ঈশ্বরগঞ্জে চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন পল্লীবিদুতে সংযোগ প্রত্যাশিরা

ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন পল্লীবিদ্যুতে আবেদনকারীরা। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছানোর সরকারি পরিকল্পনার প্রধান অন্তরায় দালাল চক্র। হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চলছে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস-৩ এর ঈশ্বরগঞ্জ সাব-জোনাল অফিস। দালালের কাছে যেন সব বন্ধক রেখেছেন ককর্মকর্তারা। যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে দালালরা। দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেও বিষয়টি সরেজমিন খতিয়ে দেখার দুঃসাহস তাদের নেই। তাই ইলেকট্রিশিয়ান রূপী দালাল ও এলাকাভিত্তিক দালাল সদস্যদের কাছে জিম্মি সংযোগ প্রত্যাশীরা। এতে বিদ্যুৎ পেতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ কাক্ষিত সেবা পাওয়ায় বড় বাধাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে দাপুটে দালাল চক্র। তাদের খপ্পরে পড়ে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন আবেদনকারীরা।সংযোগ প্রত্যাশিদের অভিযোগে জানা যায়, সরকারি হিসেব অনুযায়ী একটি নতুন সংযোগ পেতে সর্বোচ্চ খরচ হয় মাত্র ৮৫০ টাকা। অনলাইনে আবেদন করলে ১০০টাকা, অফিসে আবেদন জমা বাবদ ফি ১০০টাকা, মিটার জামানত ৬০০টাকা, সদস্য ফি ৫০টাকা। অথচ নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত ৫ থেকে ১০হাজার টাকা দিতে হচ্ছে তাদের। সুযোগ বুঝে ২০ থেকে ২৫হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে দালাল চক্র।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, পাঁচ বছর পূর্বে উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের ধনিয়াকান্দি গ্রামের সংযোগ প্রত্যাশি মৃত আঃ রহমানের ছেলে হেলাল, মৃত উমেদ আলীর ছেলে ফয়জদ্দিন, মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে আজিজুল ও হাসিম উদ্দিনের ছেলে উজ্জলের কাছ থেকে একটি মসজিদসহ ৫টি মিটারের আবেদন বাবত জন প্রতি ২৫হাজার করে ১লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় ইলেকিট্রেশিয়ান আব্দুল্লাহ। টাকা নেওয়ার পর ৫বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌছেনি সংযোগ প্রত্যাশিদের ঘরে। একই এলাকায় বছর-ছ’মাস আগে সংযোগ প্রত্যাশি শব্দল আলীর ছেলে হাছেন আলী, আবুল কাসেমের ছেলে শহিদুল্লাহ, মৃত রস্তোম আলীর ছেলে মতিন, মৃত আব্দুলের ছেলে সাইফুল, আব্দুল হেকিমের ছেলে রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ওই ইলেকিট্রেশিয়ান জন প্রতি ২০হাজার টাকা করে মোট ১লক্ষ টাকা এবং মৃত আঃ মোতালেবের ছেলে স্বপন মিয়া, মৃত চান্দের বাপের ছেলে আমীর উদ্দিন, মৃত আমছর আলীর ছেলে ছফির উদ্দিনের কাছ থেকে জন প্রতি ২৫হাজার করে আরো ৭৫হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। তারপরও মিটারের জন্যে অফিসে আবেদন করা হয়েছে কিনা সংযোগ প্রত্যাশিরা তাও জানেন না। এখন পর্যন্ত টাকার বিনিময়ে বিশ্বাস ছাড়া আর কোন ডকুমেন্ট তাদের হাতে পৌছেনি বলে ভোক্তভুগিরা জানান। সংযোগ প্রত্যাশি হেলাল উদ্দিন বলেন, যে টাকা তাদের হাতে দিয়েছি সে টাকার কেরোশিন পুড়ালে বাকী জীবনে শেষ হতো না। তার পিছনে শ্রম দিতে গিয়ে কয়েক জোড়া পায়ের সেন্ডেল পর্যন্ত ক্ষয় করেছেন। ৩টি খুঁটি ছাড়া আর কোন মালামাল তাদের কাছে পৌছেনি।
হাছেন আলী বলেন, মনে হয় মৃত্যুর আগে আর বিদ্যুতের আলো দেখে যেতে পারবনা। বিদ্যুতের কথটা উচ্চারণের সাথে সাথে টাকাটা গুনতে হয়। একটি খুটি কয়েক হাত এদিক সেদিক করার জন্যেও মূল টাকার বাহিরে জন প্রতি ১৮শ টাকা দিতে হয়েছে।
ইলেক্ট্রেশিয়ান আব্দুল্লাহ জানান, আবেদনকারীদের টাকা তারা নিজেরাই অফিসে গিয়ে জমা দিয়েছেন। সরাসরি তিনি কোন টাকা নেননি। তবে আবেদনকারীরা জানিয়েছেন তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় চেয়ারে বসে সমস্ত টাকাই তিনি নিয়েছেন। এছাড়া হিসেবের বাহিরে অফিসে আসা যাওয়ার ভাড়াটা পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে আদায় করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে মযমনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস-৩ এর ঈশ্বরগঞ্জ সাব-জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) গোলজার আহমেদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট ইলেক্ট্রেশিয়ানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে। সংযোগ প্রত্যাশিরা যদি চায় তবে তাদের সবধরনের সহায়তা দেয়া হবে।