| রাত ১০:০৪ - মঙ্গলবার - ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ - ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শেরপুরে আলোচিত স্কুলছাত্র রাহাত হত্যা মামলার রায়ে ৩জনের মৃত্যুদন্ড, ১জনের যাবজ্জীবন

মুগনিউর রহমান মনি, শেরপুর,  ২৯ মার্চ ২০১৬, মঙ্গলবার,
শেরপুরে আলোচিত স্কুলছাত্র আরাফাত ইসলাম ওরফে রাহাত হত্যা মামলার রায়ে তিনজনকে মৃত্যুদন্ড ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। দন্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে দশ হাজার টাকা করে অর্থদন্ডও করা হয়েছে। শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সায়েদুর রহমান খান আজ ২৯ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।sherpur- arafat murder verdict picture-1- 29.03.2016
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন শেরপুর সদর উপজেলার বয়ড়াপরাণপুর গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে মো. আব্দুল লতিফ (২১) ও একই গ্রামের ফার্বক মিয়ার ছেলে রবিন মিয়া (২০) এবং সদর উপজেলার হের্বয়া নিজপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে মো. আসলাম বাবু (২২)। যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন নালিতাবাড়ীর নন্নী পশ্চিমপাড়া গ্রামের নজর্বল ইসলামের ছেলে মো. ইমরান হোসেন (২১)। দন্ডপ্রাপ্তরা বর্তমানে শেরপুর জেলা কারাগারে আটক রয়েছেন।
নিহত আরাফাত শেরপুর জেলা শহরের গৃদানারায়ণপুর এলাকার কাঠের আসবাবপত্র ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলামের ছেলে। সে শহরের বিপৱব-লোপা মেমোরিয়াল স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত লতিফ নিহত আরাফাতের খালু।
আদালত সূত্রে মামলার সংৰিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত লতিফ ও আসলাম বাবু সহপাঠী ও পরস্পর বন্ধু। আরাফাতের খালু লতিফ ও আসলাম দুই লাখ টাকা মুক্তিপণের আশায় আরাফাতকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। সহযোগী হিসেবে তাঁদের আরেক বন্ধু দন্ডপ্রাপ্ত রবিনকে সঙ্গে নেন। এরপর গত বছরের ২ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে আরাফাত গৃদানারায়ণপুর এলাকার বাসা থেকে বের হলে তাঁরা তাকে (আরাফাত) অপহরণ করেন। পরে মুঠোফোনে আরাফাতের বাবা শহিদুলের নিকট দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। কিন’ শহিদুল ঘটনাটি পুলিশকে জানালে পুলিশ আরাফাতকে উদ্ধারে তৎপর হয়। অবস’া বেগতিক দেখে ওইদিনই আরাফাতকে নিয়ে আসলাম প্রথমে নালিতাবাড়ীর নন্নী গ্রামের সার ব্যবসায়ী ইমরানের দোকানে যান। পরে লতিফের নির্দেশে আসলাম নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ের বুর্বঙ্গা এলাকায় নিয়ে গলায় শ্বাসরোধ করে আরাফাতকে হত্যা করেন এবং লাশ পাহাড়েই ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে গত বছরের ৮ আগস্ট গারো পাহাড়ের সীমান্তঘেঁষা বুর্বঙ্গা পাহাড়ের চূড়া থেকে পুলিশ আরাফাতের গলিত লাশ ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় নিহত আরাফাতের বাবা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে লতিফ, রবিন, আসলাম বাবু ও ইমরান হোসেনের বির্বদ্ধে সদর থানায় অপহরণপূর্বক হত্যা মামলা দায়ের করেন। দন্ডপ্রাপ্ত সকল আসামিই ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় শেরপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বুলবুল আহমদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। মামলার তদন্তশেষে গত ২১ জানুয়ারি সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বশির আহম্মেদ বাদল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭, ৮ ও ৩০ ধারায় অভিযুক্ত করে চার আসামির বির্বদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আদালত ২৭ জন সাৰীর সাৰ্যগ্রহণশেষে আজ মঙ্গলবার অভিযুক্ত চার আসামির বির্বদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় উপরোক্ত দন্ড প্রদান করেন। রায় ঘোষণার সময় বিচারক মো. সায়েদুর রহমান খান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২৯ ধারার বিধান অনুযায়ী মহামান্য হাইকোর্টের অনুমোদন সাপেৰে দন্ডপ্রাপ্তদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে মৃত্যু নিশ্চিত করতে বলেন।
রাষ্ট্রপৰে সরকারি কৌসুঁলি (পিপি) মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া এবং আসামি পৰে আব্দুস সোবহান তরফদার, আব্দুর রউফ, নারায়ণ চন্দ্র হোড় ও আতাহার আলী মামলাটি পরিচালনা করেন। তবে আজ রায় ঘোষণার সময় আসামি পৰের কোন আইনজীবী আদালতে উপসি’ত ছিলেন না।
এদিকে আজ মঙ্গলবার আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় শোনার জন্য বিপুলসংখ্যক জনতা আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন। বিশেষ পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস’ায় দন্ডপ্রাপ্ত চারজনকে জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।
রায়ের প্রতিক্রিয়া: মামলার রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপৰের কৌসুঁলি গোলাম কিবরিয়া বলেন, আদালতের রায়ে তাঁরা সন’ষ্ট। সকলের সহযোগিতায় মাত্র নয় কার্যদিবসে এ মামলার রায় ঘোষিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অপরদিকে রায় শুনে আরাফাতের বাবা শহিদুল ও মা রিনা বেগম পুত্রশোকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় বাবা শহিদুল রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের ফাঁসি দ্র্বত কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়ে বলেন, আরাফাতের মত নিষ্ঠুর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আর যেন কোন মা-বাবার বুক খালি না হয়।
তবে আদালত প্রাঙ্গণে উপসি’ত মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আব্দুল লতিফের স্ত্রী ইতি বেগম কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উলেৱখ্য, গত বছরের ৯ আগস্ট নয়া দিগন্তে খবর প্রকাশিত হয়।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৮:৫৯ অপরাহ্ণ | মার্চ ২৯, ২০১৬