ময়মনসিংহে এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা, তিন বাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ
সাজ্জাতুল ইসলাম সাজ্জাত, গৌরীপুর: ময়মনসিংহে গৌরীপুরে শাকিল আহমেদ (১৮) নামে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহষ্পতিবার ভোর রাতে শাকিলের মৃত্যু হয়।
বুধবার বিকেলে কলেজ থেকে ফেরার পথে পৌর শহরের কালিপুর মধ্যমতরফ বাশঁ মহাল এলাকায় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের উপর্যপুরি মারপিটে ওই কলেজ ছাত্র শাকিল গুরুতর আহত করে। গৌরীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম দাপুনিয়া এলাকার বাসিন্দা ও জেলা পরিষদ ডাক বাংলোর (জেলা পরিষদের) কর্মচারী শাহেদুজ্জামান সাইদের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তৃতীয় শাকিল আহমেদ।
গতকাল সকালে কলেজ ছাত্র শাকিলের মৃত্যুর খবর গৌরীপুর পৌছাঁর পর সহপাঠী সহ সর্বত্র বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। এসময় বিক্ষোভকারীরা পৌর এলাকায় যুবলীগ নেতার বাড়ি সহ তিনটি বাড়ি ও কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। শাকিল হত্যার ঘটনায় গৌরীপুর কলেজের ভেতর থেকে এক বহিরাগতকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, গৌরীপুর সরকারি কলেজের বাণিজ্য বিভাগ থেকে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিলো। সে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে রিক্রুট হয়েছে। শাকিলের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী ও বন্ধুদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বুুধবার বিকেলে কলেজ থেকে ফেরার পথে পৌর এলাকার কলাবাগান মহল্লায় শাকিলের সাথে দেখা হয় সহপাঠী একটি তরুণীর। ওই সময় তরুণীর সাথে পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে আলাপচারিতা হয় শাকিলের। কথা বলার পর তরুণী চলে গেলে ছয়গন্ডা মহল্লার আজহারুল ইসলামের ছেলে হিমেল মিয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থী শাকিলের গতিরোধ করে।
ওই সময় হিমেলের সাথে তমাল সহ আরো কয়েকজন কয়েক বন্ধুও ছিলো। হিমেল চলতি বছর এইচএসসি পাশ করেছে। হিমেল ওই তরুণীর সাথে শাকিলের কী কথা হয়েছে তা জানতে চাপ দেয়। ওই সময় কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে হিমেল ও তার বন্ধুরা কলাবাগান এলাকার বালুর মাঠে শাকিলকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে ইট দিয়ে শাকিলের মাথা ও বুক থেঁতলে দেওয়া হয়। ওই সময় শাকিলের আত্মচিৎকার শুনে মহল্লার বাসিন্দারা এসে শাকিলকে উদ্ধার করেন। পরে রক্তাক্ত শাকিলকে প্রথমে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সেখানে অবস্থার অবনতি হলে বিকেল ৫ টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয় শাকিলকে। পরে বৃহষ্পতিবার ভোর রাতে ঢাকা মেডিকেলে মারা যান শাকিল আহমেদ।
এদিকে শাকিল হত্যার প্রতিবাদে বেলা ১২ টার দিকে গৌরীপুর সরকারী কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপজেলা পরিষদের সামনে এক মানববন্ধব কর্মসূচি পালন করে। পরে শাকিল হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। অপরদিকে গৌরীপুর পৌর এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী পাঠদান বর্জন করে পৌর শহরে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সমাবেশ করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শাকিল হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে শনিবার অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এরআগে শাকিল হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও বিক্ষুব্ধ জনতা শাকিল হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে হিমেলের বাড়িতে ভাংচুর চালায়। ব্যাপক ভাংচুর শেষে হিমেলের বাসায় অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধরা। বিক্ষুব্ধরা হিমেলের বাসা ভাংচুরের পর তার প্রতিবেশী তমাল খান পাঠানের বাসায় ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেখান থেকে বিক্ষুব্ধরা পৌর স্টেডিয়ামের সামনে যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান মিথুনের ‘ইকবাল মঞ্জিলের’ বাসায় ভাংচুর চালায়। বাসার সামনের একটি ফার্ণিচার দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই সময় বিক্ষুব্ধরা গৌরীপুর পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়কে একটি পিকআপভ্যান, একটি সিএনজি ও কয়েকটি অটোরিকশায় ভাংচুর করে।
গৌরীপুর সরকারী কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা জামান বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থী শাকিল হত্যার ঘটনায় কলেজে জরুরি সভা করা হয়। সভা থেকে আগামী শনিবার বেলা ১১ টায় মানববন্ধব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে অনাঙ্খাকিত ঘটনা এড়াতে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, অভিযুক্তদের ধরতে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) এসএ নেওয়াজী ও ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশের সমন্বয়ে একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। গৌরীপুর থানার ওসি মো. দেলোয়ার আহম্মদ বলেন, একটি মেয়ের সাথে কথাবলাকে কেন্দ্র করে শাকিলকে মারধর করে হিমেল। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাকিলের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ এক যুবককে তাদের কাছে সোপর্দ করেছে। তিনি আরো জানান, মামলার প্রস্তুতি চলছে। সন্ধ্যা ৬টায় এরির্পোট লিখা পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পানেনি পুলিশ।