| সন্ধ্যা ৬:৪৬ - রবিবার - ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ময়মনসিংহ জাকাত ট্র্যাজেডির ঘটনায় চলছে নিহত পরিবারে শোকের মাতম ঃ স্বজন হারিয়ে বাকরুদ্ধ অনেকে

 

মতিউল আলম, ১১ জুলাই ২০১৫, শনিবার:
ময়মনসিংহ জাকাত ট্র্যাজেডির ঘটনায় নিহতদের পরিবারে শোকের মাতম চলছে। স্বজন হারা বেদনায় অনেকেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। ক্ষোভে দুঃখে অনেকে বলেছেন আমাদের কষ্টের কথা কি বলবো গরীব হয়ে জন্মটাই দুঃখের।
গতকাল শনিবার সরেজমিন নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শোকাহত পরিবেশ। স্বজনের কান্না থামছে না। পাটগুদাম ব্রীজ সংলগ্ন বিহারী ক্যাম্পের বাসিন্দা আবদুল বারেক (৬০)। তিনি শহরের একটি স’মিলে কাজ করে জিবিকা নির্বাহ করেন। তিনি তার স্ত্রী শামীমা (৫৫) মেয়ে সখিনা (৩৫) নাতিনী লামিয়া (৪) কে হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ। তিনি জানিয়েছেন তার স্ত্রী কন্যারা কখনো জাকাতের জন্য বাইরে যাইনি। এই প্রথম জাকাত নিতে গিয়ে তারা চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেল। প্রতিবারের মতো এবার মেয়ে-নাতিকে নিয়ে তার ঈদ করা হলো না। একই ক্যাম্পের বাসিন্দা মৃত সুলতানের স্ত্রী হাজেরা খাতুন (৭০) ৪ সন-ানের জননী। দরিদ্রতার জন্য অতিকষ্টে তার দিন কাট ছিল। একটি নতুন কাপড়ের জন্য তিনিও জর্দ্দা ফ্যাক্টরীতে গিয়ে ছিলেন। বৃদ্ধ মাকে হারিয়ে তার ছেলে মেয়েরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। ক্ষোভে ছেলেমেয়েরা বললেন, আমাদের কষ্টের কথা কি বলবো গরীব হয়ে জন্মটাই দুঃখের। এঘটনায় নিহত সেহড়া ধোপাখোলার মসজিদ রোডের বাসিন্দা জামেনা খা্‌তুন (৫৮) পরিবারের কাউকে না জানিয়ে তিনিও জাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে ছিলেন। সকালে পরিবারের লোকজন খবর পায় তার লাশ হাসপাতালে পড়ে আছে। জামেনা খা্‌তুনের ছোট ছেলে সোহেল জানায় তার বাবার মৃত্যুর পর তার বাবা হারানোর ব্যথা কখনো বুঝতে দেননি তার মা। মা হারানোর কষ্ট আজ বুঝতে পারছি।
শহরের সেহড়া ধোপাখোলা দত্তবাড়ির গরীব অসহায় সুধারানী সরকার (৫৭) শহরের
একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়ার কাজ করে ২ ছেলে ১ বিধবা মেয়েকে লালন-পালন করে আস ছিলেন। একমাত্র উপার্জনশীল মাকে হারিয়ে ছেলে মেয়েরা অসহায় হয়ে পড়েছে।
এদিকে নিহত পরিবারগুলো সরকারীভাবে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান পেলেও আহতরা সরকারীভাবে কোন দান অনুদান পাইনি বলে জানা গেছে। অর্থ সাহায্য না পেয়ে বিনা চিকিৎসায় মানবেতর জীপনযাপন করছেন। অর্থের অভাবে ঔষধপত্র কিনতে পারছেন না। গুরুতর আহত পাটগুদাম ব্রীজ সংলগ্ন বিহারী ক্যাম্পের বাসিন্দা আসমা (৫০) ও তার ছেলে রাজ (২১) জানায়, জাকাতের কাপড় আনতে তারাও ভোরে জর্দ্দার ফ্যাক্টরীতে গিয়েছিল। রাজের মা নীচে পড়ে গেলে তার বাঁচাতে গিয়ে ২জনেই গুরুতর আহত হয়। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে বাসায় চলে আসে। ১৩ সদস্যের পরিবারে তাদেরকে এখন বোঝা হয়ে থাকতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার ভোরে ময়মনসিংহ জেলা শহরের অতুল চক্রবর্তী রোডের নূরানি জর্দা ফ্যাক্টরি থেকে জাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে ২৫ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় আরো অন-ত ২০ জন। এ ঘটনায় ফ্যাক্টরি মালিক ও তার ছেলেসহ আট জনকে আটক করে পুলিশ। এদিকে গত শুক্রবার রাতেই নিহতদের দাফন কাফন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছে

সর্বশেষ আপডেটঃ ১১:১০ অপরাহ্ণ | জুলাই ১১, ২০১৫