| রাত ২:৪৭ - শুক্রবার - ১লা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ - ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

১০ একর বোরো জমি রোদে পুড়ে ছাই ঈশ্বরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

ফারুক ইফতেখার সুমন, ঈশ্বরগঞ্জ থেকে-  ময়মসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস-৩ এর ঈশ্বরগঞ্জ সাব-জোনাল অফিসের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় দুই মাস ধরে উপজেলার আশ্রবপুর এলাকায় বোরো চাষি গোলাপ মিয়ার একটি সেচ লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রায় ১০একর জমি রোদে পুড়ে ছাই হয়ে গছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্ট্র ভুক্তভোগীরা। প্রায় দুই মাস পূর্বে ওই এলাকার একটি ট্রান্সফরমার বিকল হলে ঈশ্বরগঞ্জ সাব-জোনাল অফিসে ট্রান্সফরমারটি মেরামতের জন্যে আনা হয়। অফিসের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বে থাকা লোকজনের হাতে পায়ে ধরেও অদ্যবধি ট্রান্সফরমারটি লাগোনা সম্ভব হয়নি। এতে একটি সেচ লাইনের আওতাভুক্ত বোরো আবাদী জমি হুমকীর মুখে পড়েছে। আশ পাশের অন্য একটি সেচ মেশিন থেকে রোপিত কিছু জমি নষ্টের হাত থেকে বাঁচাতে পারলেও এরিমধ্যে প্রায় ১০একর জমি রোদে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গোলাপ মিয়া জানান, ট্রান্সফরমারটির মেরামত বাবদ খরচ দিতে রাজি থাকলেও তারা ট্রান্সফরমারটি এখনো ঠিক করে দেননি। এতে তার ৫একর সহ এলাকার আরো ৫একর জমি পানি সেচের অভাবে পুড়ে গেছে। দু’টি পুকুরে প্রায় অর্ধ লক্ষটাকার মাছ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শুধু আশ্রবপুর গ্রাম নয় এরকম আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে অন্যান্য এলাকা থেকেও।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে মেলেনা কাক্সিক্ষত সেবা। চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন সংযোগ প্রত্যাশীরা। ইলেকট্রিশিয়ান রূপী দালাল ও এলাকাভিত্তিক দালাল সদস্যদের কাছে জিম্মি বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। এতে বিদ্যুৎ পেতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়ায় বড় বাধাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে দাপুটে দালাল চক্র। তাদের খপ্পরে পড়ে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন আবেদনকারীরা। শুধু দালাল চক্রই নয় এদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। তারপরও কর্তপক্ষের দাবি গ্রাহকদের সেবা ঠিকঠাক মতই দেয়া হচ্ছে। নিয়মনীতি মেনেই আদায় করা হচ্ছে সংযোগ সংশ্লিষ্ট অর্থ। অন্য দিকে ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে নাভিশ্বাস অবস্থা দেখা দিয়েছে সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাঝে। সাব-জোনাল অফিস স্থাপনের পর থেকে এমন অরাজকতা বিরাজ করলেও প্রতিকারের জন্যে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ-৩ থেকে কোন উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।
জানা যায়, সরকারি হিসেব অনুযায়ী একটি নতুন সংযোগ পেতে সর্বোচ্চ খরচ হয় মাত্র ৮৫০ টাকা। অনলাইনে আবেদন করলে ১০০টাকা, অফিসে আবেদন জমা বাবদ ফি ১০০টাকা, মিটার জামানত ৬০০টাকা, সদস্য ফি ৫০টাকা। অথচ নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত ৫ থেকে ১০হাজার টাকা দিতে হচ্ছে তাদের। জরুরী হলে ১৫হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে দালাল চক্র। শুধু নতুন আবেদন নয়, বিদ্যুৎ অফিসের যে কোন কাজই দালাল ছাড়া হয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দালাল জানান, একটা নতুন মিটার পাস করাতে প্রতিটি টেবিলেই বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে। ওই টাকা না দিলে ফাইল এক টেবিলেই পড়ে থাকে অন্য টেবিলে যায় না। কোন কোন সময় ফাইলটিই গায়েব হয়ে যায়। তাছাড়া মিটারের সিএমও হলেও মিটার লাগতে সময় লেগে যায় ২/৩ মাস। তাই বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এছাড়াও ট্রান্সফরমার আপগ্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে চরম হয়রানির শিকার হয় গ্রাহকরা। দালালের মাধ্যমে এক সপ্তাহর মধ্যে ট্রান্সমিটার পৌঁছানো সম্ভব হলেও গ্রাহকরা সরাসরি যোগাযোগ করলে সময় লাগে ৩থেকে ৪মাস।
জুনিয়র আবাসিক প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় পল্ট্রি ও রাইস মিল সহ অনেক অবৈধ সংযোগ ব্যবহারের ফলে ট্রান্সফরমারটি বিকল হয়। ট্রান্সফরমারটির মূল্য পরিশোধ করলেই ওখানে আরেকটি ট্রান্সফরমার লাগানো হবে।
বিষয়টি নিয়ে মযমনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস-৩ এর ঈশ্বরগঞ্জ সাব-জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) গোলজার আহমেদ জানান, আশ্রবপুর এলাকায় এ পর্যন্ত দু’টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে। এর আগে গত বছরেরও একটি ট্রান্সফরমার বিকল হয়। জাহাঙ্গীর নামে ওই এলাকার একজন পল্টি ব্যবসায়ী অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে অতিরিক্ত লোডের কারণে বারবার ট্রান্সফরমার বিকল হচ্ছে অথচ তিনি এর ব্যয়বার নিচ্ছেন না। তিনি আরো বলেন, কোন অনিয়ম দুর্নীতির সাথে অফিসের লোকজন জড়িত থাকলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৯:১০ অপরাহ্ণ | মার্চ ১৯, ২০১৬