শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের প্রতি সহানুভূতিশীলদের তীব্র সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০১৬ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারে যারা ব্যথা পেয়েছেন এবং সমালোচনা করছেন তাদের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে এ ধরনের ব্যক্তিরা অপরাধের কর্মকান্ড থেকে রেহাই পেতে পারে না। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আজ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘অপহরণ ও হত্যার মতো একটি জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে যখন এদের গ্রেফতার করা হয় তখন কিভাবে মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলা হয়?’
তিনি বলেন, ‘আমি জানি না তারা কি ধরনের সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন। তারা গ্রেফতারের সমালোচনা করেছেন, কিন্তু এফবিআই এদের মুখোশ উন্মোচন করা সত্ত্বেও এসব সাংবাদিকের এতো বড় চক্রান্ত সম্পর্কে তারা কিছুই বলেননি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি বিদেশী রাষ্ট্রে ও আদালতে এ ধরনের চক্রান্তের তাদের নাম আসার পর এসব অভিযুক্তদের লজ্জা পাওয়া উচিত। এদেরকে আইনের আওতায় আনায় সরকারের সমালোচনার পরিবর্তে চক্রান্তকারীদের নিন্দা করা উচিত ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি তারা চক্রান্তকারীদের চক্রান্তকারী হিসেবে বিবেচনা করতে রাজি নন। তারা এ ভয়ঙ্কর চক্রান্তের জন্য তাদের বিচারেরও পক্ষপাতি নন।’
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালনে দু’দিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার (বর্তমানে মেহেরপুর) মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। এ উপলক্ষে দিবসটি পালন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, অপরাধীকে ধরায় এখন যেমন সমালোচনা হচ্ছে ঠিক একই কাজ হয়েছিল ৭৫ সালে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়। সেই মানবাধিকার লংঘনের পর ২১ বছর আমরা ভোগান্তির শিকার হয়েছি। এখনো তারা আমাদের সমালোচনা করছে। আমাদের বিরুদ্ধে জঘন্য চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের পর মানবাধিকারের কথা বলা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তাদের তদন্তে এই চক্রান্তকারীদের নাম পেয়েছে। তিনি এই দুই সাংবাদিককে গ্রেফতারের জন্য তাঁর সরকারকে অভিযুক্ত করার পরিবর্তে এফবিআই’র সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও মতিয়া চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম অংশ নেন।
এছাড়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট কামরুল ইসলাম, সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি একেএম রহমতুল্লা এমপি ও আবুল হাসনাত, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এবং শাহ আলমও এ আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা প্রচেষ্টার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কয়েকজন বিএনপি নেতার জড়িত থাকার ব্যাপারে এফবিআই রিপোর্টের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতারা তাদের শাসনামলে বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন এবং এসব অর্থ দিয়ে এখন তারা আওয়ামী লীগের ক্ষতি করার জন্য এফবিআই কর্মকর্তাদেরকে ভাড়া করছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সরকার সবসময় কোন অন্যায় দেখলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আমরা কখনো কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনা এবং আমরা ভবিষ্যতেও কখনো তা করবো না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিটি বাড়িতে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দেয়া এবং ন্যায়, জনগণের মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়েছিল। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা হয়েছিল এবং এই ঘোষণা অনুযায়ী সরকার কাজ করছিল এবং সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জনগণের ২৩ বছরের নিরলস সংগ্রামের ফসল হচ্ছে এই বাংলাদেশ। স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে গড়ে তুলেছিলেন এবং অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনের লক্ষ্যে প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি হার অর্জন করেছিল। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় দেশ চলতি বছরেও একই প্রবৃদ্ধি হার অর্জন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনী ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করেছিল এবং তারা ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তাতে সফল হয়েছিল। তারা কখনো চায়না বাংলাদেশ এগিয়ে যাক।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন পরিবারই তাদের নির্যাতন ও হুমকি-ধামকি থেকে রক্ষা পায়নি। তারা দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার জন্য জনগণ তাদের হিংসার শিকার হয়েছিল। সাবেক অর্থমন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার ও আইভি রহমান তাদের সবচেয়ে জঘন্য নৃশংসতার শিকার।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের পথে রয়েছে, কারণ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি এখন ক্ষমতায়। তিনি বলেন, দেশ দীর্ঘ দিন ধরে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির দ্বারা চালিত হয়েছে, এদের অধীনে একটি দেশ কখনো সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে না।
দেশের চলমান উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাঁচ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্য অবস্থা থেকে মধ্যম আয়ের পর্যায়ে ওঠে এসেছে। আওয়ামী সবসময় বঙ্গবন্ধুর নীতি অনুসরণ করে যাতে পশ্চাদপদ জনগণের মুখে হাঁসি ফোটানো সম্ভব হয়। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুজিবনগরে দেশের প্রথম সরকারের গৃহীত শপথের সঙ্গে এই নীতি খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ।