| সকাল ৯:৫৯ - শনিবার - ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

পবিত্র ঈদুল ফিতর ও যাকাত ব্যবস্থা

লোক লোকান্তরঃ  যাকাত কি? ইসলামের র্পাঁচটি মূল স্তম্ভের অন্যতম হচ্ছে যাকাত। ব্যক্তি যখন কালেমা পড়ে ইসলামের সীমার মধ্যে দাখিল হয়, তখনই ইসলামের যাবতীয় বিধি নির্দেশ মেনে চলা তার জন্যে অপরিহার্য। যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্র করা, পরিশুদ্ধ করা সুনির্ধারিত সম্পদ সুনির্ধারিত শর্তে তার হকদারকে অর্পণ করা।

 

এক কথায় কোনো মুসলমান আল্লাহ্ নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও তা এক বছর পর্যন্ত তার কাছে থাকলে সেই সম্পদের নির্ধারিত পরিমাণ অংশ হকদারের কাছে পৌছে দেয়াকে যাকাত বলা হয়। যাকাত আদায় হচ্ছে সচ্ছল সব মুসলমানের প্রতি আল্লাহ’র কঠোর নির্দেশ। কোন মুসলমানের স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে এ নির্দেশ অমান্য করাই হলো আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সা:) এর সাথে সরাসরি মনাফেকী করা।

 

২য় হিজরীতে যাকাত ফরজ হওয়ার পর রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাসুল (সা:) যাকাত ব্যবস্থা চালু করেন। রাসুল (সা:) হযরত মা’আজ ইবনে জাবাল (রা:) কে ইয়েমেনের গভর্ণর নিয়োগ করে ঘোষনা দেনঃ- তাদের জানিয়ে দাও যে, তাদের ধন- মালে আল্লাহ তা’আলা সদকা-যাকাত ফরজ করে দিয়েছেন। ধনী লোকদের কাছ থেকে যাকাত গ্রহণ করে গরীব বা ফকিরদের মাঝে বন্টন করা হবে। (বোখারী মুসলিম)।

 

যাকাত দাতা হওয়ার শর্তাবলিঃ- (১) প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। (নাবালকের উপর যাকাত ফরজ নয়)। (২) বুদ্ধিবিবেক সম্পন্ন মানুষ পাগলের জন্য যাকাত ফরজ নয়।) (৩) যাকাত দেওয়ার নিয়ত করা। (নিয়ত না করে নিজের সকল সম্পদ সদকা করলেও কোন যাকাত আদায় হবে না।)

 

কিসের যাকাত দেয়া ফরজঃ- (১) নিজের  প্রয়োজন মেটানোর পর অতিরিক্ত সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা ৭ তোলা সোনা বা সমমানের নগদ অর্থ এক চন্দ্র বৎসর জমা থাকলে তার ওপর যাকাত দেয়া ফরজ হয়। বর্তমান হিসেবে গ্রামে ৫৯৫ গ্রাম রূপা, ৮৫ গ্রাম সোনা। (২) সোনা বা রূপার তৈরী গয়না, ফার্নিচার, তৈজসপত্র, ইত্যাদির উপর নিসাব পরিমাণ যাকাত ফরজ। তা ব্যবহারে থাকুক বা না থাকুক। গয়নার ক্রয় মূল্য নয়, বিক্রয় মূল্যের ওপর যাকাত দিতে হবে। (৩) ব্যবসার মালের ওপরও যাকাত ফরজ। যদি এর মূল্য ৫২ তোলা রূপা বা ৭ তোলা সোনার নীচে না হয়। (৪) খামারে পালিত গবাদি, পশু, হাঁস-মুরগি, কবুতর, মাছ, পোনা, নার্সারীর বীজ, চারা ইত্যাদি যদি এর মূল্য ৫২ তোলা রূপা বা ৭ তোলা সোনার উপরে হয়। (৫) প্রাপ্ত বাড়ি ভাড়া, হাউজিং, ব্যবসার জমি, প¬ট, ভবন, এপার্টমেন্ট যদি ৫২ তোলা রূপা ও ৭ তোলা সোনার উপর হয়। (৬) ব্যবসার দেনা (বাকিতে মালামাল বা কাঁচামাল ক্রয় করলে কিংবা কর্মচারীর বেতন, মজুরী, যে কোন ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল ইত্যাদি) পরিশোধ না থাকলে সেই পরিমাণ অর্থ যাকাত যোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে। তবে বসবাসের বাড়ি-ঘর, দালান, জমি, দোকান, কারখানা, যন্ত্রপাতি বা কাজের হাতিয়ার, অফিস ও ঘরের আসবাব-সরঞ্জামাদি ব্যবহারিক যানবাহন ও চলাচলের জন্য পালিত পশু, নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী, গৃহপালিত পশু-পাখি ইত্যাদির যাকাত হয় না। (৭) বৈদেশিক মুদ্রা যেমন, পাউন্ড, ডলার, ইয়েন, রূপী, রিয়াল, দিহরাম, ইত্যাদি যেহেতু বিনিময়ের জন্য নির্দিষ্ট এবং সোনা-রূপার স্থানেই ব্যবহৃত এর পরিমাণ ৫২ তোলা রূপা বা ৭ তোলা সোনার সমান হলেই যাকাত দিতে হবে। (৮) মুদ্রা ও গয়না ইত্যাদি যে সকল জিনিসে সোনার বা রূপার পরিমাণ  অধিক সে সকল জিনিস সোনা বা রূপা হিসাবেই গণ্য হবে। খাদ বাদ দিয়ে যাকাত দেয়া কর্তব্য। (দুররে মুখতার ও শামী), (৯) অন্যের কাছে পাওনা টাকার ওপর যাকাত ফরজ। যদি দেনাদার ও তা স্বীকার করে এবং আদায়ের অঙ্গীকার করে বা নিজের কাছে টাকা উসুলের উপযুক্ত দলিল-প্রমাণ থাকে। (১০) কোন কারখানা বা কোম্পানীতে দেয়া শেয়ার মুল্যের যাকাত দেয়া ফরজ। তবে এর যে অংশ উপকরণ বাবদ খরচ হয়েছে তার মূল্য বাদ দিয়ে যাকাত দেয়া যাবে। (১১) প্রভিডেন্ট- ফান্ডের  টাকা যখন উসুল হবে কেবল তখন থেকেই তার যাকাত দেয়া শুরু করতে হবে। (এমদাদুল ফতোয়া ২য় খন্ড- ৬৪৫পৃ:) (১২) যাকাতযোগ্য বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী আছে কিন্তু এককভাবে কোনটিই যাকাত যোগ্য পরিমাণে নয় এ ক্ষেত্রে সব মিলিয়েও যদি নির্ধারিত (নিসাব) পরিমাণ হয় তাহলে যাকাত ফরজ হয়। (১৩) যাদের ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট, সঞ্চয়, সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস, ইত্যাদি বাবদ টাকা রয়েছে এবং নির্ধারিত পরিমাণে পৌছাইলেই যাকাত দিতে হবে। (১৪) ঋণের তুলনায় নগদ টাকা বেশী থাকলে ঋণ পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বাদে বাকি টাকার যাকাত হবে। (১৫) যাকাত যোগ্য অলংকার রয়েছে কিন্তু যাকাত দেয়ার নগদ অর্থ নেই, তাহলে যাকাত দেয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ অলংকার বিক্রি করে যাকাত দিতে হবে। (১৬) কারো কাছে কাফ্ফারা বা মানত আদায় অথবা হজ্জ্ব আদায়ের টাকা জমা আছে, যদি সেই টাকা নির্ধারিত পরিমাণ হয় তাতে যাকাত ফরজ। এগুলো আল্লাহর দেনা (দূব-৬) (১৭) স্ত্রীর মোহরের জমাকৃত টাকা এবং কোরবানির জন্য জমা-টাকার ওপরেও যাকাত দিতে হবে। (১৮) সরকারকে টেক্স বা আয়কর, ভ্যাট ইত্যাদি দেয়ার টাকার উপর যাকাত দেয়া যাবে না। কারন সরকার তা যাকাত হিসেবে বা শরীয়ত নির্ধারিত খাতে ব্যয় করে না। (কায়রো ওলামা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত)। (১৯) শিল্প স্থাপন বা ব্যবসার প্রয়োজনে ব্যাংক বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়ার পর যদি যাকাতযোগ্য পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ থাকে তাহলে যাকাত দিতে হবে।

 

উদাহরণ স্বরূপ: আপনি ব্যাংক থেকে ১৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে শিল্প স্থাপন বা যে কোন ব্যবসা শুরু করলেন। তখন যদি আপনার কাছে যাকাত যোগ্য পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ জমা থাকে তাহলে ঋণ থাকা সত্ত্বেও আপনার যাকাত দিতে হবে। যেহেতু ঋণের বিপরীতে আপনার শিল্প বা ব্যবসা চালু রয়েছে। যাকাত ফরজ হয়েছে এমন সব সম্পদের মূল্য হিসাব করে সর্বমোট মূল্যের শতকরা আড়াই ভাগ অর্থ যাকাত দিতে হবে। যাদের ২৮ মন ৫ সের ফসল হাতে আসবে, তাদেরকে এক দশঅংশ ফসল যাকাত হিসেবে দিতে হবে। যে সব জমি প্রাকৃতিক উপায়েই (বৃষ্টি, নদী-নালা, খাল-বিল, ঝর্ণা, হাওর, ইত্যাদির পানিতে বা প্রাকৃতিকগতভাবে আপনা-আপনি চাষ উপযোগী হয় কেবল সেসব জমির ফসলের এক দশমাংশ যাকাত দিতে হবে। যে সব জমিতে কৃত্রিম উপায়ে শ্রমিক মজুরী, পশু, কলের যন্ত্র ইত্যাদি ব্যবহার করে পানি সেচ সহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ বহন করতে হয়। সে জমির ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করতে হবে। বর্তমান রূপার বাজার দর হিসেবে ১৮,০০০ টাকা জমা থাকলেই যাকাত ফরজ হয়।”

 

যাকাতের অর্থ ব্যয়ের শরীয়ত নির্ধারিত ৮টি খাতঃ- যাকাত নিজ ইচ্ছে মতো যাকে তাকে দিলে আদায় হবে না। আল্লাহ্‌  তা’য়ালা যাকাতের ৮টি খাত উল্লেখ করেছেন। ১। ফকিরঃ- ফকির এমন মজুর ও শ্রমজীবীকে বলা হয়, যে শারীরিক ও মানসিকভাবে কর্মক্ষম হওয়া সত্বেও প্রতিকূল অবস্থার কারনে বেকার ও উপার্জনহীন হয়ে পড়েছে। যে সব অভাবগ্রস্থ মেহনতি লোক কোনো জালিমের জুলুম হতে আত্মরক্ষার জন্যে জম্মভূমি ছেড়ে এসেছেন বা আসতে বাধ্য হয়েছেন তাদেরকেও ফকির বলা যেতে পারে। ২। মিস্কিনঃ- যাকে দৈহিক অক্ষমতা নিস্কমা ও উপার্জনহীন করেছে তাকে মিসমিন বলে। রোগ, পঙ্গুত্ব, বার্ধ্যক্য, অক্ষমতা যাকে উপার্জনের সুযোগ হতে বঞ্চিত করেছে অথবা যে ব্যক্তি উপার্জন করতে পারে কিন্তু তা দ্বারা তার প্রকৃত প্রয়োজন মোটেই পূর্ণ হয় না, অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, পঙ্গু, খাদ্য-বস্ত্র ও আশ্রয়হীন শিশু ইত্যাদি সকলকেই মিসকিন বলা হয়। ৩। যাকাত বিভাগের কর্মচারীদের বেতন ভাতাঃ- যাকাত আদায় এবং তা সুষ্ঠ ও সুনির্দিষ্টভাবে বন্টন করার কাজে যারা সার্বক্ষনিক নিযুক্ত থাকবে এবং অন্য কোনোভাবে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করতে অক্ষম, সে সব কর্মচারীর নূন্যতম প্রয়োজন পূরনার্থে আদায়কৃত যাকাত থেকে তাদের বেতন- ভাতা দেয়া হবে। ৪। নও মুসলিমদের মন আকৃষ্ট করাঃ- অমুসলিমদের অত্যাচার থেকে মুসলিম সমাজকে রক্ষার জন্যে যাকাতের সম্পদ ব্যয় করা যাবে। ইসলাম প্রচারের কাজে কোথাও প্রতিরোধের সম্মুখীন হলে সে ক্ষেত্রে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। সংগতিহীন নও মুসলিমকেও স্বনির্ভর করার কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় হতে পারে। ৫। ক্রীতদাসমুক্তিঃ- যেসব দেশে দাস প্রথা চালু আছে এবং মুসলমানদেরকে দাস বানিয়ে রাখা হয়েছে সেখানে দাসদেরকে অর্থ দিয়ে ম্ক্তু করার কাজে যাকাতের সম্পদ ব্যয় করা যাবে। ৬। ঋণ মুক্তিঃ- প্রথমত, যারা নিজেদের দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণ করতে গিয়ে ঋণগ্রস্থ এবং সে ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়েছে, তাদেরকে যাকাতের সম্পদ হতে সাহায্য করা যাবে। দ্বিতীয়ত, যারা মুসলমানদের কল্যাণ সাধন ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যে ঋণ গ্রহণ করে, তাদের সে ঋণ শোধ করার জন্যে যাকাত দেয়া যাবে। যাদের বাড়ি-ঘর আগুনে ভস্মিভূত হয়ে গেছে, বন্যা-প্লাবনের জন্যে যাকাতের সম্পদ দেয়া যাবে। ৭। ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থাঃ- যাকাতের ৭ম খাত হলো “ফি সাবী-লিল্লাহ” (আল্লাহর পথে)। ইসলামী চিন্তাবিদগণের সম্মিলিত মত হলোঃ- (ক) আল্লাহর নির্দেশিত পথে প্রতিটি জনকল্যাণকর কাজে, দ্বীন ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে যত কাজ করা সম্ভব সে সব ক্ষেত্রেই এ অর্থ ব্যয় করা যাবে। (ইসলামের অর্থনীতি আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুর রহীম, পৃ-২৭৭)। (খ) “ফী সাবী লিল্লাহ’র ব্যবহারিক অর্থ জিহাদ ছাড়া আর কিছু না। কোরআনে যেখানেই সাবী লিল্লাহ কথাটির উল্লেখ রয়েছে সেখানেই তার অর্থ হিসাবে জিহাদকে বোঝানো হয়েছে, মাত্র দু’একটি ক্ষেত্রে ছাড়া। আল্লামা ইবনে কুদামা: ইসলামের জাকাত বিধায় ২য়খন্ড, পৃ:-১৩৭) (গ) ইসলামী জনকল্যাণমূলক সংস্থা সমূহকে যাকাত দেয়া জায়েজ। (মুফতি শায়খ হোসাইন মাখলূক, ইসলামের যাকাত বিধান- ২য়খন্ড পৃ- ১৪৭)। ৮। মুসাফিরঃ- যাকাতের ৮ম খাত হলো (ইবনুস সাবীর। সৎ উদ্দেশ্যে দেশ ভ্রমণে বেরিয়ে যারা পথিমধ্যে নিসম্বল হয়ে পড়েছে, তাদেরকে যাকাতের অর্থ দেয়া যাবে। যাকাত সম্পর্কে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের জবাবঃ- প্রশ্নঃ আত্মীয়-স্বজন কি যাকাত পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন? উত্তরঃ- প্রথমত, পিতামাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, স্থানীয় উর্ধ্বতন সকল পরিজন এবং পুত্র-কন্যা, নাতি-নাতনী স্থানীয় অর্ধস্তন পরিজনদের যাকাত দেয়া যাবে না। আর  অন্যান্য পরিজনদের ক্ষেত্রে কোরআন এবং হাদিসে যাকাত নয়, সদকা দিতে উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে।

 

নবীজি (সা:) বলেন, “উত্তম সদকা হচ্ছে নিজের পরিবারের ও আত্মীয়দের জন্যে ব্যয়।” আর মনে রাখতে হবে, যাকাত একটি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিধান। অর্থাৎ যাকাতের অর্থ একসঙ্গে জমা করার মাধ্যমে সম্মিলিত ভাবে আদায় এবং দারিদ্য বিমোচনের লক্ষ্যে সু-পরিকল্পিতভাবে ব্যয় করা বাঞ্চনীয়। প্রশ্নঃ- মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য কি কাউকে যাকাত দেয়া যাবে? উত্তরঃ যদি সে যাকাত পাওয়ার যোগ্য হয় তাহলে যাকাতের অর্থ দিয়ে তার মেয়ের বিয়ে দিতে দোষের কিছু নেই। প্রশ্নঃ ভিন্নধর্মী, পাহাড়ি, ধর্মহীন, কাউকে যাকাত দেয়া যাবে কি না? উত্তরঃ মহান আল্লাহ্‌ যাকাত ব্যয়ের ৮টি খাত নির্দিষ্ট করেছেন তাতে ফকির-মিসকিন বলা আছে। ঈমানদার ফকির- মিসকিন বলা হয় নি। আর খেলাফায়ে রাশেদার আমলে খেলাফত বসবাসকারী ধর্ম-গোত্র নির্বিশেষে প্রতিটি ব্যক্তির নূন্যতম প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব রাষ্ট্র বহণ করেছে। বায়তুল মাল থেকে এ প্রয়োজন পূরণ করা হতো। আর যাকাতের অর্থ বায়তুল মালেই জমা হতো। তাই যে কোনো দুস্থ ও নি:স্ব মানুষের কল্যাণে যাকাতের অর্থ ব্যয়ে কোনো বাধা নেই।

 

প্রশ্নঃ মসজিদ- মাদ্রাসা নির্মাণে কি যাকাত দেয়া  যাবে? উত্তরঃ মসজিদ- মাদ্রাসা বা রাস্তাঘাট নির্মাণে যাকাত দেয়া যাবে না। কারণ যাকাতের অর্থ- ব্যয়ের শরীয়ত নির্ধারিত ৮টি খাতের মধ্যে তা পড়ে না।

 

যাকাত হিসেব: একটি সাধারণ নমুনা পদ্ধতিঃ-
যাকাত দাতার নাম  কোন বছর

১। ব্যক্তিগত সম্পদ
মূল্যবান অলংকার, সোনা, রুপা ইত্যাদি (পরিমাণ/মূল্য)
ব্যাংকে জমা, ফিক্সড, সঞ্চয়ী, চলতি, ডিপিএস, বিশেষ জমা ইত্যাদি
শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, বন্ড, বীমা, প্রভিডেন্ট, ফান্ড ইত্যাদি
বৈদেশিক মুদ্রা, এফসি অ্যাকাউন্ট, বন্ড, টিসি, নগদ (বিনিময় হারে=টাকা)
জমাকৃত (পণ্য) মালামাল
জামানত হিসেবে জমা (যা ফেরত পাওয়া যাবে) অগ্রিম
পাওনা, ধার প্রদান, অগ্রিম ইত্যাদি হাতে নগদ
অন্যান্য
বাদঃ দেনা/ ঋন ইত্যাদি  মোট
মোট যাকাত যোগ্য সম্পদ

 

২। ব্যবসার হিসেব (একক মালিকানায়)
বিক্রয়যোগ্য মজুদ, উৎপাদিত মজুদ
প্রক্রিয়াধীন ও মজুদ কাঁচামাল, প্যাকিং সামগ্রী
পাওনা ও বাকি বিক্রি
জামানত ও অগ্রিম প্রদান
ব্যাংকের জমা (সব ধরনের জমা)
হাতে নগদ অন্যান্য
বাদঃ দেনা/ ঋণ ইত্যদি  মোট
মোট যাকাত যোগ্য সম্পদ

৩। যৌথ মালিকানা/ অংশীদারী ব্যবসার হিসেব
বিক্রয়যোগ্য মজুদ, উৎপাদিত মজুদ
প্রক্রিয়াধীন ও মজুদ কাঁচামাল, প্যাকিং সামগ্রী
পাওনা ও বাকি বিক্রি
জামানত ও অগ্রিম প্রদান
ব্যাংকের জমা (সব ধরনের জমা)
হাতে নগদ অন্যান্য
বাদঃ দেনা/ ঋণ ইত্যদি  মোট
মোট যাকাত যোগ্য সম্পদ

আপনার অংশ …………….. হিসেবে মোট

 

৪। শিল্প/ ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত যাকাতযোগ্য সম্পদ
সর্বমোট যাকাতযোগ্য সম্পদ (১+২+৩+৪)
যাকাত ২.৫%

 

লেখকঃ শাহ্ সাইফুল আলম পান্নু

সর্বশেষ আপডেটঃ ৪:০৬ অপরাহ্ণ | জুন ২৪, ২০১৭