গফরগাঁওয়ে অনাবাদি জমিতে মটরশুটি আবাদ, খরচের চেয়ে সাতগুন বেশি লাভ

গফরগাঁও প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে এবার ১১৫ হেক্টর জমিতে মটরশুটির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার রৌহা, বাগুয়া ও পুকুরিয়া এলাকায় অনাবাদি প্রায় ১১ হেক্টর জমিতে মটরশুটির আবাদ হয়েছে। সালটিয়া, জন্মেজয়, বাগুয়া ও রৌহা গ্রামে এখন যতদুর চোখ যায় দিগন্ত জুড়ে মটরশুটি ক্ষেতের সবুজের সমারোহ। বাম্পার ফলন হলে চলতি মৌসুমে শতাধিক কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।
সালটিয়া ইউনিয়নের বাগুয়া গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন সরকার ও সালটিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, এ অঞ্চলের কৃষকরা মূলত ধান চাষের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত বছর দুটি গভীর নলকূপ বন্ধ থাকায় প্রায় বাগুয়া, জন্মেজয়, রৌহা ও পুখুরিয়া গ্রামের প্রায় ১১ হেক্টর জমি অনাবাদি ছিল। এ অবস্থায় কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরনায় মটরশুটি আবাদ শুরু করি। ফলনও হয় বাম্পার। এর পর থেকে ধান চাষ বাদ দিয়ে এ চার গ্রামের কৃষকরা ধান চাষ বাদ দিয়ে মটরশুটি আবাদ শুরু করি। মটরশুটি আবাদে অর্ধশতাধিক কৃষকের জীবনে এনে দেয় নতুন গতি। মটরশুটি গাছের তেজদীপ্ত অবস্থা দেখে তিনি বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১০৫ হেক্টর জমিতে মটরশুটি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হলেও তা ছাড়িয়ে অনেক বেশি জমিতে মটরশুটি আবাদ হয়েছে।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়ন ছাড়াও টাঙ্গাব ও দত্তের বাজার ইউনিয়নে মটরশুটি আবাদ হয়েছে। এ তিনটি ইউনিয়নের অন্তত শতাধিক কৃষক ফলন ভাল হওয়ায় আশাতীত লাভবান হবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এস ফারহানা হোসেন বলেন, এ উপজেলায় পূর্বে মটরশুটির আবাদ তেমন একটা হতো না। তবে কম খরচে প্রচুর লাভ হওয়ায় দিন দিন কৃষকরা মটরশুটি আবাদের দিকে ঝুকে পড়ছে।
বাগুয়া গ্রামের আবুল হোসেন জানান, তিনি এবার দেড় এরক জমিতে মটরশুটি আবাদ করেছেন। এতে ৫০ কেজি বীজ লেগেছে। প্রতি কেজি বীজ ক্রয় করেছেন ৪০ টাকা কেজি দরে। এছাড়াও এক হাজার টাকার সার ও হালচাষ বাবদ খরচ হয়েছে ১৭’শ টাকা। সর্বসাকূল্যে খরচ হয়েছে ৪৭’শ টাকা।
তিনি আশা করছেন প্রতি একরে অন্তত ৩৪ মন মটরশুটি হবে। বর্তমানে বাজারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে মটরশুটি বিক্রি হচ্ছে। এ দাম অব্যাহত থাকলে দেড় একর জমি থেকে উৎপাদিত মটরশুটি নূনতম ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। উৎপাদন ও শ্রমিক খরচ ব্যতিত যার পুরোটাই লাভ।
সালটিয়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম দের এক একর, আঃ কাদির এক একর, ইউসুফ আলী এক একর, বেলায়েত হোসেন এক একর, সোহরাব মিয়া আধা একর, দেলোয়ার হোসেন আধা একর ও হাসেম মিয়া আধা একর মটরশুটি আবাদ করেছেন।
তারা জানান, জমিতে মটরশুটির আবাদ অত্যন্ত ভাল হওয়ায় আশা করছি প্রতি একরে ৩০-৩২ মন করে উৎপাদিত হবে। প্রতি একরে উৎপাদিত মটরশুটি বাজার ভাল থাকলে অন্তত ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হবে। যা খরচের তুলনায় ৬ থেকে ৭ গুন বেশি লাভ হয়। তাদের মতো টাঙ্গাব ও দত্তের বাজার ইউনিয়নে আরো অর্ধ শতাধিক কৃষক মটরশুটির আবাদ করেছেন। সবজি চাষ লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি ও জীবন যাত্রার মান বদলাতে শুরু করেছে।