আটপাড়ায় ইউ পি নির্বাচনে রেজাল্ট পাল্টে দিতে পারে আ’লীগ বিদ্রোহীরা
কবীর হোসেন চান মিয়া, নেত্রকোনা, ২৯ মার্চ ২০১৬, মঙ্গলবার,
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামী বৃহস্পতিবার জেলার আটপাড়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শেষ মূহুর্তে নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে। ওই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্ধীতায় নেমেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। বিদ্রোহীরা নির্বাচনী রেজাল্ট পাল্টে দিতে পারে। বিএনপিও মরিয়া হয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছে। দল মনোনীত প্রার্থীদের পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থীরা কোমড় বেধে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। রাত দিন বিরতিহীনভাবে গ্রাম থেকে গ্রাম পাড়া মহল্লা ও হাট বাজারে গণসংযোগ করছেন। বেকায়দায় পড়েছেন দল মনোনীত প্রার্থীরা। সাতটি ইউনিয়নের ছয়টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত সাতজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সাথে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন ৯জন। বিএনপিতে দুইটি ইউনিয়নে দল মনোনীত প্রার্থীর সাথে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। উভয় দলেই বেশ কয়েকজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানও রয়েছেন। এমনও দেখা যায় আওয়ামী লীগে এক ইউনিয়নে একাধিক বিদ্রোহী দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস’ান নিয়েছেন। শেষ মূহুর্তে ভোটাররা বিগত দিনের হিসেব নিকেষ মিলিয়ে দেখছেন।
আটপাড়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে জনজরিপে দেখা গেছে, উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বেকায়দায় আছেন। ওই সমস- ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীরা দল মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে গণসংযোগে এগিয়ে আছেন। তার মধ্যে লুনেশ্বর ইউনিয়নে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাহফুজুল ইসলাম শিরিন চাপের মধ্যে আছেন। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মীর মোশারফ হোসেন ওরফে স্বপন কিছুটা ভাল অবস’ানে আছেন। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সহ-সম্পাদক সাবেক ছাত্র নেতা মীর মেহেদী হাসান টিটুর ছোট ভাই। মেহেদী হাসান বলেন, আমি দল করি তাই দলের বাইরে আমার কোন কথা নেই। দল যাকে যোগ্য মনে করেছে তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। ওই ইউনিয়নে বিএনপি থেকে দল মনোনীত প্রার্থী হচ্ছেন- উপজেলা বিএনপির সদস্য ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জি এম হায়দার ওরফে শামীম। তার সাথে বিদ্রোহী হয়েছেন উপজেলা কৃষকদলের যুগ্ন আহ্বায়ক মোছাদ্দেক হোসেন রফিক।
উপজেলার সদর বানিয়াজান ইউনিয়নের দিকে দুই রাজনৈতিক দলেরই লোভ। কারন উপজেলার রাজনৈতিক কর্মকান- এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থেকে। সদর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় প্রার্থী হয়েছেন আটপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওই ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস রানা আনজু। তার সাথে বিদ্রোহী হয়ে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন আওয়ামী লীগ নেতা মুখলেছ পাঠান। আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর ভোট টানাটানিতে এখানে সুবিধে নিতে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন বিএনপি দলীয় মনোনীত প্রার্থী ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জেলা ও উপজেলা বিএনপির সদস্য মাসুম চৌধুরী। নির্বাচনে তার অবস’া ভাল দাবী করে তিনি বলেন, সরকার দলীয় প্রার্থীর লোকজন সাধারণ ভোটার ও বিএনপি দলীয় প্রার্থীল লোকজনকে নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। ইউনিয়নের চারিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রকে তিনি ঝুকিপূর্ন মনে করছেন। ওই কেন্দ্রে ভোট করচুপি হতে পারে। এ ব্যাপারে তিনি স’ানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস’া গ্রহনের জন্য লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।
স্বরমুশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সাত্তার দলীয় প্রার্থী। তার সাথে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা কৃষক লীগের সহ সভাপতি এটিএম জয়নাল আবেদীন। ওই ইউনিয়নে দল মনোনীত প্রার্থী বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচারণার মাঝে চাপে আছেন অনেকটা। বিদ্রোহী প্রার্থী এটিএম জয়নাল আবেদীন ভোটারদের মধ্যে তার অবস’া ভল দাবী করে বলেন, কয়েকটি ভোট কেন্দ্র আমি ঝুকিপূর্ন মনে করছি। তার মধ্যে আইমা দেবীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘাঘরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্বরমুশিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঁশাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুর্গাশ্রম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই সমস- কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীর একবারে আপন লোকজন নির্বাচনী এজেন্ট হয়ে কাজ করবে। তারা নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে। এতে আমার লোকজন ভয় পাচ্ছে, আমি নিজেও শংকিত আছি। বিষয়টি স’ানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। ওই ইউনিয়নে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোখলেছুর রহমান পরশ। তার সাথে দলীয় কোন বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। তিনিও নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
উপজেলার শুনই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ন সম্পদক ও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সানোয়ার উদ্দিন সানু। তার সাথে বিদ্রোহী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান কামাল। অপর শক্তিশালী প্রার্থী হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম বাচ্ছু। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। সুশীল সমাজে তার অবস’ান অনেক ভাল। ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডের মুরুব্বীরা বসে তাকে নির্বাচন করার জন্য বলেছেন দাবী করে খোরশেদ আলম বাচ্ছু বলেন, সুবিধে- অসুবিধেয় এলাকাবাসীর সাথে থেকে এলাকার উন্নয়নে দীর্ঘ সময় কাজ করছি। মানুষ নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে পরিবর্তন চায়। আমি এলাকাবাসীর উন্নয়নে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি।
উপজেলার সুখারী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে দল মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন কপিল উদ্দিন। তার সাথে বিদ্রোহী হয়ে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন- জাহাঙ্গীর উদ্দিন। নির্বাচনী প্রচার- প্রচারণায় বিদ্রোহী প্রার্থী অনেকটা এগিয়ে আছেন। এক দলের দুই প্রার্থীর টেলা ধাক্কার মাঝে সুবিধে নিতে পারেন বিএনপি দলীয় মনোনীত প্রার্থী উপজেলা বিএনপির যুগ্ন সম্পাদক ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোস-ফা আশরাফ কামাল তুহিন। যদিওবা তার সাথেও বিদ্রোহী হয়ে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন বিএনপি নেতা আজিজুল হাসান ওরফে দুলাল।
দুওজ ইউনিয়নে দল মনোনীত প্রার্থী হচ্ছেন- আবদুস সেলিম ওরফে মনি। তার সাথে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামালের বড় ভাই মো. কায়সার ইমরান ওরফে বাবুল, স’ানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ ওরফে দুলাল ও শাহীন। ওই ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্ধীতা হবে মো. কায়সার ইমরান ওরফে বাবুলের। বিএনপিতেও ওই ইউনিয়নে দল মনোনীত প্রার্থীর সাথে বিদ্রোহী আছে। দলীয় প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি খসরু আহমেদ। তার সাথে বিদ্রোহী হয়েছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান সিরাজী। শাহজাহান সিরাজীর অবস’া কিছুটা ভাল।
উপজেলার তেলিগাতীতে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী জাহাঙ্গীর হাসান সুবিধেজনক অবস’ানে আছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। তার সাথে দলীয় কোন বিদ্রোহী নেই। একাই দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে দাফিয়ে বেড়াচ্ছেন ইউনিয়নের গ্রাম থেকে গ্রাম, হাট ও বাজার। তবে তার সাথে প্রতিদ্বন্ধীতায় আছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওসমান গণি তালুকদার। দুই জনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।