| সকাল ১০:০০ - শনিবার - ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

রোগীর কষ্ট হলে ভিজিট নেন না ডা. মতিউর রহমান

লোক লোকান্তরঃ  ডা. মতিউর রহমান ল্যাপারোসকপিক যন্ত্রের দ্বারা পিত্তথলির পাথর অপারেশন করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। বাংলাদেশের চিকিৎসকরা টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না প্রায়শই এমন অভিযোগের কথা শোনা যায়। কিন্তু আপনার এমন ধারণা পুরোপুরি হয়তো বদলে যাবে পিত্তথলির পাথর অপারেশনের অভিজ্ঞ সার্জন প্রফেসর ডা. মো. মতিয়ার রহমানের চেম্বারে ঢুকলে।

 

তার চেম্বারের টেবিলের উপরে রাখা একটি নম্বর প্লেট চোখে পড়বে। তাতে অন্যান্য চিকিৎসকদের চেয়ে অনেক কম ভিজিটের কথা বলা আছে। আর রোগীর যদি তা দিতে কষ্ট হয় তাহলে না দিলেও সমস্যা নেই এমনটাও লেখা আছে।

 

প্রফেসর ডা. মো. মতিয়ার রহমান বর্তমানে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান। মগবাজার রেল গেইটে অবস্থিত ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।দি বারাকাহ ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান এবং কোরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইনসাফ বারাকাহ কিডনি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই চিকিৎসকের চেম্বারে এমনটা লেখা থাকলেও কেউ হয়তো এভাবে চিন্তা করেননি ।রবিবার মাকে নিয়ে এই চিকিৎসকের কাছে গেলে বিষয়টি দেখে তাতে চোখ আটকে যায় দৈনিক যুগান্তরের অলনাইন ভার্সনের ইনচার্জ মিজানুর রহমান সোহেলের। টুপ করে ছবি তুলে তা ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘মায়ের পিত্তথলিতে পাথর। কিডনি ডাক্তার মতিয়ার রহমানকে দেখানোর জন্য প্রায় দেড়মাস আগে সিরিয়াল দিয়ে আজ দেখাতে আসলাম। তবে ডাক্তার চেম্বারে ঢুকেই লেখাটি দেখে ভাল লাগলো। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।’

 

রবিবার রাত নয়টার দিকে সোহেল ফেসবুকে উপরের ক্যাপশনসহ ছবিটা পোস্ট করার পর নীচে অনেকেই এই চিকিৎসকের কাছ থেকে সেবা পাওয়ার কথা বলেছেন। কেউ কেউ বর্তমান সময়ে এমন চিত্র বিরল বলে মন্তব্য করেছেন।

 

ফারজানা মাহবুবা নামের একজন লিখেছেন,ডা. মতিউর রহমানের চিকিৎসায় তার শ্বাশুরী এখন অনেক ভালো। বলেছেন, এই ডাক্তার অনেক ভালো।

 

ইমরাদ তুষার নামের একজন লিখেছেন, বাহ ভালোই তো… এখনও তাহলে ভালো মনের ডাক্তার আছে দেশে। আল্লাহপাক তার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ করুন।.. আমিন।

 

ডা. মতিয়ার রহমান খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার আরজি-ডুমুরিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালে যথাক্রমে ডুমুরিয়া হাই স্কুল ও খুলনাস্থ দৌলতপুর সরকারি বিএম কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। এরপর ১৯৭৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন।

 

সরকারি চাকরিতে যোগদানের পর ১৯৭৯ সালে ইরাক চলে যান তিনি এবং ইরাকের জেনারেল হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে চার বছর চাকরি করেন। এরপর তিনি উচ্চশিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে যান এবং ১৯৮৬ সালে গ্লাসগো রয়েল কলেজ অব ফিজিসিয়ানস এন্ড সার্জনস থেকে সার্জারিতে এফআরসিএস ডিগ্রী অর্জন করেন। ইংল্যান্ডে রেসিডেন্ট পারমিট থাকলেও তা ত্যাগ করে তিনি ১৯৮৭ সালে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৮৮ সালে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনিস্টিটিউট হাসপাতালে সার্জারি বিভাগের কনসালটেন্ট হিসেবে যোগদান করেন।

 

ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে তার চেম্বারের সহকারী মো.সিদ্দিকুর রহমান সুরুজ বলেন, আমি স্যারের সঙ্গে প্রায় ২৫বছর ধরে আছি।অত্যন্ত ভালো মানুষ। এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে যখন ২০০টাকা ভিজিট ছিল তখনও এটা লেখা ছিল।এখন ৪০০শ টাকা করার পরও একইভাবে লিখে রেখেছেন।’

 

বর্তমান সময়ে এমন চিত্র দেখা যায় না।আপনার স্যার কি কারণে লিখেছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আসলে খুব বেশি বলতে পারবো না। তবে স্যার (ডা.মতিউর রহমান)প্রায়ই বলেন চিকিৎসা হলো একটা সেবা। হয়তো সেই চিন্তা থেকে এমনটা করেছেন।কারণ তার থেকে অনেক জুনিয়র চিকিৎসকেরও ভিজিট এক হাজার টাকা। কারো হয়তো বেশিও আছে।তার অপারেশন চার্জও অনেকের থেকে অনেক কম।’

 

তিনি বলেন, স্যারের সক্ষমতাও আছে, ইচ্ছাও আছে যে কারণেই তিনি এমন ব্যতিক্রমী কাজ করেছেন।এরপরও যদি ইন্টারনাল কোনো ইচ্ছা স্যারের থেকে থাকে সেটা বলতে পারবো না।’

 

প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার ডা.মতিউর রহমান রোগী দেখেন জানিয়ে সুরুজ বলেন,প্রতিদিন ২৫জন রোগী দেখেন। কিন্তু প্রচুর রোগীর চাপ থাকে।

 

ছবিঃ সংগৃহীত

সর্বশেষ আপডেটঃ ১:৩২ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৮