ইউপি নির্বাচন নেত্রকোনায় নির্বাচনী লড়াইয়ে তিন নারী
কবীর হোসেন চান মিয়া, নেত্রকোনা, ১৩ এপ্রিল ২০১৬, বুধবার,
ঘর গৃহস’ালী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে, চাকুরীতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা কাজ করছে সমান তালে। সামাজিক কর্মকান্ড থেকে শুরু করে সব কিছুতেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। জনসেবা করতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরাসরি পুরুষের সাথে লড়াইয়ের মাঠে খুব কমই দেখা যায় নারীদের। এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেলার তিন উপজেলায় তিনজন নারী সরাসরি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধী হয়ে লড়ছেন অন্য দশজনের মত পুরুষের সাথে। কেউ পারিবারিক ঐতিহ্য আবার কেউবা স্বামী কিংবা বাবা সুনামকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তারা দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন ইউনিয়নের হাট বাজার ও বিভিন্ন গ্রাম।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার ১২ইউনিয়নে সর্বশেষ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও বিভিন্ন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনী মাঠে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার রৌহা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন পারভীন চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। তিনি বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মো. আবদুল বারী ওরফে বারী সিদ্দিকীর সহধর্মীনি, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ওমর ফারুকের বোন এবং মুক্তিযোদ্ধা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভাষা সৈনিক ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম নূরুল হুদার মেয়ে। তিনি সদর উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্যে একমাত্র নারী আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি তার স্বামী ও বাবার সুনাম এবং পরিবারের ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। অন্যদিকে জেলার কেন্দুয়ার ১৩ ইউনিয়নে আগামী ২৩ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলার চিরাং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সালমা আক্তার দলীয় প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। তার সাথে রয়েছেন দলীয় বিদ্রোহী হয়েছেন গোলাপ মিয়া। বিএনপি থেকে রয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাহবুব আলম খান জরিপ ও ওই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান ভূইয়া লিটন। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে নির্বাচনে জেতার জন্য প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে একমাত্র নারী প্রার্থী। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা মো. নূরুল ইসলাম ভূইয়ার স্ত্রী। অন্যান্য প্রার্থীদের পাশাপাশি সালমা আক্তার নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন। সালমা আক্তার ১৯৯২ সালে সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রথমবার ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ২০০৩ সালে আবারও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করে দ্বিতীয়বার ফের ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দুই বারেই তিনি জেলার মধ্যে একমাত্র নারী চেয়ারম্যান। আগামী ৭ মে জেলার কলমাকান্দার আট ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলার সীমান-বর্তী রংছাতি ইউনিয়নে ওই উনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান স’ানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলামের স্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা তাহেরা খাতুন এবার চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তার সাথে দলীয় বিদ্রোহী হয়েছেন ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি আফতাব উদ্দিন ও স’ানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী মীর আইয়ুব নবী। বিএনপি থেকে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান পাঠান ওরফে বাবুল। নিজ দল ও অন্য দলের শক্তিশালী প্রার্থীর সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়ে যাচ্ছেন এই নারী। তিনি শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে স্বামীর ন্যায় সমাজ সেবা করতে স’ানীয় সরকার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। স্বামী নজরুল ইসলামের রেখে যাওয়া সুনামকে কাজে লাগিয়ে বিজয়ী হতে চান তাহেরা খাতুন।
জেলার তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে এই তিন নারী পুরুষদের সাথে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন- দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এবং হাট বাজারে যাচ্ছেন। কথা বলছেন এলাকার সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের সঙ্গে।