শেরপুরে ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও কেন্দ্র দখল ও গুলি বর্ষণ: আহত-৩২,
শেরপুর প্রতিনিধি:২৩ এপ্রিল ২০১৬, শনিবার
ব্যাপক সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও কেন্দ্র দখলের চেষ্টার মধ্য দিয়ে আজ ২৩ এপ্রিল শনিবার শেরপুরের সদর উপজেলার ছয় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সহিংসতায় কমপৰে ৩২ জন আহত হয়েছেন। পরিসি’তি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সটগানের ৮০-৯০ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই করার অভিযোগে কামারেরচর ইউনিয়নের ৭ নং চর সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ১৩ জনকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
সরেজমিনে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে এবং পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স’ানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার সকাল আটটায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সদর উপজেলার ছয় ইউনিয়নের ভোট গ্রহণ শুর্ব হয়। ভোটারদের উপসি’তি ও উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল লৰ্যণীয়। কিন’ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থীরা কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে ব্যালট পেপার-বাক্স ছিনতাই বা জাল ভোট দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন।
এরই অংশ হিসেবে আজ বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সাধারণ সদস্য প্রার্থী মোশাররফ হোসেন ও মন্ডল মিয়ার সমর্থকরা দা, লাঠি, ফালা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে কামারেরচর ইউনিয়নের ৭ নং চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা চালান। এ সময় তাঁরা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের অবর্বদ্ধ করে ব্যালট পেপারসহ চারটি ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে যান। পরিসি’তি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এই কেন্দ্রে ২৪ রাউন্ড সটগানের গুলি ছুঁড়ে। এ সময় আইন শৃঙৰলা রৰা বাহিনীর সদস্যরা ওই কেন্দ্রে গিয়ে কর্মকর্তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ বিকেলে বলেন, কেন্দ্রটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
বেলা ১২টার দিকে কামারেরচর ইউনিয়নের ডোবারচর দৰিণ নামাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাধারণ সদস্য প্রার্থী বেলায়েত হোসেন ও সাইফুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এতে দশজন আহত হন। পরিসি’তি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশ দশ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। আহতদের মধ্যে আবদুল মমিন (৫৫), হামিদুর রহমান (২৮), চাঁন মিয়া (৩৩) ও জোনাকি বেগমকে (৩০) জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুপুর পৌনে একটার দিকে চরশেরপুর ইউনিয়নের হের্বয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই সাধারণ সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। পরিসি’তি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাত রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। এতে হের্বয়া বালুঘাট গ্রামের ইয়ানুছ আলীর ছেলে মো. আকরাম হোসেন (৩৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে গুর্বতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস’ায় তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় প্রায় এক ঘন্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে।
বেলা ১২টার দিকে চরশেরপুর নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক সাধারণ সদস্য প্রার্থীর সমর্থকরা ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে আইন শৃঙৰলা বাহিনীর সদস্যরা ১৪ রাউন্ড গুলি ছুঁড়েন। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
বেলা ১২টার দিকে কামারেরচর ইউনিয়নের লতারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাধারণ সদস্য প্রার্থী আখতার ও আব্দুলের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ ঘটে। এতে পাঁচজন আহত হন। আহতদের মধ্যে লতারিয়া গ্রামের আব্দুর রশীদ (৩৫) ও আজিম উদ্দিনকে (৫৫) জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বেলা দুইটার দিকে চরশেরপুর ইউনিয়নের চরশেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সাধারণ সদস্য প্রার্থী হানিফ উদ্দিন, শহিদুল ইসলাম ও মো. লিটন মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দশজন আহত হন। আহতদের মধ্যে চরশেরপুর নিজপাড়া গ্রামের শমসের আলী (৫৫), হেকমত আলী (৩০), হোসনে আরা (৪০) ও রনি মিয়াকে (১৬) জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বেলা দুইটার দিকে কামারেরচর ইউনিয়নের ৬ নং চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সাধারণ সদস্য প্রার্থী মুক্তা মিয়া ও মির্জা আলীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হন। এদের মধ্যে ৬ নং চর গ্রামের মো. হাসান (৩২) ও সরজল মিয়াকে (৫০) জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিকেল তিনটার দিকে লছমনপুর ইউনিয়নের ইলশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গেলে সাধারণ সদস্য প্রার্থী মো. শাহ আলমকে (৩৮) প্রতিপৰের লোকজন মারধর করেন। তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল ওয়ারীশ বলেন, কয়েকটি কেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পরিসি’তি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইন শৃঙৰলা রৰা বাহিনী ৮০-৯০ রাউন্ড সটগানের রাবার বুলেট নিৰেপ করেছে।