| রাত ১০:১৩ - বৃহস্পতিবার - ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

ময়না দ্বীপ হতে পারে ময়মনসিংহের আকর্শনীয় বিনোদন কেন্দ্র

লোক লোকান্তরঃ   ময়মনসিংহ শহরের অতি নিকটেই জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দুরত্বে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ মোড়ের দক্ষিণে গৌরিপুরের ভাংনামারি ইউনিয়নের অনন্তগঞ্জ বাজার সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত ব্রহ্মপুত্রের দু’টি ধারা দু’দিকে বেশ কিছুদুর গিয়ে আবার একই ধারায় মিলিত হয়েছে। এর মাঝে তৈরি হয়েছে একটি বৃহৎ ব-দ্বীপের। এই দ্বীপটিকে সবাই ময়নার চর বলে ডাকতো।

 

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাংস্কৃতিক দলের সদস্যরা ২০১৫ সালের ঋতু ভ্রমন ও বনভোজনের জন্য কাছাকাছি কোন জায়গা খুজছিল। অনেক খোজা খুজি করেও ঠিক যুতসই কোন স্থান পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে সিদ্ধান্ত হলো ময়নার চরে বনভোজনের।

 

কিন্তু চর শব্দটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেজায় আপত্তি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা ইউনিটের ইনচার্জ লেখক ও সংস্কৃতি কর্মী এম রবিউল ইসলামের। তিনি সকলের মাঝে নানাবিধ কারন ব্যাখ্যা করে এর নতুন নামকরন করলেন ময়না দ্বীপ। সেই থেকেই স্থানীয় মানুষের মুখে ময়না দ্বীপের প্রচলন।

 

২০১৭ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ, নির্জন দুপুরে নৌকা ভর্তি একদল মানুষ ভেসে যাচ্ছে ব্রহ্মপুত্রের বুকের উপর দিয়ে। নৌকা থেকে অনেক দুর পর্যন্ত ভেসে আসছে কোরাশ কন্ঠে গান, আবৃত্তি, হইচই এর শব্দমালা। তারা ক্রমশ ভেসে যাচ্ছে দক্ষিণ থেকে আরো দক্ষিণে। কেউ জানে না তারা কোথায় যাচ্ছে ! তবে জানে মাত্র দুইজন, নৌকার মাঝি ও এই অভিযাত্রী দলের দলনেতা।

ছবিঃ ময়না দ্বীপ

 

মাথার উপরের তীব্র রৌদ্রতেজও শিরশিরে দখিণা ফাল্গুনি বাতাশে মনে প্রানে শীতলতার পরশ বুলিয়ে যায়।

 

অভিযাত্রী দলের সকলের মনে প্রানে দোল দিয়ে যায় শহর নগরের কোলাহল ছেড়ে খনিকের জন্য নির্জনবাসের সুযোগ লাভের ব্যাকুলতায়।

 

নৌকাটি ঘন্টা দেড়েক বয়ে চলার পর গিয়ে থামে কাংখিত সেই আরশিনগরে। না ঠিক নগরে নয়। ব্রহ্মপুত্রের দুই দিক বিভক্ত হয়ে যাওয়ার পরে ভরে ওঠা গাছ-পালায় সুশোভিত এক বৃহৎ বদ্বীপে। এরই নাম ময়না দ্বীপ।

 

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইয়ের পাঠক,শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী,স্বেচ্ছাসেবক ও শুভানুধ্যায়ীরা মিলে ৪০ জনের অধিক একটি দল নিয়ে তিনি ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ঋতু ভ্রমণ ও বনভোজন করে আসেন ময়না দ্বীপ থেকে।

ছবিঃ ময়না দ্বীপ

 

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা ইউনিট নিয়মিত আয়োজন করে ঋতু ভ্রমনের। এরই অংশ হিসেবে গত ২৩ ফাল্গুন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠক-পাঠিকা,শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী, স্বেচ্ছাসেবক ও শুভানুধ্যায়ীরা এবার দ্বিতীয় বারের মত গিয়েছিলেন ময়না দ্বীপে। হ্যা ময়না দ্বীপেই। না এটা মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত কুবের কপিলার ময়না দ্বীপ নয়।

 

সেখানে ছিল সাহিত্য আড্ডা, স্বরচিত কবিতা ও লেখা পাঠ, কবি রোকসানা আফরিনের কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, নানান ধরনের খেলাধুলা। এটি তখন ময়মনসিংহ শহরের পরিচিত মহলে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া জাগায়।

 

এবারো ০৭ মার্চ ২০১৭ মঙ্গলবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা ইউনিট তাদের সাংস্কৃতিক কর্মী,লেখক,কবি,শিল্পী,স্বেচ্ছাসেবক ও শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে নিয়মিত ঋতু ভ্রমন, সাহিত্য আড্ডা ও বনভোজনের জন্য বেছে নেয় ময়না দ্বীপ।

ছবিঃ ময়না দ্বীপ পরিদর্শনকালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা ইউনিট।

 

এবারো দিনভর নির্মল আড্ডা,গান,আবৃত্তি, সাহিত্য আড্ডা,বইয়ের মোড়ক উন্মোচন,ফটোগ্রাফি,বনভোজন ও নানান ধরনের বিনোদনের মধ্য দিয়ে উৎযাপন করে আসে।

 

ময়মনসিংহ শহরের এতটা নিকটে প্রকৃতির কোলে বনভোজনের মত নিরিবিলি এত সুন্দর জায়গা আর একটিও নেই। তাই এটি হতে পারে চমৎকার একটি বিনোদন কেন্দ্র। প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রেখে হালকা কিছু অবকাঠামো তৈরি করে যদি একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এটিকে গড়ে তোলা যায় তবে ময়মনসিংহের পর্যটন ক্ষেত্রে ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে ময়না দ্বীপ।

 

ময়না দ্বীপকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের কাছে কিছু প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পেশ করেছে লেখক।

 

লেখক মনে করেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন ময়না দ্বীপটি পরিদর্শন করে প্রস্তাব অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহন করলে ময়মনসিংহ বাসীর নতুন বিনোদন কেন্দ্ হতে পারে এই ময়না দ্বীপ এবং ময়মনসিংহের গৌরব তালিকায় যুক্ত হবে আরো একটি উপাদান।

 

ময়না দ্বীপ যাওয়ার উপায়:
ময়মনসিংহ শহরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কের সামনে থেকে, কাচারি ঘাট (হিমু আড্ডা রেষ্টুরেন্ট) থেকে কিংবা থানার ঘাট (কোতয়ালি থানার সামনের ঘাট) থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া নিয়ে চলে যাওয়া যায় ময়না দ্বীপ।

 

শুকনো মৌসুমে পার্ক কিংবা কাচারি ঘাট থেকে গেলে সময় লাগবে দেড় ঘন্টার মত। আর থানার ঘাট থেকে গেলে পঞ্চাশ মিনিট থেকে এক ঘন্টা। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ঘাট (ভিসির বাস ভবনের পিছনের ঘাট) থেকে ২০-৩০ মিনিটের মত।

 

এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ মোড়ের ঘাট থেকে কয়েক মিনিটের পথ। যাওয়া যাবে বর্ষা মৌসুমে বা নদীতে পানি থাকলে নৌকায়। আর শুকনো মৌসুমে পানি কম থাকলে পায়ে হেটেই চলে যাওয়া যায় ৫-১০ মিনিটে।

 

জয়নুল আবেদিন পার্ক বা কাচারি ঘাট থেকে ৪০-৫০ জন যাওয়া যায় এমন একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া পড়তে পারে সারাদিনের জন্য ১৫০০-২০০০ টাকার মত। আর ছোট নৌকা হলে ৮০০-১২০০ টাকার মত।

 

ছবিঃ ময়নার দ্বীপ থেকে ফেরার পথে সূর্যাস্তের দৃশ্য।

 

এছাড়াও সড়ক পথে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ মোড় গিয়ে পায়ে হেটেই ঘাটে চলে যাওয়া যায়। ঘাটে দাড়িয়ে দক্ষিণ দিকে তাকালেই চোখে পড়বে গাছ-গাছালি ঘেরা উচু টিলা ও জঙ্গলের মত একটা কিছু। এটাই ময়না দ্বীপ। পানি না থাকলে ৫-৭ মিনিট পায়ে হেটেই উঠে যাওয়া যাবে দ্বীপে।

 

তবে সড়ক পথের চেয়ে নদী পথই বেশি রোমান্স কর। নৌকায় যাবার পথে পথে পাওয়া যাবে প্রচুর ফটোগ্রাফির মত দৃশ্য। একটি সড়ক সেতু ও একটি রেল সেতুর নিচ দিয়ে যেতে যেতে কখনো চোখে পড়বে শত শত নৌকার সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকা, নদী কেন্দ্রিক মানুষের জীবন-যাপন, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা, কখনোবা পানকৌড়ি বা চিলের ঝাকের মাছ শিকারের চেষ্টা।

 

আবার হাজার হাজার হাসের ঝাক নদীতে বিচরনের দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করে ছাড়বেই। আর ফেরার পথে সুর্যাস্তের দৃশ্য দেখে ক্ষনিকের জন্য মনে হবে আপনি কুয়াকাটায় এসে পড়েছেন।

 

ময়না দ্বীপের আশে-পাশে কোন প্রকার খাবার দাবারের দোকান পাওয়া যাবেনা। সারাদিন থাকতে চাইলে খাবার সাথেই নিয়ে যেতে হবে। অথবা প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী ও বাবুর্চি নিয়ে গেলে মাটি খুঁড়ে চুলা বানিয়ে সেখানেও রান্না করে খাওয়া যাবে।

 

তবে বর্ষাকাল হলে আর বৃষ্টির আশংকা থাকলে সেই ঝুকি না নেওয়াই ভালো। কারন সেখানে কোন প্রকার অতিথি ছাউনি নেই। তাই বর্ষাকালে গেলে এসব বিষয় মাথায় রেখেই যেতে হবে। আর শুকনো মৌসুমে এত ভাবনার কিছু নেই। দিনভর আড্ডা মাস্তি করে ঘুরে আসা যাবে নিশ্চিন্তে।

 

 

লেখকঃ

এম রবিউল ইসলাম,

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা ইউনিট।

 

[প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রকাশিত মতামতের সঙ্গে দৈনিক লোক লোকান্তর -এর সম্পাদকীয় নীতিমালার মিল নাও থাকতে পারে।]

সর্বশেষ আপডেটঃ ১:০৫ অপরাহ্ণ | মার্চ ১৪, ২০১৭