| সকাল ১০:১৫ - সোমবার - ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ - ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শেরপুরের নকলায় উরফা ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ স্বতন্ত্র ও বিএনপি প্রার্থীর শংকা

মুগনিউর রহমান মনি, শেরপুর,  ১৮ মার্চ ২০১৬, শুক্রবার 
শেরপুরের নকলায় উরফা ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ স্বতন্ত্র ও বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর বির্বদ্ধে নানা হুমকিসহ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও একজন কর্মীকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত করার অভিযোগও করেছেন তাঁরা। গত ১৭ মার্চ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে উরফা ইউনিয়নে গেলে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী নূরে আলম তালুকদার এবং বিএনপির প্রার্থী মো. র্বস্তম আলী আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রেজাউল হকের বির্বদ্ধে এসব অভিযোগ করেন। অবশ্য রেজাউল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গত ১৭ মার্চ সোমবার সরেজমিনে নকলার উরফা ইউনিয়নের বারমাইসা বাজার, লয়খা ও হাসনখিলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিভিন্ন প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার কাজ চলছে। প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোতেও জনসমাগম রয়েছে। কিন’ আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠেয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়ে বিরোধী শিবিরে সংশয় রয়েছে। স’ানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে উরফা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নূরে আলম তালুকদার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন’ তাঁর পরিবর্তে দল থেকে নকলা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী মো. রেজাউল হককে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সেই থেকে শুর্ব হয় এই দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব। এলাকায় এই দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারের কাজ অব্যাহত রাখলেও তাঁদের মধ্যে রয়েছে উত্তেজনা।
জানা গেছে, গত ১৪ মার্চ সোমবার নকলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী রেজাউল হকের নামে নৌকা এবং আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম তালুকদারের নামে চশমা প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। ওইদিন অর্থাৎ গত সোমবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকরা তাদের প্রার্থীর সমর্থনে বারমাইসা বাজারে মিছিল করেন। এ সময় উভয় প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে নকলা থানা পুলিশ ঘটনাস’লে গিয়ে পরিসি’তি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং উভয় পৰকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে সোমবার মধ্যরাতে হাসনখিলা বাজার, বারমাইসা উত্তর ও তারাকান্দা এলাকায় চেয়ারম্যান প্রার্থী নূরে আলম তালুকদারের তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও আসবাবপত্র লুট করা হয়। এছাড়া র্বকন তালুকদার নামে একজন কর্মী প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গত ১৭ মার্চ বৃহস্পতিবার ‘বিদ্রোহী’ স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম তালুকদার বলেন, তিনি একজন স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি গত পাঁচ বছরে এলাকার উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কাজ করেছেন। তাঁদের পরিবার আওয়ামী লীগের একটি বিস্বস্ত পরিবার। তাঁর বাবা মৃত আলাল উদ্দিন তালুকদারও দু’বার চেয়ারম্যান ছিলেন। এলাকার জনগণ চেয়েছিলেন এবারও যেন আওয়ামী লীগ থেকে তাঁকে (নূরে আলম) মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন’ জনতার দাবিকে উপেৰা করে রেজাউল হককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। জনগণের মধ্যে তাঁর (রেজাউল) কোন জনপ্রিয়তা নেই। তাই পরাজয় নিশ্চিত জেনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল ও তাঁর সমর্থকেরা বিভিন্নভাবে তাঁকে (নূরে আলম) হুমকি দিচ্ছেন এবং তাঁর তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও একজন কর্মীকে গুর্বতর আহত করেছেন।
নূরে আলম অভিযোগ করে বলেন, তাঁকে ও তাঁর কর্মীদের নির্বাচনী প্রচারণার কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে সরকার দলীয় প্রার্থী রেজাউল নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ‘শোডাউন’ করছেন। তিনি বলে বেড়াচ্ছেন ‘এক ভোট পেলেই তিনি পাশ করবেন’। তাই জনগণ সুষ্ঠুভাবে ও নিরাপদে ভোট দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে শংকিত রয়েছেন। তিনি (নূরে আলম) এসব বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনত ব্যবস’া গ্রহণের এবং ভোটের দিন পর্যাপ্ত আইন-শৃঙৰলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানান।
অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী র্বস্তম আলী অভিযোগ করে বলেন, তাঁকেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। তিনি (রেজাউল) বলে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনের দিন বেলা ১২টার মধ্যেই সব ভোট নিয়ে নেওয়া হবে। তাই জনগণের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না? জনগণ যাতে নিরাপদ পরিবেশে ও নির্বিঘ্নভাবে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস’া নিতে তিনি (র্বস্তম আলী) প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নূরে আলম ও র্বস্তম আলীর অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজাউল হক বলেন, ‘আমি কোন প্রার্থীকে কোন ধরণের হুমকি দেইনি। আমার কোন সমর্থক নূরে আলমের নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্র ভাঙচুর বা কাউকে আহত করেনি। বরং নূরে আলমের সমর্থকেরা গত ১৪ মার্চ সোমবার সন্ধ্যায় বারমাইসা বাজার ও আশপাশের এলাকায় আমার সমর্থকদের অবরোধ করে মারধর করেছে। এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য নূরে আলমের সমর্থকরা তাঁদের প্রার্থীর প্রচার কেন্দ্র নিজেরাই ভাঙচুর করে আমার বির্বদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’
রেজাউল আরও বলেন, উরফা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এখানকার জনগণ নৌকা পাগল। নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করবেন এবং নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন। তাই নৌকার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে জামায়াত-শিবির সমর্থিত প্রার্থীরাই তাঁর বির্বদ্ধে ‘এক ভোট পেলেই পাশ’ এ ধরণের বিভ্রান্তিমূলক প্রবাগান্ডা ছড়াচ্ছেন।
জানতে চাইলে নকলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা যাতে নিরাপদ পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ চালাতে পারেন সেজন্য উরফা ইউনিয়নে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নভাবে ভোট দিতে পারেন তার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস’া গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া কোন প্রার্থী যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন না করেন তাঁর জন্য তাঁদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৬:১২ অপরাহ্ণ | মার্চ ১৮, ২০১৬