| রাত ১১:৫৬ - মঙ্গলবার - ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

জিন সম্পাদনায় দূর হবে ১০ হাজার রোগ

লোক লোকান্তর: প্রথমবারের মতো মানব ভ্রূণ থেকে একটি ত্রুটিপূর্ণ ডিএনএ সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই ডিএনএর কারণে প্রাণঘাতী একটি হৃদরোগ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একজনের কাছ থেকে আরেকজনের শরীরে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির ফলে দরজা খুলে গেল বংশপরম্পরায় চলে আসা ১০ হাজারের বেশি ত্রুটি বা স্বাস্থ্যসমস্যা সংশোধনের। বলা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে বদলে যেতে পারে ওষুধের ভবিষ্যৎ।

 

যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীদের একটি দল মানব ভ্রূণের ওপর এই গবেষণা চালিয়েছেন। যে প্রক্রিয়ায় ভ্রূণ থেকে ত্রুটিপূর্ণ ডিএনএ দূর করা হয়েছে, জিন সম্পাদনার এই প্রযুক্তিকে বলা হয় ক্রিসপার।

 

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক এবং এর মাধ্যমে বংশগত ত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে সিসটিক ফিব্রোসিস থেকে শুরু করে স্তন ক্যানসারের মতো রোগও প্রতিরোধ করা সম্ভব।

 

এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা হাইপারট্রফিক কার্ডিওমাইওপ্যাথি নিয়ে কাজ করেছেন। এই হৃদরোগটি অনেকের শরীরেই দেখা যায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রত্যেক ৫০০ জনের মধ্যে একজন এই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এই রোগে হৃদযন্ত্র হঠাৎ করেই অচল হয়ে যেতে পারে।

 

ডিএনএতে থাকা একক একটি জিনের ত্রুটির কারণে এই রোগ হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে তার সন্তানের শরীরে এই রোগটি যাওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ।

 

গবেষণায় হাইপারট্রফিক কার্ডিওমাইওপ্যাথি রোগে আক্রান্ত একজন পুরুষের শুক্রাণু প্রথমে একজন নারীর সুস্থ ডিম্বাণুর ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। তারপর যখন ভ্রূণে পরিণত হতে থাকে তখনই ক্রিসপার প্রযুক্তির সাহায্যে সেখানকার জেনেটিক ত্রুটি সংশোধন করা হয়। দেখা গেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে এটি সফল না হলেও ৭২ শতাংশ ভ্রূণকে এই ত্রুটি থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

 

এই গবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বিজ্ঞানী সুখরাত মিতালিপভ। তিনি বলেছেন, জিনের এই ত্রুটি একবার সংশোধন করার পর ত্রুটিমুক্ত সেই জিনটি পরবর্তী প্রজন্মের পর প্রজন্মের শরীরে প্রবাহিত হবে। এই কৌশল ব্যবহার করে এখন পরিবারের এবং মানবদেহের বংশগত বহু রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব।

 

এখন বিজ্ঞানের এই অগ্রগতিকে সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখে পড়তে হবে সেটা হলো নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্ন। কথা হলো- ল্যাবরেটরিতে তৈরি একটি ভ্রূণের এ রকম পরিবর্তন মানুষের করা উচিত কি না।

 

কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর খুব একটা সোজাসাপ্টা নয়। কারণ শেষ পর্যন্ত যদি জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়, তাহলে জিনের এই পরিবর্তন নীতিগতভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না কেন?

 

ইতোমধ্যে অনেকেই এই গবেষণার সমালোচনা করেছেন। তারা বলছেন, এর ফলে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে শিশু জন্ম দেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতে পারে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ধনী ব্যক্তিরাই এই চিকিৎসা নিতে পারবেন। ফলে তারাই বংশগতভাবে একের পর এক নিরোগ ও সুস্থ প্রজন্ম জন্ম দিতে পারবে।

 

অন্যদিকে, শুধু দরিদ্র মানুষেরাই বংশগত এসব অসুখ-বিসুখে ভুগতে থাকবে।

 

সূত্র: বিবিসি

সর্বশেষ আপডেটঃ ৬:০১ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ২০, ২০১৭