ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রীজ মোড় প্রশস্ত না করায় দেড় কোটি মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ
স্টাফ রিপোর্টার, ১৯ মার্চ ২০১৬, শনিবার,
চীনের দুঃখ হোয়াংহো, আর ময়মনসিংহের দুঃখ ব্রহ্মপূত্র ব্রীজ ও পাটগুদাম চৌরাস্তা। কথাগুলো বলেছেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মঈনুল হক। অত্রাঞ্চলের প্রায় দেড় কোটি মানুষের মানুষ এই ব্রীজ অতিক্রমকালে ঘন্টাধিক সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়। তাদের দুঃখ, কষ্ট প্রত্যৰ ও অনুভব করে নবগঠিত বিভাগীয় কশিমশনারসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে পাটগুদাম মোড়টি প্রশস্তকরণের অনুরোধ জানান, ময়মনসিংহে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপির নির্দেশনায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরজমিন গবেষণার মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে প্রাক্কলিত ইন্টারসেকশন (মোড়টির প্রশস্তকরণ) প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়। অগ্রাধিকার তালিকার এই প্রকল্পটি সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনার পরও মন্ত্রণালয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ঘূর্ণিপাকে পড়ে ওই প্রকল্পটি এখনো আলোর মূখ দেখছে না। প্রস্তাবিত এই ইন্টারসেকশনটি আগামী রমজান ও ঈদুল ফিতরের পূর্বে বাস্তবায়ন করা না হলে ধারাবাহিক ও ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হবে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নূর্বল আমিন কালাম । দ্র্বত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কোটি মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হতে পারে । দ্র্বত প্রকল্পটির বাস্তবায়নের জন্য সড়ক মন্ত্রী ও সচিবের তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগী নাগরিকরা।
সওজ ময়মনসিংহ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ময়মনসিংহ একটি পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী শহর। শহরের ভিতর দিয়ে আন্তঃজেলার যান চলাচলের সুযোগ রেখে ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদাম মোড় দিয়ে ব্রহ্মপূত্র নদের উপর ১৯৯০সালে দুই লেনের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। শেরপুর, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ জেলার সিংহভাগ মানুষসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ ব্রহ্মপূত্র নদের্ উপর ব্রীজ অতিক্রম করে পাটগুদাম মোড় চৌরাস্তা দিয়ে কেওয়াটখালী হয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাইপাস হয়ে ঢাকা-গাজীপুর, চরপাড়ায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শহরের ভিতরে যানহাবনগুলো কয়েকটি ভাগ হয়ে যায়। সেতু সংলগ্ন পাটগুদাম বাসস্ট্যান্ড ও ট্রাকস্ট্যান্ড রয়েছে। এই স্ট্যান্ড হতে প্রতিদিন সহস্রাধিকবাস-ট্রাক চলাচল করে। প্রয়োজনের তুলনায় পাটগুদাম ইন্টারসেকশনটি অপ্রশস্ত। তাছাড়া এই মোড়ের চারদিকে দোকানপাটে ঘেরা, বৃষ্টির পানি অপসারণ হয়না। দ্র্বত রাস্তার পেভমেন্ট ৰতিগ্রস’ হয়। তাই পাটগুদাম ইন্টরসেকশনটিকে ব্যাপক চাপ পড়ে। ফলে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। মানুষের জনদুর্ভোগ লাঘবে আরসিসি পাকা করে ইন্টারসেকশনটি নির্মাণ করার জন্য বিশেষজ্ঞ সওজ প্রকৌশলীগণ প্রাক্কলন তৈরী করেছেন। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে দ্র্বতকাজ সম্পাদন করা হবে।
ময়মনসিংহ ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ২৫ বছর পূর্বে নির্মিত এই সেতু দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন অতিক্রম করায় ব্রীজ ও পাটগুদাম চৌরাস্তাটি ইতিমধ্যেই যান বাহন পারাপারের ধারণ ৰমতা হারিয়ে ফেলেছে। অধিক যান বাহনের কারণে ট্রাফিক বিভাগের লোকদের আপ্রাণ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পাটগুদাম মোড়ের যানজট মুক্ত করা যাচ্ছে না। জেলা উন্নয়ন সমন্বয়ক কমিটির সভা, জেলা আইন শৃংখলা, আঞ্চলিক পরিবহন কমিটিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সভায় পাটগুদাম মোড়ের অব্যাহত যানজট কারণে বিভিন্ন সময়ে তোপের মূখে পড়তে হয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, তার কর্মৰেত্র না থাকলেও জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে পাটগুদাম ইন্টারসেকশনটি বাস্তবায়নের মন্ত্রী ও এমপিদের ডিওলেটার সংগ্রহ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর কাছে প্রেরণ করেছেন । তিনি বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি, ধর্মমন্ত্রী অধ্যৰ মতিউর রহমান এবং সাবেক স্বাস’্যপ্রতিমন্ত্রী ডাঃ ক্যাপ্টেন (অব. মুজিবুর রহমান ফকির এমপি, ফখরুল ইমাম এমপি, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স’ায়ীকমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সচিব, বিভাগীয় কমিশনার জি. এম সালাহ উদ্দিনসহ বিভিন্ন মহলকে অনুরোধ করেছেন পাটগুদাম ইন্টারসেকশনটি বাস্তবায়নের জন্য। পাটগুদামের বাসস্ট্যান্ড সরানো এবং মোড়ের প্রশস্তকরণ করানা হলে যানজট থেকে পরিত্রাণের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা।
নেত্রকোণায় বাড়ি ময়মনসিংহে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের দুঃখ করে বলেন, ব্রহ্মপূত্র নদের উপর চায়না ব্রীজের যানজটের মূল কারণ, অধিক যানবাহন চলাচল, এবং অপ্রশস্ত পাটগুদাম মোড় এবং ব্রীজ সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড। পাটগুদাম ইন্টারসেকশন প্রশস্ত না করলে যানজটের কবল থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়। সম্প্রতি অসুস’্য হয়ে তার মাতার বিৱডিং হচ্ছিলো, নেত্রকোনার চিকিৎসকের পরামর্শে দ্র্বত মাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলাম। ব্রীজমোড়ে ট্রাফিক পুলিশের কর্তব্যরতদের যানজট মুক্ত রাখার জন্য অনুরোধও করেছিলাম। ট্রাফিকের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও মুমূর্ষূ রোগী মাতা ২০ মিনিট যানজটে আটকে থাকতে হয়েছিলো। তিনি আৰেপ করে আরো বলেন, আমি একজন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর হয়েও যানজটমুক্ত অবস’ায় মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি নাই। তাই ব্রহ্মপূত্র ব্রীজ ও পাটগুদাম চৌরাস্তা মোড়ের যানজটে যেন আমার ও স্বজনের রোগী অথবা লাশটি যেন আটকে না থাকে, এই নিশ্চয়তার দাবী করেছেন পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর। এটি দাবীটুকু শুধু একজন ট্রাফিক ইন্সপেক্টেরের নয়, দুর্ভোগে নিমজ্জিত ব্রহ্মপূত্র নদের ওপারের সকল মানুষের এই দাবী। ###