গফরগাঁওয়ে নারী-শিশু শ্রমিকরা মজুরী বৈষম্যের শিকার
আজহারম্নল হক, গফরগাঁও ঃ
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় রয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টি ইটভাটা, ছোট-বড় মিলিয়ে অর্ধশতাধিক ধানের চাতাল ও শতাধিক ওয়ার্কসপ । এ সব ইটভাটা চাতালগুলোতে প্রতিদিন শ্রম দিচ্ছে কয়েক হাজার শ্রমিক। যার মধ্যে অর্ধসহস্রাধিক নারী। এসব নারী শ্রমিকরা সকাল থেকে সন্ধা পর্যনত্ম কাজ করে। বিনিময়ে নারী শ্রমিকরা তাদের শ্রমের মজুরী পায় ২২০ থেকে ২৪০ টাকা। অথচ একই কাজ করে পূরম্নষ সহকর্মীরা পায় ৪৩০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরী। রোদে পোড়ে বৃষ্টিতে ভিজে পুরম্নষের সমান কাজ করলেও তারা প্রতিনিয়ত মজুরী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। চরম মজুরী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে চাতালে কর্মরত নারী শ্রমিকরা। পূরম্নষের সমান পরিশ্রম করে তারা পাচ্ছেন দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০টাকা। অপরদিকে ওয়ার্কসপে কর্মরত শিশু শ্রমিকরা দৈনিক মজুরী পাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
সরজমিনে উপজেলার ইটভাটা, ধানের চাতাল ও ওয়ার্কসপগুলো ঘুরে দেখা যায়, নারী ও শিশু শ্রমিকদের পরিশ্রমের নানাচিত্র। সেখানে একজন পুরম্নষ শ্রমিকের পাশাপাশি একজন নারী ইটভাটার পটে ইট তৈরি, পট থেকে ইট কিলিং এ নেওয়া, কিলিং ইট দিয়ে বোঝাই করা, ইটভাটার জ্বালানী পরিবহনসহ নানান ধরনের কাজ করে চলেছেন। ধানের চাতালেও সকাল থেকে বিকেল পর্যনত্ম নারী শ্রমিকরা কাজ করে থাকে। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কুড়েরপাড় গ্রামের মরিয়ম বেগম (৪৪) জানায় সে দীর্ঘ ৮ বছর যাবত ইটভাটায় বোঝাই মিস্ত্রি হিসাবে কাজ করছে। ৫ সনত্মান নিয়ে কোন রকমে বেচে আছে। আবার রয়েছে শ্রমিক সর্দার ও মালিকদের মন জুগিয়ে চলা। ইট বোঝাই করতে করতে মানছুরা বেগম (৩৩) জানায়, সারাদিন ভাটায় পুরম্নষের সাথে সমান কাজ করলেও সন্ধায় মজুরী দেওয়ার সময় সমান হয় না। মানছুরার সাথে কাজ করা রেবেকা (২১), ফুলঝুড়ি (২০), ইয়াসমিন (১৮)সহ আরো অনেকে একইভাবে মজুরী বৈষম্যের কথা জানান। সমান মজুরী দাবী করলে পরের দিন আর কাজ থাকে না। এদিকে চাতালের নারী শ্রমিকরা হররোজ কাজ করেও ন্যায্য মজুরী পাননা। চাতালের নারী শ্রমিক লাইলী (৪০) খুদেজা (২৮), রীনা খাতুন (৩৫), শরিফা খাতুন (৩২), রোকসান (২৫) কাজ করে খালেক অটো রাইসমিলে। তারা জানালেন হাড়ভাঙ্গা খাটুনীর পর পূরম্নষের অর্ধেক মজুরী নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়। মোকাদ্দেস (১৩) ও আরিফ (১১) কাজ করে ওয়ার্কসপে। তারা দরজা, জানালা, গ্রিল, কেচি গেইট ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। এসব শিশু শ্রমিকরা দিনে নামমাত্র ৫০/৬০ মজুরী পেয়ে থাকে। মজুরী বৈষম্যের শিকার নারী ও শিশু শ্রমিকরা জানেন না এটি আইন না নিয়ম। মহান মে দিবসে প্রতিটি শ্রমজীবি মানুষ তার ন্যায্য মুজরী পাওয়া সকলেই প্রত্যাশা।