গৌরীপুরে বিদ্রোহীদের চাপে চ্যালেঞ্জে নৌকা-ধানের শীষ
সাজ্জাতুল ইসলাম সাজ্জাত, গৌরীপুর থেকে: ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের চাপে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে নৌকা আর ধানের শীষ। এই নির্বাচন সামনে রেখে উপজেলার গ্রামাঞ্চলে যে উৎসব থাকার কথা তা খুব একটা চোখে পড়ছে না। এর কারণ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল ও বিএনপির জোরালো উপস্থিতি না থাকা। সরেজমিন ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এদিকে বিভিন্ন স্থানে হামলা ও মামলার কারণে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শংকিত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) ও ধানের শীষের প্রার্থী ও সমর্থকরা। সরকারি দল আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারি দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি-ভয়ভীতির মুখে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কৌশলী হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা আতঙ্ক। নেই কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে কি না, এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে সংশয়।
জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে মোট ৫৩জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নিজেদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তাদের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকলেও বাকী ৬টি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন একাধিক। এর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যানই আছেন ৩ জন। এই বর্তমান চেয়ারম্যানের স্থলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সুপারিশে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তুলনামূলক বেশ জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যানরা মনোনয়ন দৌড়ে বাদ পড়ায় নৌকা প্রতীকধারীরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন বলে অনেকেই আশংকা করছেন। অপর দিকে ৭টি ইউনিয়নে বিএনপির একক প্রার্থী থাকলেও তিনটি ইউনিয়ন ছাড়া অন্যগুলোতে তাদের জোড়ালো প্রচারনা চোখে পড়ার মত না।
১নং মইলাকান্দা: বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ ইউনিয়নে বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ। এই ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত কুমার রায় তপন দলীয় প্রতীক নৈৗকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট প্রার্থনা করছেন। সুশান্ত কুমার রায় তপন বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়। তাই ৩১ মার্চের নির্বাচনে ভোটাররা তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। বিএনপি প্রার্থী মোঃ রিয়াদুজ্জামান বলেন, যদি ভোটাররা ভয়ভীতিহীন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে তবে বরাবরের মতো এবারো তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন প্রতিপক্ষ প্রার্থীর সমর্থকরা পর পর মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে ও কর্মী বাহীনিকে হয়রানী করছে।
২নং গৌরীপুর: এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি থেকে একক প্রার্থী ধানের নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আবদুস সাত্তার। আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ হযরত আলী এবং একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন ও সহসভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম। গত ১৪ মার্চ নির্বাচনী শোডাউনের সময় আওয়াম লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থক ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে সংর্ঘষ হয়। এতে অর্ধশত লোক আহত হন। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও বিদ্রোহীরাই সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন।
৩নং অচিন্তপুর: এই ইউনিয়নেও বর্তমান চেয়ারম্যান সহ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। তবে নৌকা প্রতীকধারী স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহিদুল ইসলাম দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বেশ জোড়েশোড়ে প্রতিপক্চারণা চালাচ্ছেন। এ ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বেশ জোড়ালে অবস্থানে পক্ষকে মোকাবেলা করছেন। তবে এ ইউনিয়নে বিএনপির বিদ্রোহীদের প্রচারণা খুব একটা চোখে পড়ছে না।
৪নং মাওহা: এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেয়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ কালন। আর বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রমিজ উদ্দিন স্বপন সহ আরো তিনজন। বিএনপির একক ধানের শীষের প্রার্থী ছাত্রদল নেতা মোঃ এমদাদুল হক খোকন। হামলা মামলার ভয়ে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের জোড়ালো সহযোগীতা না পাওয়ায় নির্বাচনী মাঠে তিনি আওয়ামী লীগের কোন্দলের বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারছেন না। তাই লড়াই জমছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ।
৫নং সহনাটি: এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তবে জাপার একক প্রার্থী মোঃ শামছুজ্জামান বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা পেয়েছেন আব্দুল মান্নান। আর বিদ্রোহী আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ দুলাল আহমেদ। বিএনপির ধানের শীষ পেয়েছেন জিয়াউল আবেদীন জিলু এবং বিদ্রোহী মোঃ বুলবুল আহম্মেদ। ভোটারদের ধারণা এ ইউনিয়নে ত্রিমুখি লড়াই হবে।
৬নং বোকাইনগর: এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক ভিপি মোঃ হাবিবুল্লাহ। তার প্রতিপক্ষ হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জোড়ালে ভাবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন পরপর দুইবারের চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্নআহবায়ক মোঃ হাবিবুল ইসলাম খান শহিদ। এ ইউনিয়নে চারজন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মুলত দু’জনের মাধ্যই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
৭নং রামগোপালপুর: আওয়ামী লীগ থেকে উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি মোঃ আবুল হাশিম নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। তার বিদ্রোহী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আমিনুল ইসলাম সিকদার ও আওয়ামী লীগন মোঃ আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি। অপরদিকে বিএনপি একক প্রার্থী ধানের শীষ নিয়ে মাঠে লড়াই করছেন সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মান্নান সরকার। এ ইউনিয়নে বিএনপি জামায়াতের বিপুলসংখ্যক ভোট রয়েছে। এই ভোটাররা যে প্রার্থীকে ভোট দেবে তারই বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই বিএনপির প্রার্থী এই সুবিধা নি্েচ্ছন বলে অনেকের ধারনা।
৮নং ডৌহাখলা: এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে সরকারি দলের একক প্রার্থী নৌকা প্রতীক পেয়েছেন মোঃ শহিদুল ইসলাম সরকার। আর বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মন্ডল ধানের র্শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জোড়ালো প্রচারণা না থাকায় লড়াই হবে নৌকা বনাম ধানের শীষে।
৯নং ভাংনামারী: এ ইউনিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা মার্কা পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ ফজলে মাসুদ। আর বিদ্রোহী প্রার্থী অধ্যাপক মফিজুর নুর খোকা। বিএনপির ধানের শীর্ষের প্রার্থী হলেন একক প্রার্থী হলেন এএফএমএ কাশেম। তবে নির্বাচনী মাঠে তার আওয়াজ নেই বলে ভোটারদের মন্তব্য।
১০নং সিধলা: এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ জয়নাল আবেদীন। আর বিদ্রোহী মোঃ সেলিম আহম্মদ তালুকদার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী মোঃ উছমান গনি আর বিদ্রোহীরা হলেন শামছুদ্দিন, ইকবাল হোসেন তালুকদার।