| রাত ৩:০০ - বুধবার - ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বাকৃবি ভিসি ড. মো. রফিকুল হকের বিরুদ্ধে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে-তদন্ত কমিটি

অন লাইন ডেস্ক | ১০  মে ২০১৫, রোববার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল হকের বিরুদ্ধে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি আলোচিত ওই নিয়োগে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরাও জড়িত ছিলেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন তদন্ত কমিটি। ভিসির ছত্রছায়ায় সরকার সমর্থিত প্রভাবশালী আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের একটি চক্র নিয়োগে সীমাহীন অনিয়ম ও অর্থ বাণিজ্য করেন। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ (ইউজিসি) বিভিন্ন মহলের আলোচনার প্রেক্ষিতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আওয়ামীপন্থি গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম। তদন্ত কমিটি ভিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি প্রভাবশালী শিক্ষকদের নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা, প্রক্টরসহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল  ব্যাক্তিবর্গের নাম উঠে এসেছে। এছাড়াও অনিয়মে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততাও পেয়েছেন তদন্ত কমিটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২ মার্চ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ৩০৭ টি পদে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে তা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। পরে গত ৯ এপ্রিল আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম এ অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র মোদককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম এবং ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.আ.খ.ম. গোলাম সারওয়ার।

গত ৭ মে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্ত প্রতিবেদনে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া পান বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন কমিটি। পরে তাঁরা গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এ প্রতিবেদনে নিয়োগটি বাতিলসহ আরও কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, গঠিত ওই তদন্ত কমিটি বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। যেখানে উঠে এসেছে  সদ্য পদত্যাগ করা ভিসি, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা, প্রক্টরসহ প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের নাম। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে একোয়কালচার বিভাগের অধ্যাপক এবং আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ফোরামের’ সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. এম এ সালাম, তৎকালীন ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক খন্দকার, ডেইরী বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও প্রক্টর ড. মো. হারুণ-অর-রশিদ, শহীদ নাজমুল আহসান হলের প্রভোস্ট এবং ভেটেরিনারি অনুষদের এনাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আওয়াল, তৎকালীন সহকারী প্রক্টর ও কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মহির উদ্দীন ও পশুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এহসানুর রহমানকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

এছাড়া ক্ষমতা অপব্যবহারের জন্য আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ফোরামের’ বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এনামুল হককে আগামী পাঁচ বছরের জন্য আওয়ামীপন্থি ওই সংগঠনের কোন দায়িত্বশীল পদে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক ও ফার্ম স্ট্রকচার এন্ড এনভায়নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রশিদ, তৎকালীন প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহবায়ক ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মোমেন মিয়া, প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খানকে দলীয় নীতি-নির্ধারণী ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন পদে মনোয়নের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে সুপারিশ করেছে ওই তদন্ত কমিটি।

গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একজন শিক্ষক হিসেবে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল হকের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের প্রমাণ মেলায় ফোরাম তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাব-মূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায় একটি কমিটি গঠন করে প্রশাসনিকভাবে তার বিচারের সুপারিশ করা হয়।

তদন্তে বারবার উঠে এসেছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে অবাধ বাণিজ্যের অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি প্রভাবশালী শিক্ষকরা ওই বাণিজ্যের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ছিল অস্বচ্ছ এবং তা মেনে নেওয়ার জন্য তল্পিবাহক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই তদন্ত কমিটি নিয়োগে সীমাহীন অনিয়মের জন্য নিয়োগটি বাতিল করতে কমিটি সুপারিশ করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি একা দূর্নীতি করতে পারে না। একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তাকে সর্বদা সহায়তা দিয়ে থাকে। ভিসি আসে ও যায়। কিন্তু ওই সিন্ডিকেট চক্রটি থেকেই যায়। সেখান থেকেই চক্রটি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়কে সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য অত্র কমিটি ওই অবৈধ সিন্ডিকেট চক্র উৎখাট করতে মত প্রকাশ করে।  শুধু তাই নয়, তদন্তে উঠে এসেছে অনভিজ্ঞ, অযোগ্য প্রর্থীদের অর্থের বিনিময়ে চাকুরী দেওয়ার তথ্য। এমনকি কোন কোন বিভাগে জনবল প্রয়োজন না থাকা সত্তে¡ও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ কমিটিকে দেওয়া নীতিমালা না মেনে নিজেদের ইচ্ছেমত নিয়োগ দিয়েছে। এ নিয়োগের সাথে স্থানীয় ছাত্রলীগ, বাকৃবি ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগও জড়িত বলে তদন্তে উঠে আসে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৮:২২ অপরাহ্ণ | মে ১০, ২০১৫