| সকাল ৮:৩৩ - বুধবার - ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ঢাকা অ্যাটাক রিভিউঃ প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির সম্মিলন

মাহমুদুল হাসান রিফাতঃ

বাংলা মুভিতে আমরা আগে পুলিশকে কীভাবে দেখতাম? হয় একজন অসৎ পুলিশ, কিংবা কোন নায়ক পুলিশ। তার পাশে থাকবে বেটে, মোটা কিছু জোকার। যাদের কাজ ঘুমানো আর কমেডি করা। আর শেষ দৃশ্যে বলবে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। সেই বাংলাদেশী মুভিই যখন কপ থ্রিলার হয়, তখন প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী আর আশংকা ছিল হিমালয়সম।

 

কিন্তু ঢাকা অ্যাটাক দিয়েছে প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির সম্মিলন। যে মুভি নামে নয়, কাজেই কপ থ্রিলার। যেখানে নেই হাস্যকর কমেডিয়ান, আছে একদল সিরিয়াস কপ যারা দেশের মানুষের জন্য জীবন বাজি রাখে। গল্পটা সেই দুর্দান্ত সোয়াট বাহিনীদের নিয়ে, সাথে বোম্ব স্কোয়াড আর চৌকস পুলিশের।

 

প্লটঃ এক সিরিয়াল কিলার ঢাকায় একই সাথে অনেক মার্ডার আর ব্লাস্ট ঘটায়।মার্ডারের সাথে দিয়ে যায় ক্লু। তা নিয়েই পিছু নেন বোম্ব স্কোয়াডের চৌকশ এক অফিসার।

 

ডিরেকশনঃ বেশ ভালো। হ্যাটস অফ টু দীপঙ্কর দীপন। তিনি ভিলেনের আস্তানা, সোয়াটদের গতিবিধি, মেলোড্রামাটিক সিন তৈরিতে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। তবে এরকম কপ থ্রিলারে জোর করে প্রেম না ঢুকালেও হতো। (৮/১০)

 

গল্প: মেইন প্লট, সাবপ্লট প্রতিটা জায়গায় ইঞ্চ পারফেক্ট করার চেষ্টা ছিল। বাংলা মুভি অনুযায়ী বেশ দুর্দান্ত ছিল। (৯/১০)

 

সিনেমাটোগ্রাফিঃ বেশ ভাল। তবে অন্ধকার সিনগুলোর কালারটা আরো ব্রাইট দরকার ছিল। লোকাল হলে দেখা টাফ। (৭/১০)

 

স্ক্রিনপ্লে এবং এডিটিংঃ প্রথম হাফে থেকেই মুভিতে উত্তেজনা ছিল। সে তুলনায় স্ক্রিনপ্লে বেশ স্লো ছিল। সাধারণত ক্যারেক্টার বিল্ডাপে স্লো করা হয়, এখানে একশন সিকুয়েন্সও ফাস্ট নয়। তবে ২য় হাফ অনবদ্য ছিল। (৬/১০)

এডিটিং পারফেক্ট লেগেছে। টাইমিং বেশ ভালো। অহেতুক শট রাখা হয়নি। (৭/১০)

 

মিউজিকঃ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক প্রথম হাফটাকে বাঁচিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু সেটা হয়নাই।তবে দ্বিতীয় হাফে পিক করেছে। গানের পজিশনগুলো দারুণ। অহেতুক লাগেনাই। রোমান্টিক একটা গান মুভিতে লাগে বলে দিয়েছে, সেটারও টাইমিং ভাল। তবে ইগ্নোর করলে গল্পটা আরো ফাস্ট হতো। (৬/১০)

 

অভিনয়ঃ আরেফিন শুভ অভিনয়টাকে রিয়েলিস্টিক করতে পেরেছেন এখানে। আগে ডায়লগ ডেলিভারির পর যে ওভার এক্টিং গুলো করতেন, সেগুলোর পরিহার করেছেন দেখে ভালো লেগেছে। (৮/১০)

শতাব্দী ওয়াদুদ দারুণ! এই ভদ্রলোক বাংলাদেশের সেরা অভিনেতাদের একজন। (৯/১০)

তাসকিন দ্যা ভিলেন জাস্ট বুম্মম্মম্মম্ম! কি দারুণ সব এক্সপ্রেশন! সাথে আরো দারুণ ডায়লগ ডেলিভারি। বডি মুভমেন্ট আরো ভালো হলে ফাটাবেন সামনে। তবে প্রথম ইম্প্রেশনে জাস্ট ওয়াও। (৯/১০)

মাহিয়া মাহি ডিসগ্রেসফুল এক্টিং। তাকে জাস্ট শো পিস করেননি ডিরেক্টর। নায়কের কাছাকাছি সুযোগ ছিল তার। কিন্তু ম্যাকি ডায়লগ ডেলিভারিতে ডুবিয়েছেন। ক্লাইম্যাক্স ইমোশন অনেকদিন পর মানুষজনকে কান্নার সিনে হাসতে দেখলাম। তার বলা ‘প্রমিস করো ফিরে আসবে আমার কাছে ‘ শুনে হাসিই পাইছে। (২/১০)

তার জায়গায় পারফেক্ট কাস্ট হতে পারতেন মিম।প্রোডিউসার/ডিরেক্টর এর ভুল বলবো এরকম গুরুত্বপূর্ণ রোলটা নষ্ট করানোকে।

এবিএম সুমন এন্ড নওশাবা রোমান্সে যে ড্রামা ক্রিয়েট করা হয়েছে এটাই একমাত্র প্রেম দেখালেও চলতো।সোয়াটদের ফ্যামিলি যে কতটা উদ্বিগ্ন থাকে,তা দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে এই জুটি।সুমন দারুণ এক্ট করেছেন। (৮/১০)

শিপন সেই রোবটিক এক্সপ্রেশন। কয়েক মিনিটেও ডিসগ্রেসফুল। (২/১০)

 

সাজসজ্জাঃ এই ডিপার্টমেন্টে যত্নের অভাব ছিল। আলমগীর সাহেবকে লিপস্টিক লাগিয়ে যাত্রাপালার মতো লাগানোর দরকার ছিল। উনার রোল ছোট, ভালো করেছেনও। তবে তাকে এরকম দৃষ্টিকটু ম্যাকাপ করানো ভাল লাগেনাই। আরেফিন শুভ’র এক সিনে চুল বড়,  এক সিনে চুল ছোট এসবও দৃষ্টিকটু ছিল। আলাদা টাইমে মুভি শ্যুট করলে এরকম হয়। যত্ন নিতে পারতেন ব্যাপারটায় দীপন দাদা। তবে এগুলা ইগ্নোরেবল।

মোটের উপর ঢাকা এটাক দুর্দান্ত এক কপ থ্রিলার। দারুণ এক গল্পের সাথে বেশ ভালো কিছু অভিনয়। সবচেয়ে বড় কথা সবকিছু এত রিয়েলিস্টিক ছিল, যে আপনি হতাশ হবেননা কখনোই।

হলে গিয়ে মুভিটি দেখে আসুন।পয়সা উসুল হবে।

পার্সোনাল রেটিংঃ ৮/১০ (বাংলা মুভি হিসেবে)

সর্বশেষ আপডেটঃ ৮:১৬ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ০৭, ২০১৭