অনলাইন ভর্তি – শিক্ষামন্ত্রী -শিক্ষা সচিব
–রহিম আব্দুর রহিম, ৩০ জুন ২০১৫, মঙ্গলবার:
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করার নির্দেশনা, ভর্তি তালিকা প্রকাশে জটিলতা, অভিভাবকদের হতাশা এবং ১২ লক্ষ শিক্ষার্থীর টেনশন নিয়ে গত ২৯ জুলাই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম ছিল ‘একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নৈরাজ্য’ অন্য একটি পত্রিকার শিরোনাম ছিল ‘মন্ত্রীর সিদ্ধানত্ম মানলেন না শিক্ষা সচিব’ একটি অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে ‘শিক্ষা সচিবের মাতব্বরিতে পেরেশান ১২ লাখ শিক্ষার্থী ॥ ভর্তি বিপর্যয়’ সংবাদগুলোর বিচার্য বিষয় পরিলড়্গিত হয়েছে, ভর্তি তালিকা যথা সময়ে প্রকাশ না হওয়ায় ১২ লাখ শিক্ষার্থী টেনশনে ছিল। দ্বিতীয়ত, ক্লাশ শুরম্ন করতে হ”েছ ১দিন পর। তৃতীয়ত, ভর্তি তালিকা প্রকাশের তারিখ চার দফা পিছানো, ফলে তড়িঘড়ি করি প্রকাশিত তালিকা গোঁজামিল হওয়ার সম্ভাবনা। চতুর্থত, মন্ত্রীর মতামত তোয়াক্কা না করে শিক্ষা সচিবের এক গুয়েমী। পর্যালোচনা, বিশেস্নষণ যাই আসুক না কেন, নতুন একটি পদ্ধতি চালু করতে গিয়ে সংশিস্নষ্ট বিভাগ হিমশিম খেয়েছে এটাই সত্য। সাংবাদিক বন্ধুদের তৎপরতাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস’ায় ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করনে বর্তমান শিড়্গা সচিব ও তার বিভাগ যে উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে, তা অস্বীকার করা যায়না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে শিক্ষা ক্ষেত্রের আমূল পরিবর্তন আমরা শিক্ষক হিসেবে দেখতে পারছি। আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষার্থীদের পাঠদান, শিক্ষা বিভাগের উপজেলা পর্যায় থেকে জেলা, বিভাগ, অধিদপ্তর হয়ে মন্ত্রণালয় পর্যনত্ম যে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ লেনদেনের মহা উৎসব ছিল তা এই সরকারের আমলে অনেকটা কমে এসেছে। এড়্গেত্রে বর্তমান শিক্ষা সচিবের অবদান অগ্রগণ্য।
পৃথিবী যখন আধুনিকতার সকল সাধ লুফে নি”েছ ঠিক ওই সময় আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো। অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে শিড়্গা সচিবকে দায়ী করে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় যে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে এই শিক্ষা সচিব, শিক্ষা বিভাগের তৃণমূল থেকে শুরম্ন করে মন্ত্রণালয় পর্যনত্ম অলস, ফাঁকিবাজ, দুর্নীতিগ্রস’ কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়েছে এটা সত্য। মনে হ”েছ, এই সচিবের কড়াকড়ি নির্দেশনা পালনে ব্যর্থরা সুযোগ খুঁজছিলেন ; কখন তাকে নাস্তানাবোধ করা যায়। অনলাইনের ভর্তি প্রক্রিয়ার টেকনিক্যাল জটিলতাকে পুঁজি করে সাংবাদিকদের মাঝে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। যা দেশের সাধারণ শিক্ষা সংশিস্নষ্ট শিক্ষা কর্মীদের কাম্য নয়। মন্ত্রীর আদেশ সচিব মানেনি, একথা কতটা সত্য তা আমার পক্ষে নিরম্নপণ করা সম্ভব নয়। তবে ধারণা, মন্ত্রণালয়ের একজন মন্ত্রী তার কর্মকান্ড সুচারম্নভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন মাত্র। মন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন তার সচিব। বর্তমান শিক্ষা সচিব নজরম্নল ইসলাম খান, এনালগ কর্মকর্তাদের ডিজিটাল কর্মকর্তা হওয়ার চাপ সৃষ্টি করেই অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়ায় বাধ্য-বাধকতা হয়তোবা করেছিলেন। এছাড়া শিক্ষা বিভাগের অসৎ কোন কর্মকর্তাই বর্তমান শিক্ষা সচিবের উপর খুশি নন। এরা উঁদুরপিন্ডি বুঁদুর ঘাড়ে চাপাতে গিয়ে সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে নানাবিধ বিভ্রানিত্মকর তথ্য দিয়েছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিৎ। আমি একজন শিক্ষক হিসেবে ষ্পষ্টভাবে বলতে চাই, বর্তমান শিক্ষা সচিব নজরম্নল ইসলাম খান তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষকদের সাথেও টেলিফোনে যোগাযোগ রাখেন। ঘুষ, দুর্নীতি, ফাইল আটকিয়ে অর্থ আদায়ের বিষয়গুলো জেনে নেন, যা দ্রম্নত সমাধানের চেষ্টাও করেন। একজন শিক্ষক কখনোই তার মন্ত্রীর সাথে কথা বলার সুযোগ পান না। যে কারনে একজন শিক্ষক বিভিন্ন কাজে সংশিস্নষ্ট দপ্তরে হয়রানীর শিকার অহরহ হয়ে আসছেন। বর্তমান শিক্ষা সচিবের আমলে এ ধরনের হয়রানীর হাত থেকে শিক্ষকরা মুক্তি পা”েছন। সার্থন্বেষী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা যে ই”ছাকৃতভাবে টেকনিক্যাল সমস্যা ঘটিয়ে শিড়্গা সচিবকে নাসত্মানাবোধ করার চেষ্টা করেনি এর কোন গ্যারান্টি আছে কিনা? এই দুষ্টচক্র শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের মধ্যে ফাঁটল সৃষ্টি করে, তারা আবার পুরোনো কালচারে ফিরে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে কিনা সেটাও ভাবার বিষয়।
শুধু আমি নই, আমার মত শত সহস্র শিড়্গক রয়েছেন, যাঁরা নিজ হাতে কন্টেইন তৈয়ার করে ক্লাসে পাঠদান করতে পারছেন না। আমি নিজে থিম বুঝি ডাউনলোড, এডিটিং, সেভ, সেটআপসহ নানাবিধ টেকনিক্যাল কাজ পারি না। পারদর্শী অষ্টম, নবম এবং দশম শ্রেণির শিড়্গার্থী কিংবা অল্প শিড়্গিত ট্যাকনিশিয়ানদের ডেকে এনে আমি আমার কন্টেইন তৈয়ার করি। কারণ, বিষয়টি আমার কাছে নতুন। অনেক সময় মনে হয় সরকার বাড়তি একটি ঝামেলা চাঁপিয়ে দিয়েছেন। আবার এই কন্টেইন ক্লাসে প্রদর্শনের পর ছাত্ররা যখন উলস্নাস করে আনন্দ প্রকাশ করে, তখন মনে হয় আমি স্বার্থক হলাম। ঘন্টার পর ঘন্টা বক্তব্য রেখে একজন শিড়্গার্থীকে যা শেখানো না যায়, ত্রিশ মিনিটের একটি কন্টেইন থেকে তা শেখানো সম্ভব। তাই বলে এই নয়, আমি কিংবা আমরা অযোগ্য। অনলাইন প্রক্রিয়ায় ভর্তি আবেদন নতুন এবং গ্রহণযোগ্য একটি প্রক্রিয়া, যে কোন নতুন কাজে সমস্যা হতেই পারে। শিড়্গা সচিবের সিদ্ধানত্ম যদি রাষ্ট্রের কোন স্বার্থ পরিপনি’ হয়ে থাকে তবে তা বিবেচ্য বিষয়। যদি তা না হয়ে থাকে, তবে সংগঘটিত সমস্যা আগামীতে কাটিয়ে ওঠার কৌশল এখনই নির্ণয় করতে হবে। এড়্গেত্রে যান্ত্রিক ত্রম্নটি নিরসন এবং অদড়্গ ট্যাকনিশিয়ানদের বিষয়ে সরকারের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কোন টেকনিক্যাল সমস্যাকে কেন্দ্র করে কোন রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল বিভাগে ঘাঁপটি মেরে থাকা দুষ্টচক্রের ফায়দা লুটা মেনে নেওয়া যায়না। এদের খুঁজে বের করে তাদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস’া গ্রহণ করারও প্রয়োজন রয়েছে। আমরা জানি, ‘বৃহৎ কল্যাণের জন্য ছোট খাট ড়্গয় ড়্গতি মেনে নিতে হয়।’ বর্তমান শিড়্গা সচিবের নতুন এই পদ্ধতি দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যনত্ম শিড়্গা কর্মীদের বাহবা কুঁড়িয়েছে। এই পদ্ধতি আরও সহজবোধ্য ও সময়াচিৎ করা যায় কিনা তাও সরকারের ভেবে দেখা উচিৎ। শিড়্গামন্ত্রী এবং শিড়্গা সচিবের মধ্যে ফারাক সৃষ্টি হওয়ার মত কোন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হ”েছ না। আর যদি মনে করা হয়, শিড়্গামন্ত্রী ও শিড়্গাসচিবের মধ্যে কোন স্নায়ূযুদ্ধ মতপার্থক্য রয়েছে, তবে বুঝে নিতে হবে দুষ্টচক্রের বিজয় হয়েছে, পরাজয় ঘটেছে বর্তমান শিড়্গা ব্যবস’ার সুচারম্ন পথচলার।