| সন্ধ্যা ৬:৪৮ - সোমবার - ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ - ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ঈশ্বরগঞ্জে ইভটিজিংয়ের শিকার ৩ বোন

 

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি- ৫ মার্চ ২০১৬, শনিবার,
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে পৌর সদরের কাকনহাটি গ্রামে আট বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে তিন বোন ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বখাটের আক্রমনের শিকার হয়ে আহত মা-বাবা ২৩দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও শয্যাশায়ী। আতংকে দিন কাটছে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী আফরোজা আক্তারের।
জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পৌর সদরের কাকনহাটি গ্রামের আব্দুস সোবানের মেয়ে সুরাইয়া আক্তার, সবুজা আক্তার ও আফরোজা আক্তার কে পাশ্ববর্তী বাড়ির আলী আহাম্মদ ওরফে ফকর উদ্দিনের বখাটে ছেলে সিএনজি চালক ফারুক মিয়া (২৫) বিগত আট বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে উত্যক্ত করে আসছে। আট বছর আগে সুরাইয়া আক্তার ও এক বছর আগে সবুজা আক্তারের বিয়ে হলেও পিছু ছাড়েনি বখাটে ফারুক। ইতি মধ্যে ছোট বোন চরনিখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী আফরোজা আক্তারেরও পিছু নিয়েছে সে। গত ১২ ফেব্র্বয়ারী পিত্রালয়ে স্বামী কাঞ্চন মিয়াকে সাথে নিয়ে সবুজা আক্তার বেড়াতে আসলে স্বামীর সামনেই উত্যক্তার শিকার হন তিনি। এসময় স্বামী কাঞ্চন মিয়া তার প্রতিবাদ করলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে প্রাননাশের হুমকী দেয় বখাটে ফারুক। পরে বিষয়টি স’ানীয় গণ্যমান্যদের জানালে ফারুক ৰিপ্ত হয়ে সবুজা আক্তারের মা মালেকা বেগম ও পিতা আব্দুস সোবানের উপর হামলা চালায়। ইট দিয়ে মালেকা বেগমের মাথায় ও হাতে উপুর্যপরী আঘাতের ফলে মালেকা বেগমের একটি হাত ভেঙ্গে যায় ও মাথা ফেটে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ সময় তার স্বামী আব্দুস সোবান তাকে উদ্ধার করতে এলে তাকেও মাথায় আঘাত করা হয়। পরে এলাকাবাসী উভয়কে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই দিনই আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্যে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে প্রেরন করা হয়। মারধরের ঘটনাটি নিয়েও ২৩ ফেব্র্বয়ারী ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে আটক হয়েছে ফার্বক। চরনিখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী আফরোজা আক্তারের স্কুলে গিয়ে জানা যায়, ভর্তি হওয়ার পর থেকে সে স্কুলে এসেছে ১৩দিন। প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল জানান মেয়েটি ই-রেগুলার তবে সেটি ইভটিজিংয়ের কারণে কিনা তিনি তা জানেন না। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমান বলেন, ফারুক দুষ্ট প্রকৃতির ছেলে। তার কারণেই দুই পরিবারে সৃষ্ট বিবাদ মিটমাট করা যায়নি।
মনোয়ারা খাতুন, আব্দুস ছাত্তার, শম্পা বেগমসহ অর্ধশত এলাকাবাসী জানান, ফারক শুধু আব্দুস সোবানের মেয়েকেই নয় সে যে কোন মেয়ে দেখলেই তাকে উত্যক্ত করে। তার এসব কর্মকান্ডে অতিষ্ট এলাকাবাসী। প্রায় সময়ই তাকে মধ্যপ অবস’ায় অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে শোনা যায়।
উত্যক্তের শিকার সবুজা আক্তার জানান, বখাটের উৎপাতে বেসরকারী একটি ক্লিনিকের চাকুরী ছাড়তে হয়েছে তাকে। ১৮ ফেব্র্বয়ারী ২০১১ সালে তিনি নিজে বাদি হয়ে ফারুক কে আসামী করে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেও মুক্তি মিলেনি তার। ১বছর আগে বিয়ে হলেও এখনো তিনি ভয়ে পিত্রালয়ে বেড়াতে আসতে পারেননা। ৮মাসের অন্ত:সত্ত্বা হয়ে স্বামীকে নিয়ে বেড়াতে এসেও উত্যক্তের শিকার হয়েছেন তিনি। ওই ঘটনায় মাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে বাবাকেও মারধর করেছে। ফারুকের অত্যাচারে ৮ বছর আগে বড় বোন সুরাইয়া আক্তারকে বিয়ে দিতে হয়েছে গোপনে। সম্প্রতি ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছোট বোন আফরোজা আক্তারের পিছু নেওয়াতে তার স্কুলে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। আফরোজা আক্তার বলেন, স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ফারুক ভাই বিভিন্ন প্রকার অশালীন মন্তব্য করে ও আমাকে কু-প্রস্তাব দেয় ।
মামলার বাদী সুরাইয়া আক্তার জানান, মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে ফার্বক আটক হলেও তার লোকজন বিভিন্ন ভাবে হুমকী দিয়ে যাচ্ছে। এতে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। ফার্বক জামিনে মুক্ত হলে তাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্খা করছেন তারা।
ফার্বকের বাবা ফকর উদ্দিন জানান, তিন বোনকে ইভটিজিংয়ের বিষয়টি সত্য নয়। আফরোজা আক্তার ছোট মেয়ে, তাকে কি ইভটিজিং করবে। তার ছেলে সবুজা আক্তারের স্বামীর কাছে মোবাইল নাম্বার চাইলে তার বাড়িতে এসে ওরাই আক্রমন শুর্ব করে। এতে উভয় পৰের লোকজনই আহত হন। তাদের লোকজনের মাথায়ও সিলি করতে হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বোরহান উদ্দিন জানান, উভয় পৰে মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ইভটিজিংয়ের বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস’া নেওয়া হবে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৫:৪৩ অপরাহ্ণ | মার্চ ০৫, ২০১৬