| রাত ৮:১৭ - মঙ্গলবার - ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আগামীকাল মহান মে দিবস

লোক লোকান্তর ডেস্ক, ৩০ এপ্রিল, ২০১৫ :

আগামীকাল মহান মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন।
আজ থেকে ১২৯ বছর আগে ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওইদিন তাদের আত্মদানের মধ্যদিয়েই শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এ দিনটিকে তখন থেকেই সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সরকারী ছুটি থাকে এ দিন। বাংলাদেশেও আগামীকাল সরকারী ছুটি।
এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি ও দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, বর্তমান বিশ্ব পরিবর্তনশীল এবং তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে পরিবর্তনশীল বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করাসহ বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই।
বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, এ কথা অনস্বীকার্য যে, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে শিল্পোদ্যোক্তা, মালিক ও শ্রমিকের সম্মিলিত প্রয়াস একান্তভাবে কাম্য। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সক্ষম হব বলেও তিনি বিশ্বাস করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, তাঁর সরকার বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা চালু করেছে। পোশাক শিল্পসহ ৩৮টি শিল্পখাতের শ্রমিকদের জন্য নিম্নতর মজুরি ঘোষণা করেছে। জাতীয় শিশু শ্রমনীতি ২০১০ এবং জাতীয় শ্রমনীতি ২০১২ প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন বঞ্চিত, মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত, একদিকে শোষক, আরেকদিকে শোষিত- আমি শোষিতের পক্ষে’। তিনি পরিত্যক্ত কলকারখানা জাতীয়করণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে তাঁর সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ঐতিহাসিক ঘটনাসমৃদ্ধ মহান মে দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দুদিনব্যাপী (১ ও ৪ মে) কর্মসূচি গ্রহণ করছে। কর্মসূচীগুলোর মধ্যে রয়েছে মে দিবসের র‌্যালি, উদ্বোধন ও সাংস্কৃতিক অন্ষ্ঠুান, সেমিনার, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা এবং দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আগামীকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত মে দিবসের সকল কর্মসূচীর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করবে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।
তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে সকাল সাড়ে সাতটায় রাজউক এভিনিউস্থ শ্রম ভবনের সম্মুখ থেকে একটি র‌্যালি বের করা হবে। র‌্যালিটি দৈনিক বাংলা মোড় ও পল্টন হয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হবে। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক র‌্যালির নেতৃত্ব দিবেন।
মে দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে ৪ মে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সকাল ও বিকালে দু’টি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সকালে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কাউন্সিল শক্তিশালীকরণ: ভূমিকা, প্রতিবন্ধকতা ও ভবিষ্যত করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ও লেবার স্টাডিজ (বিলস) ও সেফটি এ্যান্ড রাইটস। বিকালে ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের অধিকার সংরক্ষণে আইনী সুরক্ষা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারটির যৌথভাবে আয়োজন করবে কর্মজীবী নারী ও ওশি ফাউন্ডেশন। জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত কর্মসূচীর আলোকে জেলা পর্যায়েও মহান মে দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে শ্রম ভবন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক দ্বীপ ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লা-কার্ড দ্বারা সজ্জিত করা হবে।
এছাড়া বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, জাতীয় শ্রমিক জোট, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টি, সিপিবি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, জাসদ, গণফোরাম, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে।(বাসস)

সর্বশেষ আপডেটঃ ৮:৩২ অপরাহ্ণ | এপ্রিল ৩০, ২০১৫