| ভোর ৫:৪২ - রবিবার - ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসায় দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন ৩৪৭১৫ জন

গৌরীপুর সংবাদদাতা,১৭ জানুয়ারি ২০১৬ঃ  
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসায় দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৮১৫জন। এবছর বিনামূল্যে তিন দিনব্যাপী চক্ষু অপারেশন ক্যাম্পের মাধ্যমে হতদরিদ্র আরো পাঁচশ’ নারী-পুরুষের চোখে লেন্সসহ ছানি সংযোজন করা হচ্ছে। এরাও অন্ধত্বকে জয় করে আবার পৃথিবীকে দেখার সুযোগ পাবেন। রোববার রাতে স্বাস’্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম তিন দিনব্যাপী বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন ক্যাম্প উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাবেক স্বাস’্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপি, স্বাচিপ’র কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সনাল, স্বাস’্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক, স্বাচিপ-এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আব্দুল আজিজ প্রমুখ উপসি’ত ছিলেন।
এবার ক্যাম্প পরিচালনায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. এ কে এম এ মুকতাদিরের সাথে ছিলেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনষ্টিটিটের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন, সিনিয়র কনসালন্টেট ডা. খালিদ রেজা, জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাশরেকা মতিনসহ ২৭ জন কর্মকর্তা।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. এ কে এম এ মুকতাদির তার সহধর্মীনি গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মাহমুদা খাতুনের সহযোগীতায় ২০০৪ সালে নিজ গ্রামের পৈত্রিক পাঁচ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতাল’। তিনি ১৯৭৫ সালে চিকিৎসক হওয়ার পর ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিবছরই সপ্তাহব্যাপী বিনামূল্যে চক্ষু অপারেশন ক্যাম্প করে নয় হাজার ৫৩৫জন রোগির চোখের ছানি অপারেশন করেন। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ নিজ নামে ১০ শয্যার হাসপাতাল চালু করেন। পরবর্তীতে নিজের ও সহধর্মীনির  পেনসনের সমূদয় টাকা ব্যয় করে হাসপাতালটি ৭০ শয্যায় উন্নীত করেন। চারতলা ভবনের দু’টি অপারেশন থিয়েটার, ভিআইপি রোগীদের জন্য ৩টি এসি কেবিন, ৬টি নন এসি কেবিন, পুরুষ-মহিলাদের পৃথক নামাজখানা, বিশ্রামাগার, স্টাফ ক্যান্টিন, রোগীর স্বজনদের জন্য আলাদা ক্যান্টিন, প্রতিটি ফ্লোরে দর্শনার্থীদের জন্য রঙ্গিন টিভি ও মনিটরের মাধ্যমে রোগির অপারেশন সরাসরি পর্যবেক্ষণের সুবিধা রয়েছে। প্রতি শুক্র ও শনিবার সার্জিকেল টিমের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে ২৫ হাজার ৫০৫জন রোগীদের চোখে ল্যান্স সংযোজনসহ ছানি অপারেশন, তিন হাজার ২৮৫ জনের নেত্রনালি অপারেশন, এক হাজার ১৮০ জনের চোখের মাংস বৃদ্ধি অপারেশন, এক হাজার ৩৮২ জনের গ্লোকোমার অপারেশন, এক হাজার ৪৫০ শিশুর নেত্রনালী অপারশেন, ৪৪০ জনের চোখে কৃত্রিম চোখ সংযোজন, ৪৯০ জনের চোখের গুটি অপারেশন, ৪৫২ জনের টিউমার অপারেশন, ৪০ জনের টেরা-বাকাঁ চোখ অপারেশন ও ৪৯১ জনের চোখের ক্ষত অপসারন সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়। হাসপাতালে সার্বক্ষণিক তিনজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োজিত আছেন। হাসপাতাল অভ্যন্তরেই স্বল্পখরচে ইসিজি, ব্লাডসুগার, রক্তচাপ, বায়োমেট্রি, এসপিটিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষা করার ব্যবস্থাও রয়েছে। হাসপাতালকে আকর্ষণীয় করতে আঙিনায় নানা ফুল ও বাহারি গাছ রোপন করে সৌন্দর্য্যবর্ধণ করা হয়েছে। হাসপালের পাশে চিড়িয়াখানা স’াপন করে অনেকগুলো হরিণ রাখা হয়েছে।
ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. এ কে এম এ মুকতাদির জানান, গত ৩৯ বছর ধরে তিনি বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশনসহ চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর অন্ধত্বের কবল থেকে ২৫ হাজার ৫০৫ জন চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন। অজপাঁড়া গায়ের এই হাসপাতালে ৩৪ হাজার ৭১৫ জন রোগির চোখের সফল অপারেশন করা হয়েছে। এরা সবাই হতদরিদ্র ও দুঃস’ রোগি। এখানে দেশি-বিদেশী বিশেষজ্ঞ  চিকিৎসকরাও বিনামূল্যে চক্ষু শিবিরে রোগিদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৮:২৮ অপরাহ্ণ | জানুয়ারি ১৭, ২০১৬