| বিকাল ৩:২৭ - সোমবার - ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ - ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ত্রিশালের ইউএনও’র জানাযা ও দাফন সম্পন্ন, ত্রিশাল ও শ্রীপুরে শোকের ছায়া

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি, ৩০ মার্চ ২০১৬, বুধবার,
আমার রাশেদুলকে আমি নিজ হাতে গোসল করাবো, সে আমার হাত ছাড়া গোসল করতে পারেনা, রাশেদুল কখনো আমাকে রেখে চলে যেতে পারেনা। সে যেখানে থাকবে আমিও সেখানেই থাকবো। সে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে আমাদের কিছুৰণ অপেক্ষা করতে বলেন কিন্তু সেই অপেক্ষা আর কখনো শেষ হবে না। আবেগ আর কান্না জড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলে বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছিল  সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামের (৩৫) স্ত্রী আকিফা বিনতে জলিল। ৩ ভাই এক বোনের পরিবারে মেজু ছিল ইউএনও রাশেদুল ইসলাম। ছোট বোন, বড় ও ছোট ভাই এবং তাঁর বৃদ্ধ পিতা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বাকর্বদ্ধ। তাদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠে।
আজ বুধবার গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের লোহাগাছ এলাকায় গিয়ে পাওয়া যায় এমন তথ্য। অপরদিকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ত্রিশালের দরিরামপুর ঈদগাহ মাঠে প্রথম জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়ে রাত ১২টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আজ বুধবার সকাল ১১টায় নিহত রাশেদুল ইসলামের বাল্য বিদ্যাপীঠ শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২য় জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ৩টার দিকে নিজ বাড়ী শ্রীপুর পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের লোহাগাছা এলাকার ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে দাদা-দাদীর কবরের পাশে চির নিন্দ্রায় শায়িত করা হয় ত্রিশালের ইউএনও রাশেদুল ইসলামকে।
নিহত ইউএনও রাশেদুল ইসলামের শ্যালক হাফেজ শরীফুল ইসলাম জানান, প্রায় চার বছর আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার লোহাগাছা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিৰক গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ইউএনও রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে বরগুনার বেতাগী উপজেলার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি আবদুল জলিলের মেয়ে আকিফা বিনতে জলিলের বিয়ে হয়। তাঁদের কোনো সন্তান নেই। গত সোমবার দুই পরিবারের লোকজন ত্রিশালে বেড়াতে আসেন। মঙ্গলবার বিকেলে তাঁদের ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। বিকেলে অফিস শেষে ইউএনও বাসায় এলে তাঁরা ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ সময় ইউএনও সরকারি কাজে বাইরে যাচ্ছেন জানিয়ে তাঁদের একটু অপেৰা করতে বলেন। কিছুৰণ পর ইউএনওর গাড়ির চালক গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে দ্র্বত বেগে বেরিয়ে গেলে তাঁদের সন্দেহ হয়। এরপর তাঁরা ইউএনওর মোবাইলে ফোন করলে অপরিচিত এক ব্যক্তি ফোনটি রিসিভ করেন এবং তাঁদের দুসংবাদটি জানান। পরে তাঁরা হাসপাতালে ছুটে এসে রাশেদুলকে মৃত দেখতে পান।

এ ঘটানার সংবাদ পেয়ে রাতেই ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার জি.এম সালাহ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মোস্তাকিম বিলৱাহ ফার্বকী, ময়মনসিংহ রেঞ্চের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা প্রশাসক মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী, পুলিশ সুপার মইনুল হক, সিভিল সার্জন গোলাম মোস্তফা, ত্রিশাল উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ জয়নাল আবেদীন, ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লুৎফুন্নেছা বিউটি, ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোখলেছুর রহমান সবুজসহ স’ানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ বাসায় ছুটে আসেন এবং জানাযায় অংশ গ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য; নিহত ইউএনও রাশেদুল ইসলাম ২৭ তম বিসিএস ক্যাডার হিসেবে যোগদান করেন। ইতিপূর্বে তিনি ময়মনসিংহ জেলা প্রশাষক কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ত্রিশালে প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করেন চলতি বছরের ২৮জানুয়ারী।  ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, ময়মনসিংহ-ত্রিশাল পথে চলাচলকারী ‘পদ্মা গেইটলক’ নামের ঘাতক বাসটিকে আটক করা হয়েছে। তবে পালিয়ে যাওয়ায় চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৯:৫৯ অপরাহ্ণ | মার্চ ৩০, ২০১৬