| সকাল ৮:৩০ - মঙ্গলবার - ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ভারতীয় টিভি চ্যানেল- নানামুখী প্রভাব বাংলাদেশে

অনলাইন ডেস্ক,  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫, বুধবার,

ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর অবাধ সম্প্রচার নানাভাবে প্রভাব ফেলছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়। বিশেষ করে এসব চ্যানেলের সিরিয়ালগুলো রাখছে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব। কারণ, উচ্চবিত্তের পরকীয়া, বহুবিবাহ, বউ-শাশুড়ির যুদ্ধ, পারিবারিক বিরোধ প্রভৃতি এসব সিরিয়ালের মূল বিষয়বস্তু। যা কঠিন ব্যাধির মতোই মানসিকতায় আঘাত হানছে দেশীয় অনেক দর্শক তথা নারী দর্শকদের। এমনকি প্রচার চলতি একটি সিরিয়ালের একটি চরিত্রের নামে পোশাক এদেশের মার্কেটে আসার পর সেটি না পাওয়ায় ঘটেছে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এসব সিরিয়ালের প্রভাবে আমাদের দেশে ভয়াবহভাবে বাড়ছে পরকীয়া, বহুবিবাহ, মনোমালিন্য, সন্দেহ, ডিভোর্সসহ বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক ঘটনা। আর অনেকেই আসক্ত হয়ে পড়ছে হিন্দি ভাষায়। মোদ্দাকথায়, পুরো সমাজব্যবস্থাকে অস্থির করে তুলছে ভারতীয় চ্যানেলগুলোর এসব সিরিয়াল। এ কারণে দেশের সমাজব্যবস্থা পড়েছে হুমকির মুখে। সমাজের অন্যান্যের মতো বিষয়টি নিয়ে কি ভাবছেন আমাদের শোবিজ তারকারাও, তা নিয়েই তাদের নিজ বয়ানে ধারাবাহিক এ প্রতিবেদন। গ্রন্থনায় বিনোদন ডেস্ক
দর্শক ধরে রাখতে না পারাটা আমাদের ব্যর্থতা
আবদুল লতিফ বাচ্চু
আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দর্শককে ধরে রাখতে পারছে না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। অন্যদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। সমমনা ব্যবসায়ে মানটাই আসল। প্রতিযোগিতায় যোগ্যতাই মূল শক্তি। আমাদের শক্তি কম বলে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছি না। দর্শক ভারতীয় চ্যানেলমুখী হয়ে পড়ছে। শুধু শিক্ষিত সমাজই নয়, কাজের মানুষেরাও এখন ওদের দর্শক। অথচ একসময় বিটিভির নাটক দেখার জন্য সবাই অপেক্ষা করতো। ‘সংসপ্তক’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘এইসব দিনরাত্রি’ দেখার জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়তো। ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিক নিয়ে তো দেশব্যাপী তুলকালাম কাণ্ডও ঘটে গেছে। একসময় আমাদের নাটক দেখতো কলকাতার মানুষেরা। আর এখন আমরা দেখি তাদের নাটক। কেন দেখি, প্রশ্ন এখানেই। আসন্ন ঈদে ১০০টির উপরে নাটক প্রচার হবে বিভিন্ন চ্যানেলে। কিন্তু দেখার মতো কয়টা হবে? এখন যাদের কোন কিছু করার নেই, তারাই নাটক বানাচ্ছে। কি যে বানায়, কেন বানায় তা আমার মাথায় আসে না। একেবারে এখনকার সিনেমার মতো। ‘ধর তক্তা মার পেরেক’-এর মতো অবস্থা। কোনও গল্প নেই, চিত্রনাট্য নেই, সংলাপ নেই, লোকেশন নেই, নির্দেশনা নেই, অভিনয়ের বালাইও নেই। তার ওপর আবার বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণা। সব মিলিয়ে আমাদের দর্শকরা বিরক্ত হয়ে ভারতীয় চ্যানেলের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। এতে সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়লেও কিছু করা যাচ্ছে না। কারণ আকাশকে কন্ট্রোল করবে কিভাবে? বিনোদন হচ্ছে দর্শক পছন্দের বিষয়। সেটা সিনেমা হোক কিংবা নাটক। দর্শক এখন বিনোদন পাচ্ছে না। তাদের হাতের মধ্যে শত শত বিদেশী চ্যানেল। বাধ্য হয়েই তারা চ্যানেল বদলাচ্ছে। এখন দর্শককে আমাদের চ্যানেলের প্রতি টেনে আনতে হলে ভাল ভাল অনুষ্ঠান, নাটক নির্মাণ করতে হবে। আর এটা পারলেই দর্শক ভারতীয় চ্যানেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। সমাজও বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্তি পাবে।
বন্ধ করার কোন
উপায় নেই
রাইসুল ইসলাম আসাদ
ভারতীয় টিভি চ্যানেলের নানামুখী প্রভাব এটা নতুন কিছু নয়। এটা অনেক আগে থেকেই হচ্ছে। ভারতীয় চ্যানেলগুলো আমাদের দেশীয় মিডিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দর্শক বেশ আগে থেকেই হিন্দি সিরিয়াল দেখছেন। এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আর এটা বন্ধ করার কোন উপায় নেই। মুক্ত বাজার মুক্ত অর্থনীতির এ সময়ে আজ বললেই কিন্তু কেউ বন্ধ করতে পারবেন না। আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে দেশীয় সংস্কৃতি যে পরিণতির দিকে যাচ্ছে সেখান থেকে উত্তরণের উপায় বের করে আনতে হবে। দেশীয় সংস্কৃতিকে দর্শকের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। আর সমাজ ব্যবস্থায় যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তার কোন যৌক্তিকতা নেই। ভারতীয় চ্যানেল দেখে সংসার ভাঙছে, পরকীয়া বেড়ে গেছে  কিংবা মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে এটা বলা উচিত হবে না। সংস্কৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে সব দোষ কোন দেশের চ্যানেলকে দিতে হবে এমনটা হতে পারে না। আগে রিসার্চের মাধ্যমে বের করতে হবে পরকীয়া, সংসার ভাঙন এসবের জন্য চ্যানেলগুলো দায়ী কিনা। তখন হয়তো কিছু বলা যাবে।
এসব চ্যানেলে বাংলাদেশের শিল্পী-সুরকারদের
অসম্মান করা হচ্ছে
ফকির আলমগীর
এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক বিষয় যে ভারতীয় চ্যানেলগুলো আমাদের সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। আমাদের একটা নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, একুশের চেতনা, লালন ও নজরুলের মতো সম্পদ রয়েছে। সুতরাং, অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া আমাদের সাজে না। ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়ালগুলো একটি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাধিতে আক্রান্ত আমারা সবাই। তাই আমাদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে। তবে আমি আরও বেশি মর্মাহত এ কারণে যে, এসব চ্যানেলে বাংলাদেশের শিল্পী-সুরকারদের অসম্মান করা হচ্ছে। এখানকার শাহ আবদুল করিম, আলাউদ্দিন বয়াতী কিংবা আব্বাসউদ্দিনের গান তারা নিজ নামে চালাচ্ছে। আবার কোন ক্ষেত্রে তাদের গানকে বিকৃত করা হচ্ছে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের এখানকার শিল্পীদের গান চালালেও গীতিকার কিংবা সুরকারদের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে না। এর মাধ্যমে তাদের প্রতি অসম্মান দেখানো হচ্ছে। এটা একদমই ঠিক নয়। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আর সবাইকে অনুরোধ করবো ভারতীয় চ্যানেল না দেখার। যেখান থেকে কোন কিছু শেখার নেই তা কেন আমরা দেখবো। বরং, তিলে তিলে ভারতীয় সিরিয়াল আমাদের মনমানসিকতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই ভারতীয় চ্যানেল বর্জন করুন।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৬:৫৮ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫