সন্তান সেজে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার রিপন
সাজ্জাতুল ইসলাম সাজ্জাত, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
ময়মনসিংহের গৌরীপুর থেকে নিখোঁজ হওয়ার ১৫ বছর পর মায়ের কোলে ফিরে আসা তোফাজ্জল আসলে একজন প্রতারক। তিনি ওই মায়ের হারিয়ে যাওয়া সন্তান নয়। ১৫ বছর পর যে মা স্নেহের আঁচলে জড়িয়ে রেখেছিলেন সেই মায়ের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন তিনি। তার আসল নাম রিপন মাতব্বর। দীর্ঘদিন ধরে নাম পরিচয় গোপন রেখে তিনি প্রতারণা করে আসছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে আটক করেছে গৌরীপুর থানা পুলিশ। থানায় রেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, গৌরীপুর উপজেলার কোনাপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেমের ছেলে তোফাজ্জল প্রায় ১৫ বছর আগে নেত্রকোনায় খালার বাড়িতে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় তোফাজ্জলের পরিবার কোনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কলিম উদ্দিন (৬৫), আব্দুল খালেক (৪০) ও অলিসহ (৪৫) বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে কলিম উদ্দিন ও আব্দুল খালেক এই মামলায় জেল খেটে বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন। তবে অলি ফেরারি অবস্থায় তিন বছর আগে মারা গেছেন। বর্তমানে মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে। গত ২১ অক্টোবর রিপন নামে ওই যুবক নিজেকে আবুল হাসেমের হারানো ছেলে তোফাজ্জল হিসেবে দাবি করে তাদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তবে হারানোর ১৫ বছর পর বাড়িতে ফিরে আসায় পুলিশ তাকে আটক করে জবানবন্দির জন্য আদালতে পাঠায়। ৩ নভেম্বর তাকে জামিনে মুক্তি দেন আদালত। এদিকে, ১৫ বছর পর তোফাজ্জল বাড়িতে ফিরে আসার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে বিভিন্ন সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়, ‘তোফাজ্জল কোনাপাড়া গ্রামে প্রতারণার জন্য আশ্রয় নিয়েছেন’। প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয় আনুমানিক তিন মাস আগে প্রায় একই রকম দেখতে এক যুবক জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার একটি প্রামে প্রতারণার আশ্রয় নেন। পরে টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যান। বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টিম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে গিয়ে ওই তরম্নণকে জেরা করলে সন্দেহ হয়। পরে পুলিশ তাকে আটক করে। গৌরীপুর থানা পুলিশ জানায়, ওই প্রতারকের আসল নাম রিপন। তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার হামিদদি গ্রামের মজিবুর মাতব্বরের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নাম পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে আসতেন। প্রতারণা করে তিনি একাধিক বিয়েও করেছেন। ওই যুবক মাদকের চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এসব তথ্য পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আখতার মোর্শেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, প্রতারক রিপন আবুল হাসেমের বাড়িতে প্রতারণা করার জন্য আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রিপনের বিরম্নদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এবং তাকে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রতারণার স্বীকার তোফাজ্জলের বাবা আবুল হাসেম বলেন, ‘১৫ বছর পর হারানো সনত্মান ফিরে আসায় পরিবারে খুশির সীমা ছিল না। পুলিশ ছেলেকে আদালতে পাঠালে আমি ২০ হাজার টাকায় একটা গরম্ন বিক্রি করে মামলার খরচ চালিয়ে তাকে জামিনে বের করে আনি। কিন’ সে যে আমার ছেলে তোফাজ্জল নয় এটা ভাবতেও পারিনি। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই, এই প্রতারকের যেন দৃষ্টানত্মমূলক শাসিত্ম দেয়া হয়।##