ছাড়পত্র ছাড়াই গৌরীপুরে অপরিকল্পিত অবৈধ ইটভাটায় পুড়ানো হচ্ছে কাঠ

সাজ্জাতুল ইসলাম সাজ্জাত,১৪ নভেম্বর ২০১৫, শনিবারঃ সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে প্রাশাসনের নাকের ডগায় ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ইটভাটাগুলোতে পুরোদমে শুরু হয়েছে ইট তৈরির কাজ। পরিবেশ নীতিমালা উপেক্ষা করে দেদারসে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে এসব অবৈধ ইটভাটা। এগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কয়লার পরিবর্তে বনাঞ্চলের কাঠ। ফলে ইটভাটার পার্শ্ববর্তী এলাকায় দেখা দিচ্ছে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। ইটভাটা নির্মাণের আইন থাকলেও তা প্রয়োগ হচ্ছে না। এতে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে উপজেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ইটভাটাগুলোতে ১২০ ফিট উচ্চতার চিমনি ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও এখানে অধিকাংশেরই কোন বাস্তবায়ন নেই। ইট প্রস’তিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভূমির (টপ সয়েল) উর্বর মাটি। এতে ফসলী জমির পাশাপাশি পরিবেশের চরম ক্ষতি সাধন হচ্ছে। তাছাড়া নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ঘনবসতিপুর্ণ এলাকাকায় নির্মিত এ সব ইটভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় আক্রান্ত আশপাশের লোকজন হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, এ্যালার্জি, এ্যাজমা ও চুলকানিসহ নানা রোগে ভুগছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গৌরীপুর উপজেলায় ১৪টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি ইটভাটা জিগজাগ পদ্ধতিতে তৈরী করা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে মাত্র গুজিঁখা এলাকাস্থ বিসমিল্লাহ ব্রিকস ফিল্ড (বিবিএফ) ও শ্যামগঞ্জের এসএস ব্রিকস ফিল্ড। অন্য ৬টি ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আবেদন করে রাখা হয়েছে। সুত্র জানায়, এগুলো পরিবেশ অনুপযোগী না হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের বৈধতা দিচ্ছে না।
তবে তারা এই আবেদনকে পুজিঁ করেই প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে প্রতিবছর নির্বিঘ্নে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে প্রশাসনের তৎপরতা দেখা গেলেও অজ্ঞাত কারণে তারা নিরব হয়ে যান। জিগজাগ ছাড়া বাংলা ভাটার আদলে নির্মিত অন্য ৬টি ইটভাটায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
সরেজমিনে দেখা যায়, গৌরীপুর-শাহগঞ্জ সড়ক ঘেঁষে বোকাইনগর ইউনিয়নের দাড়িয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে তানিয়া ব্রিকস ফিন্ড ও শাপলা ব্রিকস ফিল্ড এর অবস্থান। আর এতে ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পাঠদান। ইটভাটা থেকে উড়ে আসা ধুলোবালি ও ইটভাটায় ব্যবহৃত ইঞ্জিনের উচ্চ শব্দ, শ্রমিকদের হট্টগোল এবং কয়লা-কাঠের কালো ধোঁয়ায় প্রতিনিয়ত স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। স্কুলের পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পুড়ানো ইট, রয়েছে মাটির স’প। আর ওই ইট ও মাটির স্তুপ থেকে সামান্য বাতাসে ধুলোবালি উড়ে যাচ্ছে স্কুলের দিকে। স্থানীয়দের দাবি, স্কুলের পাশে ইটভাটা থাকার কারণে বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়ার কোনো পরিবেশ নেই। বিদ্যালয়টিতে পড়াশোনা করছে প্রায় দু’শতাধিক শিক্ষার্থী। স্কুলটিতে অধ্যয়নরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছে, ধুলোর মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে, স্কুল চলাকালীন অধিকাংশ সময় জানালা-দরজা বন্ধ রেখে ক্লাস করতে হয়। এছাড়া ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকদের চেঁচামেচি এবং ভাটায় ব্যবহৃত লরী-ট্রাকের উচ্চ শব্দের ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান মারাত্মক ভাবে ব্যবহত হচ্ছে। উপজেলার কোন ইটভাটাই নিয়ম মেনে তৈরী হয়নি মন্তব্য করে তানিয়া ব্রিকস ফিল্ডের মালিক মোঃ কামাল উদ্দিন লিটন বলেন, দুই বছর আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু আজও তা পাইনি।
এদিকে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ও এলজিইডির তৈরি উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক থেকে আধা কিলোমিটারের মধ্যেও ভাটা করা যাবে না। কিন’ এ নিয়ম কেউ মানছে না। প্রতিটি ইটভাটাই রাস্তার পাশে তৈরী করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শীত মৌসুম আসলেই ইটভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়। এতে শীতকালে পরিবেশের চরম বিপর্যয় হয়। কালো ধোঁয়া পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। এদিকে পরিবেশের পাশাপাশি মানুষের ক্ষতিসাধন করলেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন এসব অবৈধ ইটভাটাগুলো উচ্ছেদ করতে পারছে না। বার বার উদ্যোগ নিলেও নানন জটিলতার কারণে প্রশাসনকে পিছু হটতে হয়েছে।
গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান ফকির বলেন, ‘ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও বালুতে শিশুদের পাকস্তলিতে সংক্রমনের ফলে সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট রোগ হতে পারে। এ রোগ বারবার দেখা দিলে শিশুর স্বাস্থ্যহানি ঘটে।
এ বিষয়ে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দূর-রে শাহওয়াজ এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।