকালে টিম হোটেলের দরোজাতে দাঁড়িয়ে  বলেছিলেন, ‘এখন আমরা যেভাবে খেলছি তাতে রেকর্ড ভাঙতেই থাকবে।’ সত্যি তামিমের সেদিনের আত্মবিশ্বাস খুলনা টেস্টে বাস্তবে রূপ নিলো। সাদা পোশাকেও ক্রিকেটকে রাঙিয়ে তোলেন ব্যাটের তুলিতে। আউট হওয়ার আগে দেশের মাটিতে প্রথম ও দেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকালেন। এর আগে শ্রীলঙ্কার গল টেস্টে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। ২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেট শুরুর পর ১৩ বছর লেগেছিল মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরির ইতিহাস রচনা করতে। আর ১৫ বছর পর দেশের মাটিতে সেটি করলেন দলের সহ-অধিনায়ক তামিম ইকবাল। যদিও এই ম্যাচের অনেকটা সময়ই ইনজুরি আক্রান্ত মুশফিকের পরিবর্তে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তামিম। ২০৬ রান করে মো. হাফিজের বলে আউট হলেন তামিম ছাড়িয়ে যান মুশফিকের ২০০ রানকেও। ৪৬৪ মিনিট ক্রিজে থেকে ২৭৮ বল খেলে ১৭টি চার ও ৭টি ছয় হাঁকান তামিম।  যদিও এই ম্যাচে নামার আগেই তাকে ঘিরে ধরেছিল কালো রঙ। প্রিয় ফুপুর মৃত্যুর সংবাদ নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন তিনি।
খুলনা টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে তামিম করেছিলেন ৭৪ বল খেলে ২৫ রান। তাই পরের ইনিংসে আক্রমণকেই বেছে নিলেন প্রতিরোধের চাবি হিসেবে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামেন মধ্যাহ্ন বিরতির একটু আগে। জুনায়েদ খানের প্রথম ওভারটিতে কভার দিয়ে ১ রান নিয়ে তার যাত্রা। পরের ওভারে জুলফিকার বাবরের বলেও মিড অন থেকে তুলে নেন মাত্র ১ রান। তবে নিজের খেলা ৬ষ্ঠ ওভারে ধারণ করতে শুরু করেন রুদ্রমূর্তি। বিশ্বকাপে একটি স্পেল দিয়েই সেরা বোলারের তকমা লাগানো ওহাব রিয়াজের ওভারে পরপর দুই বলে দুটি চার হাঁকান। ৬০ বলে ৪৩ রান করে তামিম ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন পাক বোলারদের। কিন্তু ফিফটির তুলে নেয়ার আগে যা করলেন তাতে পাকিস্তানের বোলারদের ভড়কে দিলেন। জুলফিকার বাবরের বলে প্রথমে চার মেরে ৪৭ রানে পৌঁছালেন ঠিক তার পরের বলেই লং অনের ওপর দিয়ে ছয় মেরে পৌঁছালেন ৫০ রানে। এরপর  নিজের ১০০ রানে পৌঁছাতে এবার জুনায়েদ খানকে বেছে নিলেন। টেস্ট ক্রিকেটেই নয় ওয়ানডে ক্রিকেটেও ৯০ রান থেকে সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে সময় নেন। বলও খরচ করেন। কিন্তু তামিম দেখালেন উল্টো চিত্র। ৯৩ রানে থাকা তামিম জুনায়েদ খানের বলে কভার দিয়ে চার হাঁকিয়ে পৌঁছালেন ৯৭ রানে। ঠিক তার পরের বলটি যখন জুনায়েদ খান করলেন ততক্ষণে সেটিতে ‘নো’ ঘোষণা করেছেন আম্পায়ার। তামিম ফের হাঁকালেন চার।  ১২৩ বলে সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে হাঁকান ৯টি চার ও ৩টি ছয়।
গতকাল ব্যাট করতে নেমে ১৫০ রানে পৌঁছাতে একটু সময়ই নিলেন। ২০ বল খেলে ১২ রান নিলেন। ব্যক্তিগত ১৬৩ রানে জুনায়েদ খানকে আবারও চারের মার দিয়ে শুরু করলেন তাণ্ডব। ১৮২ রান নিয়ে ইয়াসির শাহর ওভারে হাঁকালেন পরপর দুটি ছয়। টেস্টের এক ইনিংসে সর্বাধিক ৭ ছক্কার রেকর্ডটিও তামিমের। আগের দিন সেঞ্চুরি নিয়ে তামিম ঢুকে পড়েন ব্রায়ান লারা, জহির আব্বাস, কুমার সাঙ্গাকারাদের সঙ্গে গর্বের অন্য এক রেকর্ডে। টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকানো বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। শেষ দুই টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম ও খুলনায় সেঞ্চুরি পান এ বাংলাদেশ ওপেনার।
টেস্টে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সেরা ৫ ইনিংস
ব্যাটসম্যান    রান    বল    প্রতিপক্ষ    স্থান    সাল
তামিম ইকবাল    ২০৬    ২৭৮    পাকিস্তান    খুলনা    ২০১৫
মুশফিকুর রহীম    ২০০    ৩২১    শ্রীলঙ্কা    গল    ২০১৩
মোহাম্মদ আশরাফুল    ১৯০    ৪১৭    শ্রীলঙ্কা    গল    ২০১৩
মুমিনুল হক    ১৮১    ৩৭৭    নিউজিল্যান্ড    চট্টগ্রাম    ২০১৩
মোহাম্মদ আশরাফুল    ১৫৮*    ২৭৫    ভারত    চট্টগ্রাম    ২০০৪
টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ৫ রান সংগ্রাহক
ব্যাটসম্যান    ম্যাচসংখ্যা    ইনিংস    রান    সর্বোচ্চ    গড়    ১০০    ৫০
হাবিবুল বাশার    ৫০    ৯৯    ৩০২৬    ১১৩    ৩০.৮৭    ৩    ২৪
তামিম ইকবাল    ৩৮    ৭৪    ২৯৭৪    ২০৬    ৪০.১৮    ৭    ১৭
মোহাম্মদ আশরাফুল    ৬১    ১১৯    ২৭৩৭    ১৯০    ২৪.০০    ৬    ৮
সাকিব আল হাসান    ৩৮    ৭৩    ২৬৩০    ১৪৪    ৩৯.২৫    ৩    ১৮
মুশফিকুর রহীম    ৪৪    ৮৩    ২৫৪৩    ২০০    ৩৩.০২    ৩    ১৪

সর্বশেষ আপডেটঃ ৩:৫৭ অপরাহ্ণ | মে ০৩, ২০১৫