| সকাল ৭:০৫ - শুক্রবার - ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

করোনার মধ্যেই ময়মনসিংহ মেডিকেলের ১৪১ জন চাকরিচ্যুত

লোক লোকান্তরঃ   করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই করুণ পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  বেসরকারি জনবলের চিকিৎসকসহ ১৪১ জন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতের নোটিশ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 

গত এপ্রিলে হাসপাতাল পরিচালক এক চিঠিতে এই নোটিশ জারি করেছে। এর ফলে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের ইমারজেন্সি বায়োকেমিস্ট্রি ল্যাব, রেডিওলজী বিভাগ, প্যাথলজি, বর্হিবিভাগের চিকিৎসকসহ সনোলজিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, রেডিওগ্রাফার ও অফিস সহায়ক পদমর্যাদার এমন ১৪১ কর্মচারীর চাকরি থাকছে না আগামী ১ জুন থেকে।

 

ময়মনসিংহ মেডিকেল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন কর্মচারীরাসহ তাদের পরিবার।

 

এসব জনবল ছাটাইয়ের কারণে বহুল প্রত্যাশিত ও প্রশংসিত ওয়ানস্টপ সার্ভিসের সেবা দেওয়ার সক্ষমতা হারাবে। বন্ধ হয়ে যেতে পারে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) বায়োক্যামিকেল ল্যাবের সেবা কার্যক্রম। ব্যাহত হবে অন্যান্য বিভাগের স্বাভাবিক সেবাদান কার্যক্রম। এতে রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হবেন। দৌরাত্ম্য বাড়বে দালাল সংঘবদ্ধ চক্রের।

 

দেশের অন্যতম এই হাসপাতালের মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে হাসপাতালের সরকারি কর্মচারীদের সহায়তা দিতেই ওয়ানস্টপস সার্ভিসসহ বিভিন্ন বিভাগে এসব কর্মচারীদের নিয়োগ দিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 

হাসপাতাল উপপরিচালক ডা. লক্ষীনারায়ণ মজুমদার জানান, করোনার কারণে রোগী কমে যাওয়ায় হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণের ফান্ড থেকে এখন আর এসব কর্মচারীদের বেতন ভাতা মেটানো সম্ভব নয় বলেই এই সিদ্ধান্ত। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং রোগীর চাপ বাড়লে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এসব কর্মচারীদের বেতন ভাতা মেটাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রতিমাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়।

 

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ওয়ানস্টপ সার্ভিসের এক কম্পিউটার অপারেটর করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১০ দিন ধরে আছেন নগরীর নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে। করোনা পরিস্থিতিতে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে এই ওয়ানস্টপ সার্ভিসের চিকিৎসক ও টেকনেশিয়ানসহ আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। এমতাবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে ভেঙে পড়েছেন তারা।

 

করোনাকালে এমন নোটিশে হতাশ হাসপাতালের বেসরকারি জনবলের এই কর্মচারীরা। করোনার আগে হাসপাতালের আউটডোর, ইনডোর ও জরুরি বিভাগে মাত্রাতিরিক্ত ১০ হাজারের বেশি রোগীর চাপ সামালসহ সরকারি কর্মচারীদের সহায়তা দিতে অস্থায়ীভাবে এসব কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

 

রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা ইউজার ফি’র সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ টাকার রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল থেকে এসব কর্মচারীর বেতন ভাতা পরিশোধ করা হতো। কিন্তু এই নোটিশের ফলে চাকরি হারাতে হচ্ছে তাদের। এটিকে অমানবিক উল্লেখ করে সমস্যা সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ।

 

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ময়মনসিংহ শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান ভূইয়া জানান, করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে এসব চিকিৎসক কর্মচারীদের সহায়তার প্রয়োজন সেখানে তাদের ছাঁটাই কোনোভাবেই কাম্য নয়। সমস্যা সমাধানে সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেবে বলে আশা করছেন তিনি।

 

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনার কারণে রোগী কম আসায় ইউজার ফি কমে গেছে। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ ফান্ড এখন তলানিতে। এমন অবস্থায় এসব কর্মচারীকে কোনোমতেই রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিষয়টি দেখা হবে বলেও জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 

কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, করোনার আগে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে দৈনিক গড়ে ছয় হাজার এবং ওয়ানস্টপ সার্ভিস ও জরুরি বিভাগে আরও পাঁচ শতাধিক রোগী সেবা নিতে ভিড় জমাত এবং হাসপাতালের অন্তঃবিভাগে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগী ভর্তি থাকত। এ সময় ইউজার ফি আদায়ের ফলে সরকারের রাজস্ব চার কোটি টাকা থেকে বেড়ে এক লাফে ১৩ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ফলে হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণ ফান্ডে টাকার কোনো অভাব ছিল না।

 

বর্তমানে বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন পাঁচশ, ওয়ানস্টপ সার্ভিস ও জরুরি বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ২০০ রোগী আসছেন সেবা নিতে। আর এক হাজার শয্যা বিশিষ্ট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অন্তঃবিভাগে ভর্তি থাকছে গড়ে ৭০০ রোগী! করোনা পরিস্থিতিতে রোগীর এই সংখ্যা আরও কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে রাজস্ব আয়েও ধস নেমেছে। এমন অবস্থায় গত ২১ এপ্রিল হাসপাতাল পরিচালকের স্বাক্ষর করা এই নোটিশে বলা হয় বেসরকারি কর্মচারীদের অস্থায়ী নিয়োগ আদেশ আগামী ১ জুন থেকে বাতিল করা হলো।

 

ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নূরুল আমিন কালাম জানান, করোনা পরিস্থিতিতে তাদের চাকরিচ্যুত না করে মানবিক কারণে তাদের বহাল রাখা হোক। টাকার সংকট থাকলে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মমেকহা কর্তৃপক্ষকে টাকার সংস্থান করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

 

সুত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়

সর্বশেষ আপডেটঃ ৮:৫১ অপরাহ্ণ | মে ০৭, ২০২০