| রাত ১১:৩১ - বুধবার - ২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ - ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - ১৪ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

তাড়াইলে নারী শ্রমিকরা জানেনা নারী দিবস কি!

আমিনুল ইসলাম বাবুল, তাড়াইল থেকে :   ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস । ‘অধিকার, মর্যাদায় নারী-পুর্বষ সমানে সমান’ শেৱাগান নিয়ে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলেও আজ মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলৰে শোভাযাত্রা, মানববন্ধন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। তবে, এ দিবসের তাৎপর্য ও গুর্বত্ব এবং নারীর ৰমতায়ন কিংবা অধিকারের কথা কখনও জানতে পারে না সাধারণ মানুষ। দিবসটি শুধু র‌্যালি আর আলোচনা সভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এ কারণে উপজেলার নারী শ্রমিকরা নারী দিবস কী তা তাঁরা জানেনা। বিশেষ করে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের আওতায় র্বরাল রোড মেইন্টিনেস প্রকল্পে রাস্তায় মাটি কাটার কাজে নিয়েজিত নারী শ্রমিকরা নারীর অধিকার ও নারী দিবসের গুর্বত্ব সম্পর্কে কিছুই জানেনা। এসব নারী শ্রমিকের পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ দিয়েই তাঁদের পরিবার চলে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সারা বছর রাস্তায় মাটি কেটে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করলেও এসব নারী শ্রমিক তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। ফলে তারা বরাবরই ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নারী শ্রমিকরা কর্মৰেত্রে পুর্বষদের পাশাপাশি সমানতালে কাজ করলেও নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হওয়ার কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে এলজিইডি’র আওতায় ‘র্বরাল রোড মেইন্টিনেজ’ (আরআরএমপি) প্রকল্পে ৭০ জন নারী শ্রমিক উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত। তাঁরা উপজেলার বিভিন্ন কাঁচারাস্তা মেরামত করে থাকে। এ ছাড়া কৃষিকাজ, ইটভাটা, তুলার মিল, প্যাথলজি, হোটেলসহ বিভিন্নস্থানে কাজ করে অসংখ্য নারী শ্রমিক। পরিবারের উপার্জনক্রম ব্যক্তির মৃত্যু কিংবা অসুস্থ জনিত কারণে সংসারের হাল ধরে জীবিকার সন্ধানে নামেন এসব নারী শ্রমিক। তাঁরা ধানকাটা, মাড়াই, রোপন, মাটি কাটা থেকে শুর্ব করে সব কাজই করতে পারেন। এসব কাজে সারাদিনে একজন নারী শ্রমিক মজুরি পায় মাত্র ১২৫ থেকে ১৫০ টাকা। কিন্তু একই কাজ করে সারাদিনে একজন পুর্বষ শ্রমিক মজুরি পায় ৩৫০-৫০০ টাকা। কিন্তু ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত এসব নারী শ্রমিক কখনোই নিজেদের অধিকার নিয়ে চিন্তা করে না। কাজ না করলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে উপোষ থাকতে হবে, এমনটাই মনে করেন তাঁরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ধলা ইউনিয়নের একটি কাঁচারাস্তায় এলজিইডি’র ‘র্বরাল রোড মেইন্টিনেজ’ প্রকল্পের ১০ জন নারী শ্রমিক রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করছে। তাঁদের কাছে গিয়ে নারী দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের আক্কাছ উদ্দিনের স্ত্রী নারী শ্রমিক তাহেরা আক্তার (৩৭) বলেন, নারী দিবস সম্পর্কে তাঁরা কিছু-ই জানে না। এমন কি নারী দিবস সম্পর্কে কেউ তাঁদের কখনও কিছু-ই বলেনি। তিনি আরও জানান, স্বামী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ শয্যাশায়ী। তাঁর ডান হাত ও পা অবস হয়ে পড়েছে। কোন কাজ করতে পারে না। দুই ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালাতে তিনি মাটি কাটার কাজ করছেন। কিন্তু দৈনিক মাত্র ১৫০ টাকা মজুরিতে তাঁর সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। অথচ, পুর্বষরা একই কাজ করে দৈনিক মজুরি পায় ৪০০-৫০০ টাকা। একই কথা জানালেন, তেউরিয়া গ্রামের হার্নিয়া রোগে আক্রান্ত রইছ উদ্দিনের স্ত্রী নারী শ্রমিক আসমা আক্তার।
রাউতি ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা বীরেন্দ্র সুত্রধরের স্ত্রী কৃষি শ্রমিক আরতি রানী সুত্রধর বলেন, আমরা গরীব মানুষ, নারী দিবস কি তা আমি জানি না। মানুষের জমিতে কাজ করে কোন মতে খাইয়ে না খাইয়ে সংসারটি চলে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা ফোরামের সভাপতি নারীনেত্রী জাহানারা আক্তার বলেন, আমরা অসহায় নারীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি। তাঁদের সহযোগিতা করতে চেষ্টা করি।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৮:২৫ অপরাহ্ণ | মার্চ ০৭, ২০১৬