| রাত ২:২৩ - শুক্রবার - ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

মা দিবসে নেশার টাকা না পেয়ে মাকে লাঠিপেটা, হত্যাচেষ্টা!

লোক লোকান্তরঃ    দিনটি ছিল সারা বিশ্বের মায়েদের জন্য। রোববার ‘আন্তর্জাতিক মা দিবস’। আর মা দিবসে প্রিয় সন্তানের মধ্যযুগীয় নির্যাতনের শিকার হতভাগিনী এক বিধবা মায়ের দিনটি কেটেছে চরম উৎকণ্ঠায়। ছেলের নির্মম নির্যাতনে কাতরাচ্ছিলেন অসহ্য যন্ত্রণায়।

 

হতভাগী ওই মায়ের নাম নুরুন্নাহার রুনু। তার অভিযোগ, নেশার টাকার জন্য প্রতিনিয়ত তিনি মারধরের শিকার হন একমাত্র ছেলে খান মিল্লাত হোসেনের (২৫)। শুধু মারধরই না, একাধিকবার ওড়না দিয়ে নিজের মাকে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টাও করে সে।

 

শুধু রবিবার নয় গত বৃহস্পতিবার নির্যাতনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছিল। বেধড়ক মারধরের পর গরু কাটার ছুরি দিয়ে নুরুন্নাহারের গলা কেটে হত্যাচেষ্টা করে মিল্লাত। সেবারও বাঁচায় প্রতিবেশীরা। সেদিনই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ছেলের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন অসহায় মা।

 

কিন্তু রোববার রাত ১০টা পর্যন্ত পুলিশ মিল্লাতকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ফলে মাদকাসক্ত ছেলে কখন কী করে বসে; এই চিন্তায় চরম উৎকণ্ঠা আর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নুরুন্নাহার রুনু।

 

রাতে থানার অদূরে দাঁড়িয়ে তিনি যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল পানি। বারবার আঁচল দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করছিলেন ছেলের দেওয়া আঘাতের চিহ্ন, মোছার চেষ্টা করছিলেন চোখের জল। আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘দশ মাস পেটে ধরে এই উপহার পেলাম আমি?’

 

নুরুন্নাহার রুনু জানান, কলাবাগানের গেজেটেড অফিসার্স ডরমেটরি গ্রিনরোডের একটি ফ্ল্যাটে প্রায় সাত বছর ধরে মিল্লাতকে সাথে নিয়েই থাকেন তিনি। মিল্লাত ছেলেবেলা থেকেই ঊচ্ছৃঙ্খল আচরণ করত। তিন বছর আগে স্বামী খান সাহাদাৎ হোসেন মারা যাওয়ার পর ছেলে আরও বিগড়ে যায়।

 

খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশে মাদকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কেবল বাইরেই না বিভিন্ন সময়ে বখাটে ছেলেদের বাসায় এনেও মাদক সেবন করে সে। নেশার টাকার জন্য মাকে মারধর করে। বহু চেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে তাকে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রেও ভর্তি করা হয়, কিন্তু শোধরায়নি সে।

 

হতভাগী এই মা আরও জানান, গত বৃহস্পতিবারও মাদকের টাকার জন্য তার ওপর চড়াও হয় মিল্লাত। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ঘরে থাকা লাঠি দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি পেটায় সে। টিভি, ফ্রিজ, সোকেসসহ ঘরে থাকা প্রায় সবকিছু ভেঙে ফেলে।

 

শুধু তাই নয়, মাথায় আঘাত পেয়ে নুরুন্নাহার মেঝেতে পড়ে গেলে গরু কাটার বড় ছুরি দিয়ে তার গলা কাটার চেষ্টা করে মিল্লাত। চিৎকার দিয়ে কোনো রকমে উঠে পালাতে গেলে নুরুন্নাহারকে একপর্যায়ে একটি ওড়না দিয়ে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে হত্যাচেষ্টা করে ছেলে।

 

এক পর্যায়ে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে মায়ের গলার স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় মিল্লাত। কিছুটা সুস্থ হয়ে মামলা করেন রুনু। কখন কী হয় এই চিন্তায় বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়ে নুরুন্নাহার বলেন, ‘গর্ভধারীনি মাকে যে ছেলে নির্যাতন করে, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

 

এ বিষয়ে কলাবাগান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ঠাকুর দাস মালো বলেন, ‘বিষয়টির তদন্ত চলছে। অভিযুক্ত ছেলেকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

 

সুত্রঃ দৈনিক আমদের সময়

সর্বশেষ আপডেটঃ ৪:৪৩ অপরাহ্ণ | মে ১১, ২০২০