ময়মনসিংহে ৮ পৌরসভার নির্বাচন : মেয়র পদে আওয়ামীলীগ ৬ টিতে বিএনপি ২টিতে বিদ্রোহের আগুন
মতিউল আলম, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫, বুধবার
ময়মনসিংহ জেলায় ৮টি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করে প্রচারনা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকা। মেয়র পদে ৮ পৌরসভার মধ্যে ৬টিতেই বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক প্রার্থীরা । বিএনপি মনোনীত ধানের শীষে ২টি পৌরসভা বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। সাধারণ ভোটারেদের মতে সব পৌরসভায় শুধু নৌকা ও ধানের শীষে লড়াই হবে না। দু’দলেই বিদ্রোহীরাও বড় ফ্যাক্টর হয়েছে দাঁড়িয়েছে। যে ৬টি পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সেগুলো হচ্ছে ত্রিশাল, ভালুকা, ঈশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুর, মুক্তাগাছা, ফুলপুর। বিএনপির ফুলাবাড়ীয়া ও ভালুকা। তারা দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এর মধ্যে ফুলপুরে আওয়ামীলীগের সাবেক মেয়র মো, শাহজাহান, ত্রিশাল আওয়ামীলীগের সাবেক মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামান, গৌরীপুর আওয়ামীলীগের সাবেক মেয়র শফিকুল ইসলাম হবি ও ভালুকায় বিএনপির সাবেক মেয়র মফিজ উদ্দিন সরকার ও ফুলবাড়ীয়া বিএনপির নেতা চান মাহমুদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। বিদ্রোহী প্রাথীদের প্রচার প্রচারনায় প্রকাশ্যে দলীয় লোকজন দেখা না গেলে গোপনে বিদ্রোহীদের জন্য কাজ করছেন। এরিপোর্ট লেখা পর্যন- সময়ে মেয়র প্রার্থীদের অবস্থান তুলে ধরা হল।
ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা ঃ ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন মেয়র পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুছ ছাত্তারের সম্মন্ধী বর্তমান মেয়র মো. হাবিবুর রহমান হাবিব (নৌকা), আ’লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুস সাত্তার (নারকেল গাছ) ও তাঁতী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন রিপন (রেল ইঞ্জিন) ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পৌর বিএনপির সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ ভুলু (ধানের শীষ)। ্এখানে মুলত নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে লড়াই হবে। তবে এখানে আওয়ামীলীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ঝুকিতে রয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।
নান্দাইল পৌরসভাঃ নান্দাইল পৌরসভায় মেয়র পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামীলীগ মনোনীত রফিক উদ্দিন ভুইয়া (নৌকা), বিএনপি মনোনীত বর্তমান মেয়র এ এফ এম আজিজুল ইসলাম পিকুল (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির শফিকুজ্জামান জুয়েল (লাঙ্গল), জাসদের আমরু মিয়া (মশাল) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন শফিকুল ইসলাম (ফোন)। এখানে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে লড়াই হলেও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপির প্রার্থী পিকুল। উপজেলা আওয়ামীলীগের আভ্যন-রীন কোন্দলের কারণে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর অবস্থা অনেকটা নাজুক।
গৌরীপুর পৌরসভা ঃ গৌরীপুর পৌরসভায় মেয়র পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামীলীগের বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম (নৌকা), আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক মেয়র শফিকুল ইসলাম হবি (নারিকেল গাছ), বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পৌর যুবদলের নেতা সুজিত কুমার দাস (ধানের শীষ)। সাধারণ ভোটারদের মতে এখানে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের ২জন প্রার্থী থাকায় কারণে এবং বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কর্মী-সমর্থকরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে না নামায় নৌকা ও ধানের শীষের অবস্থা দুর্বল।
মুক্তাগাছা পৗরসভাঃ মুক্তাগাছা পৗরসভায় মেয়র পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামীলীগ মনোনীত বর্তমান মেয়র আঃ হাই আকন্দ (নৌকা), আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বহিস্কৃত উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ বাপ্পী (ডাবগাছ), বিএনপির মনোনীত শহিদুল ইসলাম শহিদ (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির আতাউর রহমান (লাঙ্গল) ও জাসদের শরীফুল ইসলাম বিপ্লব (মশাল)। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বাপ্পী নৌকার জন্য ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ ভোটাদের মতে এখানে ত্রিমুখী লড়াই হবে। আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী ও বিএনপির দুর্বলতার সুযোগে এখানে লাঙ্গলের গৌরব পুনরুদ্বারে মরিয়া জাতীয় পার্টি।
ফুলপুর পৌরসভাঃ ফুলপুর পৌরসভায় মেয়র পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামীলীগ মনোনীত শশধর সেন (নৌকা) আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মেয়র মোঃ শাহজাহান (জগ), বিএনপির মনোনীত ফুলপুর পৌর বিএনপির নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল হক (ধানের শীষ)। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রাথী থাকায় বিএনপির প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। সাধারণ ভোটারদের মতে এখানে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে।
ত্রিশাল পৌরসভাঃ ঃ ত্রিশাল পৌরসভায় মেয়র পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামীলীগ মনোনীত যুবলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম সরকার জুয়েল (নৌকা), আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামান (জগ), বিএনপির মনোনীত পৌর বিএনপির নেতা আমিনুল ইসলাম সরকার আমিন (ধানের শীষ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রাথী থাকায় বিএনপির প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। সাধারণ ভোটারদের মতে এখানে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে।
ফুলবাড়ীয়া পৌরসভাঃ ঃ ফুলবাড়ীয়া পৌরসভায় মেয়র পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র গোলাম কিবরিয়া (নৌকা), বিএনপির মনোনীত ওমর ফারুক (ধানের শীষ) বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন চান মাহমুদ (জগ) ও জাতীয় পার্টির জিয়াউর রহমান (লাঙ্গল)। এখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রাথী থাকায় আওয়ামীলীগের প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। সাধারণ ভোটারদের মতে এখানে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে।
ভালুকা পৌরসভাঃ ঃ ভালুকা পৌরসভায় মেয়র পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র ডাঃ একেএম মেজবাহ উদ্দিন (নৌকা), বিএনপির মনোনীত উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক আলহাজ্ব হাতেম আলী খান (ধানের শীষ), বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক মেয়র আলহাজ্ব মফিজ উদ্দিন (জগ) ও আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী ওমর ফারুক (নারিকেল গাছ)। এখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রাথী থাকায় আওয়ামীলীগের প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। সাধারণ ভোটারদের মতে এখানে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে।
গফরগাঁও পৌরসভাঃ ঃ গফরগাঁও পৌরসভা নির্বাচন আগামী ৩০ ডিসেম্বর হওয়ার কথা থাকলে সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা সংশোধন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গফরগাঁয়ের সাবেক এমপি আবুল হাসেম এর দায়ের করা এক রিটের প্রেক্ষিতে গত ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ৩মাসের জন্য নির্বাচন স’গিত করেছে।