| রাত ২:০৩ - সোমবার - ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ - ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

গৌরীপুরে আনন্দ স্কুলের ‘নিরানন্দ’ হাল ঝরেপড়া শিশু বিদ্যালয় মুখী হচ্ছে না

সাজ্জাতুল ইসলাম সাজ্জাত, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) ১৯ মার্চ ২০১৬, শনিবার,
আনন্দের মাধ্যমে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পাঠদান করার জন্য গঠিত ‘আনন্দ স্কুল’। আট থেকে চৌদ্দ বছরের শিশু যারা কোনোদিন বিদ্যালয়ে যায়নি বা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারেনি তাদের আনন্দের সঙ্গে স্কুলে পাঠদান করার জন্য ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় ২০১৩ সাল থেকে শুর্ব হয় এ কার্যক্রম। নাম দেয়া হয় ‘রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন’ (রস্ক) প্রকল্প। দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস’াপনা, জালিয়াতির কারণে এই স্কুলগুলোয় নিরানন্দ বাসা বেঁধেছে। নানা অনিয়মের কারণে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
এ উপজেলার ঝরে পড়া শিশুদের শিৰামুখী করতে সরকার রস্ক প্রকল্পের মাধ্যমে ১২৮টি আনন্দ স্কুল চালু করে। তার মধ্যে নানান অনিয়মের কারণে ৮টি স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। উপজেলার পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নের নিভৃত পলৱ্লীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়া হয়েছে আনন্দ স্কুলগুলো। উপজেলায় আনন্দ স্কুলের জন্য সরকার বছরে কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও বেশির ভাগ শিৰক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্তব্যে ফাঁকি, তহবিল তছরূপ, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ৩৩ ভাগ ঝরে পড়া শিক্ষার্থী বিদ্যাবিমুখই রয়েছে বলে স’ানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
সংশিৱষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আনন্দ স্কুল স্থাপনের শুর্ব থেকেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প শুরুর আগেই শিক্ষার্থী বাছাই, শিক্ষক নিয়োগ ও জরিপে বড় ধরনের অনিয়ম করছেন প্রকল্প সংশিৱষ্টরা। কোনোমতে স্কুল স’াপন করে প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) দ্বিতীয় পর্যায় ২০১৩ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুর্ব হয়েছে, চলবে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। রস্কের নীতিমালায় বলা আছে, ৮ থেকে ১৪ বছরের ঝরেপড়া শিশুরা আনন্দ স্কুলে ভর্তি হতে পারবে। একটি স্কুলে কমপক্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থী ওপরে ৩৫ জন পর্যন্ত ভর্তি হতে পারবে। কোনো সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছে এমন কোনো শিক্ষার্থী আনন্দ স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না। এছাড়া আরও বেশকিছু শর্ত রয়েছে। আনন্দ স্কুলের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মাসে আরবান এলাকায় ২৬০ টাকা, মফস্বল এলাকায় ৬০-৮০ টাকা উপবৃত্তি, ভর্তির সময় উপকরণ, বিনামূল্যে বই, পোশাক তৈরির টাকা দেয়া হয়। এছাড়া, শিক্ষকের বেতন তিন হাজার টাকা, স’াপনা তৈরির সময় ৩ হাজার ৮শ’ টাকা ও প্রতিমাসে ঘর ভাড়া দেয়া হবে ৪শ’ টাকা। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্কুল শুর্ব করার আগে উপজেলায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থী খুঁজে বের করতে জরিপ পরিচালনা করার নামেই লুটপাটে নেমে পড়েন সংশিৱষ্টরা। চলে গোঁজামিলের মহোৎসব। নামসর্বস্ব ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান, সরকারি স্কুলে পড়ার শিক্ষার্থীদের নাম আনন্দ স্কুলে ঢুকানো, ৮ বছরের নিচে বয়স, টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ, ওই স্কুলের শিক্ষার্থীকে দিয়ে পাঠদান, উপবৃত্তি লুটপাটসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন এসব স্কুলের সংশিৱষ্টরা। শুধু তাই নয়, অনেক স্কুলে সাইনবোর্ড আছে শিক্ষার্থী নাই, স্কুল বন্ধ কিন’ শিক্ষকদের বেতন ও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি-উপকরণ ওঠানো হচ্ছে নিয়মিত। এর মধ্যে দুটি সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীরা। ফলাফল আশানুরূপ না হলেও ভবিষ্যতে ফল ভালো হবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রকল্প সংশিৱষ্টরা।
এ উপজেলার আনন্দ স্কুলের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল ৯টায় থেকে বেলা ২টার মধ্যে প্রতি কেন্দ্রে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী শিক্ষাকার্যক্রম চালু রাখার বিধান রয়েছে। কিন’ উপজেলার দু-একটি ছাড়া প্রায় সব স্কুলের কর্বণ দশা বিরাজ করছে। বসতবাড়ির উঠোন বা বাংলোঘর খাতা-কলমে আনন্দ স্কুলের কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। বেশির ভাগ স্কুল নামের বসতবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্র বা শিক্ষক কিছুই নেই, ঘরের বারান্দায় বাশেঁর চটি বা চট বিছানো রয়েছে। আবার কোনো কেন্দ্রে শিৰক নেই, শুধু দু-তিনজন শিশু বই পাশে রেখে খেলা করছে। ছাত্ররা বলে স্যার আসে নাই তাই খেলা করছি।’ অধিকাংশ কেন্দ্র শুধু খাতা-কলমে দেখিয়ে তহবিল তছরূপ করা হচ্ছে। আবার কোনো কেন্দ্রে শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র চার-পাঁচজন কিন’ দাফতরিক হিসাব রয়েছে ৩২ জনের। উপজেলায় এ রকম স্কুলকেন্দ্র রয়েছে প্রায় ৫০টি। বাড়তি শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত উপবৃত্তির টাকা, শিক্ষা উপকরণের টাকা, খাতা-কলমের টাকা ও ড্রেসের টাকাসহ বিভিন্ন তহবিল তছর্বপের অভিযোগ এলাকায় ব্যাপক। এ ছাড়া উপজেলার আনন্দ স্কুলের শিক্ষকদের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। তবে স’ানীয়দের অভিযোগ, আনন্দ স্কুলের শিক্ষক ও সংশিৱষ্টদের স্বেচ্ছাচারিতা আর কর্তব্যহীনতায় ও অর্থ তছর্বপের কূটকৌশলের কারণে সরকারের বরাদ্দকৃত বিপুল টাকা কোনো কাজে আসছে না।
তবে আনন্দ স্কুলের উপজেলা ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর আল-মামুন জানান, ‘আনন্দ স্কুলের শিক্ষকদের মাসে তিন হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। উপজেলায় আনন্দ স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের ছাত্রপ্রতি মাসিক ৮০ টাকা উপবৃত্তি, বই, খাতা, কলম ও ড্রেস সরকার সরবরাহ করছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ঘর ভাড়াবাবদ প্রতি মাসে ৪০০ টাকা প্রদান করা হয়। এ কর্মকর্তা অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে জানান, ৭ মাস আগে এ উপজেলায় যোগদান করে তিনি এ পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০টি স্কুল পরিদর্শন করতে সৰম হয়েছেন। এগুলোর মধ্যে সমস্যাবহুল ৮টি স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়। বাকী আরো ৭টি স্কুল খুব শীঘ্রই বন্ধ হয়ে যাবে। অনিয়মের কারণে বিভিন্ন স্কুলের শিৰকদের বেতন সহ অন্যান্য সুবিধাদি বন্ধ রয়েছে বলে তিনি জানান। ####

সর্বশেষ আপডেটঃ ১০:০৩ অপরাহ্ণ | মার্চ ১৯, ২০১৬