বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
ঢাকা, ২৮ মার্চ ২০১৬ (বাসস) : মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৬-এর খসড়ার চূড়ান্ত্ অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমান আইন হালনাগাদ করা এবং দেশের সকল বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানের করার লক্ষ্যে এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে আজ এই অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৬-এর খসড়াটি বর্তমান আইন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল আইন-১৯৮৫-এর স্থলাভিষিক্ত হবে। এই আইনটি প্রণয়নে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) চাহিদা পূরণ করবে।
তিনি বলেন, খসড়া আইনে কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো জানান, খসড়া আইন অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ গঠিত হবে।
কর্তৃপক্ষের সদস্য থাকবেন ছয়জন। সরকার তাদের নিয়োগ দেবে।
চেয়ারম্যান তার প্রয়োজন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষকে সভা আহবান করাবেন। সভায় কোরামের জন্য কমপক্ষে তিনজন সদস্যের উপস্থিতি থাকতে হবে।
তিনি আরো জানান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকান্ড তদারকি এবং অর্থ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বেসামরিক বিমানমন্ত্রী, অথবা প্রতিমন্ত্রী অথবা উপমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠিত হবে। এতে সচিব অথবা সাবেক কোনো কর্মকর্তা ভাইস চেয়ারম্যান থাকবেন এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
ভূমি, প্রতিরক্ষা, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অর্থ, আইন ও সংসদ, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ এবং এনবিআর এর চেয়ারম্যান গভর্নিং বডির সদস্য থাকবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ দেশের সিভিল এয়ার বেজে এ্যারোনটিক্যাল কমিউনিকেশন সার্ভিসের মতো এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, ফ্লাইট পরিদর্শন, তদন্ত ও উদ্ধার বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হবেন। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ দেশের যে কোনো এয়ারপোর্ট অথবা বিমান ঘাঁটিতে এয়ারক্র্যাফট বিধ্বস্ত অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেবা দেবে, বেসামরিক ফ্লাইট চলাচল নিশ্চিত করবে এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে।
বিভিন্ন ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা প্রয়োগ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, কর্তৃপক্ষ প্রিমিয়াম, সার্ভিস চার্জ, ভাড়া, কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি ব্যবহারের জন্য রয়্যালিটি, নিরাপত্তা ফি এবং অন্যান্য ফি সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে আদায় করতে পারবে।
তহবিল সম্পর্কিত অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি মঞ্জুরি, ঋণ, বিদেশী সাহায্য এবং সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রাপ্ত ঋণ এবং সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্দিষ্টকালীন বন্ড বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত আয় দিয়ে তহবিল গঠিত হবে।
মন্ত্রিসভা দেশে উচ্চশিক্ষার প্রত্যাশিত মান নিশ্চিত করতে এবং উচ্চশিক্ষা আন্তর্জাতিক মানে নিশ্চিত করতে এক্রিডিটেশন কাউন্সিল ল’-২০১৬-এর খসড়াও নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি বলেন, এতে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিশ্চিত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সচিব বলেন, একজন চেয়ারম্যানসহ ১১ সদস্যের এই কাউন্সিল গঠিত হবে। এতে ইউজিসি থেকে একজন সার্বক্ষণিক মেম্বার, চারজন অধ্যাপক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি এসোসিয়েশনের একজন প্রতিনিধি থাকবেন। তাদের সকলকে সরকার নিয়োগ দেবে।
কাউন্সিলের মূল দায়িত্ব হবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান নিশ্চিত করা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই আইনের আওতায় এ্যাক্রিডেটেশন সনদের আবেদন প্রক্রিয়ায়, আবেদন অনুমোদন অথবা প্রত্যাখ্যান, এ্যাক্রেডিটেশন সনদের বৈধতা ও বাতিলের মত বিষয় মোকাবেলায় আইন প্রণয়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, এই খসড়ার ১৭ ধারা অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান এ কাউন্সিলে রিভিউ আবেদন করতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, এই খসড়া আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন অথবা প্রস্পেক্টাস ছাপাতে পারবে না, এ্যাক্রেডিটেশন সনদ ছাড়াই যা তার স্বীকৃতি প্রদান করে। ওই আইন লংঘনের ক্ষেত্রে খসড়া আইনে সংশ্লিষ্ট উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এ্যাক্রেডিটেশন সনদ বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে।
আলম বলেন, কন্টেইনার সার্ভিসকে টেকসই করতে স্বতন্ত্র কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ে কন্টেইনার ট্রান্সপোর্টেশন সার্ভিস পরিচালনার জন্য মন্ত্রিসভা আজ ‘দ্য কন্টেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ লি.’ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অনেক দেশে এ ধরনের কোম্পানি রয়েছে এবং সেগুলো লাভজনক প্রতিষ্ঠান।
আলম বলেন, কন্টেইনার ব্যবসাকে টেকসই করার লক্ষ্যে রেলওয়ে কন্টেইনার ব্যবস্থাকে একটি কোম্পানির আওতায় আনতে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের একটি প্রস্তাব রয়েছে।
তিনি বলেন, এই প্রস্তাবের আলোকে এডিবি’র প্রস্তাব পর্যালোচনা শেষে এই মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন ও আর্টিক্যাল অব এসোসিয়েশন গঠন করা হয়।
পরবর্তীতে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষে এই কোম্পানি গঠনের কাজ চূড়ান্ত করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই কোম্পানি পরিচালনার জন্য ১০ সদস্যের একটি বোর্ড অব ডিরেক্টরস থাকবে এবং একজন চেয়ারম্যান, একজন ভাইস চেয়ারম্যান, একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাতজন পরিচালক নিয়ে এই বোর্ড গঠিত হবে।
রেলওয়ে সচিব পদাধিকারবলে পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে কাজ করবেন এবং প্রাইভেট সেক্টর থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয়া হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ মর্মে সিদ্ধান্ত হয় যে, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) এমডি হিসেবে প্রাথমিকভাবে এই কোম্পানি পরিচালনার কাজ শুরু করবেন। তারা এক বছরের মধ্যে একজন এমডি নিয়োগের ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি বলেন, এই কোম্পানির জন্য অনুমোদিত অর্থের পরিমাণ ৪শ’ কোটি টাকা। তবে পরিশোধিত অর্থের পরিমাণ ১০ কোটি এক হাজার এক টাকা। এই কোম্পানি শতভাগ সরকারি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এর প্রতিটি শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে একশ’ টাকা।
এ ছাড়া মন্ত্রিসভাকে গত ১৫-১৬ মার্চ ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় অনুষ্ঠিত ‘স্যানিটেশন এন্ড ওয়াটার ফর অল’ শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণের বিষয় অবহিত করা হয়।
বৈঠকের শুরুতে মন্ত্রিসভা যুক্তরাষ্ট্রের ফরচ্যুন ম্যাগাজিনের বার্ষিক তালিকায় বিশ্বের ৫০ জন মহান নেতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম অন্তর্ভুক্ত করায় একটি ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
ওই তালিকার ১০ নম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম স্থান পেয়েছে।
বৈঠকে মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রীগণ অংশ নেন এবং সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।