মনোনয়ন যথাযথ না হওয়াই শেরপুর সদরে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি

শেরপুর প্রতিনিধি: ২৪ এপ্রিল ২০১৬, রবিবার,
তৃতীয় ধাপে গত ২৩ এপ্রিল শনিবার অনুষ্ঠিত শেরপুরের সদর উপজেলার ছয় ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে। নির্বাচনে ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে মাত্র দুটিতে আ. লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। তিনটিতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ও একটিতে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।
প্রার্থী মনোনয়ন যথাযথ না হওয়ায় এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষে প্রশাসনের কঠোর মনোভাবের কারণে সদর উপজেলার চার ইউনিয়নে আ. লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। জনমনেও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার কামারেরচর ও চরমোচারিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের যথাক্রমে মো. হাবিবুর রহমান ও মো. খোরশেদুজ্জামান; চরশেরপুর, লছমনপুর ও বলাইয়েরচর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ (স্বতন্ত্র প্রার্থী) যথাক্রমে মো. আনোয়ার হোসেন, মো. সেলিম মিয়া ও মো. ইয়াকুব আলী এবং চরপৰীমারী ইউনিয়নে জাপার (এরশাদ) প্রার্থী মো. আব্দুর রউফ চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। অর্থাৎ ছয় ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র দুটিতে আ. লীগের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থীরা বিজয়ী প্রার্থীদের চেয়ে অনেক কম ভোট পেয়েছেন। কয়েকটি কেন্দ্রে সহিংস ঘটনা ছাড়া প্রায় সুষ্ঠুভাবে এসব ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটারদের উপসি’তি ও উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল লৰ্যণীয়। প্রতিটি কেন্দ্রে দিনভর ভোটারদের দীর্ঘ সারি (লাইন) দেখা গেছে।
ফলাফল বিশেৱষণ করে দেখা যায়, কামারেরচর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আ. লীগের হাবিবুর রহমান পেয়েছেন দশ হাজার ৪০১ ভোট এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মঞ্জুরুল মোর্শেদ পেয়েছেন দুই হাজার ৬২৯ ভোট। চরমোচারিয়া ইউপিতে আ. লীগের খোরশেদুজ্জামান পেয়েছেন তিন হাজার ৫৭১ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী আ. লীগের বিদ্রোহী সাব্বির আহাম্মদ পেয়েছেন তিন হাজার ৪৬৫ ভোট। লছমনপুর ইউপিতে আ. লীগের বিদ্রোহী সেলিম মিয়া পেয়েছেন সাত হাজার ৯৩৮ এবং আ. লীগের মিনহাজ উদ্দিন মিনাল পেয়েছেন পাঁচ হাজার ১২ ভোট। বলাইয়েরচর ইউপিতে আ. লীগের বিদ্রোহী ইয়াকুব আলী আট হাজার ৬৫২ এবং আ. লীগের দুলাল উদ্দিন মোলৱাহ পেয়েছেন আট হাজার ৫০৫ ভোট। চরপৰীমারী ইউপিতে জাপার আব্দুর রউফ পেয়েছেন সাত হাজার ৫৫৭ এবং আ. লীগের আকবর আলী পেয়েছেন সাত হাজার ৫১০ ভোট। চরশেরপুর ইউপিতে বিজয়ী আ. লীগের বিদ্রোহী আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ছয় হাজার ৩০৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ. লীগের আরেক বিদ্রোহী খন্দকার হাবিবুর রহমান পেয়েছেন পাঁচ হাজার ১৬৬ ভোট। বিএনপির ফরহাদ আলী দুই হাজার ৮৭০ এবং আ. লীগের প্রার্থী খন্দকার নজরুল ইসলাম দুই হাজার ৬৭০ ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ এ ইউনিয়নে আওয়ামী প্রার্থীর অবস্থান চতুর্থ। মূলত. বিদ্রোহী প্রার্থীদের শক্ত অবস্থানের কারণেই চারটি ইউনিয়নে আ. লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা (সাবেক সহ-সভাপতি) ফকির আখতারুজ্জামান আজ রোববার বলেন, চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়ন সঠিক ও যথাযথ না হওয়ায় নির্বাচনে দলের এ ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে। দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের আগে সংশিৱষ্ট নেতৃবৃন্দের উচিত ছিল প্রার্থী সম্পর্কে অধিকতর যাচাই-বাছাই করা এবং আরও সচেতন হওয়া। তবে তিনি বলেন, আ. লীগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ইতিবাচক মনোভাব আছে। সে কারণেই ভোটাররা আ. লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছেন।
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল বলেন, প্রার্থী মনোনয়ন যথাযথ ও সঠিক ছিল। দলের কেন্দ্রিয় নির্দেশনানুযায়ী তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। কিন’ স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পৰে ইতিবাচক এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বৈরী আচরণের কারণেই আ. লীগের চার প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন বলে তিনি জানান।
জেলা প্রশাসক এ এম পারভেজ রহিম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রশাসন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে নির্বাচন পরিচালনা করেছে। জনগণ যাকে ভোট দিয়েছেন তিনিই নির্বাচিত হয়েছেন।