শেরপুরের নকলায় নয় ইউনিয়নের ৮১টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ : সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয়
শেরপুর প্রতিনিধি: ৩০ মার্চ ২০১৬, বুধবার,
দ্বিতীয় ধাপে আজ ৩১ মার্চ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে শেরপুরের নকলা উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন। এই নয় ইউনিয়নের ৮১টি ভোট কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে পুলিশ প্রশাসন। আর এ জন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস’া। তারপরও কয়েকজন প্রার্থী সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার নকলার গণপদ্দী, নকলা সদর, উরফা, গৌড়দ্বার, বানেশ্বরদী, পাঠাকাটা, টালকী, চরঅষ্টধর ও চন্দ্রকোনা ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩৩, সাধারণ সদস্য পদে ২৫৫ ও সংরৰিত নারী সদস্য পদে ১০৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নয়টি ইউপির মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ১৭ হাজার ২৮৩ জন। এর মধ্যে পুর্বষ ও নারী ভোটার যথাক্রমে ৫৭ হাজার ৮৭১ ও ৫৯ হাজার ৪১২ জন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৮১টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৪০ টি কেন্দ্র অধিক অধিক, ২৬ টি কেন্দ্র অধিক এবং ১৫ টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ এবং সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস’া।
পুলিশ সুপার মো. মেহেদুল করিম বলেন, শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য নয়টি ইউপিতে প্রায় চার শ পুলিশ, তিন পৱাটুন বিজিবি, ২৪ জন র্যাব ও এক হাজার ৩৭৭ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ নির্বাহী হাকিম ও বিচারিক হাকিমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতও সার্বৰণিক দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রশাসনের গৃহিত ব্যবস’া সত্ত্বেও উরফা ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আ. লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী। আ. লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর বির্বদ্ধে নানা হুমকি প্রদানসহ বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও একজন কর্মীকে আহত করার অভিযোগও করেছেন তাঁরা। বিদ্রোহী প্রার্থী নূরে আলম তালুকদার এবং বিএনপির প্রার্থী মো. র্বস্তম আলী আওয়ামী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রেজাউল হকের বির্বদ্ধে এসব অভিযোগ করেন। অবশ্য রেজাউল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে গত ২৯ মার্চ মঙ্গলবার মধ্যরাতে চন্দ্রকোনা ইউনিয়নে আ. লীগ ও আ. লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয়পৰের তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙ্গচুর করা হয় এবং আ. লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. কামর্বজ্জামানসহ উভয় পৰের ১৫ জন আহত হন। এ ঘটনার জন্য আ. লীগ প্রার্থী সাজু সাইদ সিদ্দিকী ও বিদ্রোহী প্রার্থী কামর্বজ্জামান পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। এ ঘটনার পর থেকে চন্দ্রকোনা ইউনিয়নে থমথমে অবস’া বিরাজ করছে।
আ. লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী কামর্বজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, পরাজয় নিশ্চিত জেনে আ. লীগ প্রার্থী সাজু সাইদ সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে তাঁর (সাজু সাইদ) নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তাঁকে মারধর ও তাঁর একটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙ্গচুর করেছেন। তিনি সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে আ. লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী সাজু সাইদ সিদ্দিকী বলেন, তাঁকে (কামর্বজ্জামান) মারধরের প্রশ্নই ওঠে না। বরং কামর্বজ্জামানের সমর্থকরা তাঁর (সাজু) কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা ও নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙ্গচুর করেছে। কামর্বজ্জামান তাঁর উচ্চ পদস’ সরকারি কর্মকর্তা ভাইদের নাম বলে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা করছেন। তাই তিনি (সাজু) সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।
অপরদিকে চন্দ্রকোনা ইউপির বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী হেলেনা আক্তার সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, প্রতিপৰের লোকজন তাঁকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। এতদসত্ত্বেও তিনি মাঠে আছেন এবং প্রতিকূল পরিসি’তি উপেৰা করে তিন পুর্বষ প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জেলা প্রশাসক এ এম পারভেজ রহিম বলেন, যে কোন মূল্যে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের জন্য প্রশাসন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নভাবে ভোট দিতে পারেন তার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস’া গ্রহণ করা হয়েছে।