| দুপুর ১:২৫ - শুক্রবার - ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ - ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - ১৩ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

অপহরণের ১৫ বছর পর বাবা-মা কাছে ফিরে এলো সন্তান !

সাজ্জাতুল ইসলাম সাজ্জাত, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) থেকে, ২৩ অক্টোবর ২০১৫, শুক্রবার,

অপহৃত তোফাজ্জল (২৬) দীর্ঘ ১৫ বছর পর গত বুধবার বাবা-মার কাছে ফিরে আসে। প্রথমে নিজ সন্তানকে চিনতে অসুবিধা হলেও পরে ছোটবেলার ছবি ও কপালের পাশে কাটা দেখে বাবা-মা ঠিকই চিনেছেন। হারানো সন্তানকে ফিরে পেয়ে পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছিল। কিন’ আইনের গ্যারাকলে সন্তানকে তারা বুকে আগলে রাখতে পারেননি। পুলিশ তাকে আটক করে আদালতে পাঠিয়েছে। কারণ তোফাজ্জল হারানোর পর থেকে তাকে নিয়ে অপহরণ মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। এই মামলায় বিনা অপরাধে অনেকে জেল কেটেছেন। এমন আলোচিত ঘটনাটি ঘটে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২ নং গৌরীপুর ইউনিয়নের কোণাপাড়া গ্রামে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেমের ছেলে তোফাজ্জল তৎকালিন সময়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। একদিন খালার বাড়ি নেত্রকোনায় বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় সে। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পায়নি। তবে তোফাজ্জল নিখোঁজ হওয়ার পর মুক্তিপণ দাবি করে নামে-বেনামে বিভিন্ন উড়ো চিঠি আসে তার পরিবারের কাছে। পরে ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে সন্দেহে প্রতিবেশী কলিম উদ্দিন (৬৫), আব্দুল খালেক (৪০) ও অলিসহ (৪৫) বেশ কয়েকজনের নামে মামলা করা হয়। এ মামলায় কয়েকজন জেল কেটেছেন। মামলাটি এখনও বিচারাধীন । এরই মধ্যে অলি নামে একজন আসামী ফেরারী অবস’ায় তিন বছর আগে মারা গেছেন। হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটির বর্ণনা দিয়ে তোফাজ্জল বলেন, ১৫ বছর আগে খালার বাড়ি নেত্রকোনায় যাওয়ার জন্য আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে গৌরীপুর রেলস্টেশনে আসি। ট্রেন আসতে তখন অনেক দেরি। এ সময় স্টেশন চত্বরে সাপুড়েরা সাপের খেলা প্রদর্শন করছিল। সাপের খেলা দেখার জন্য আমি সেখানে গেলে কেউ আমাকে চকোলেট খেতে দেয়। চকলেট খাওয়ার পর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি নদীর পাশে সাপুড়েদের আসত্মানায়। পরে জানতে পারি, আমাকে অপহরণ করে ভারতের আসামে আনা হয়েছে। এরপর মা-বাবার কাছে ফিরে আসার জন্য অনেক কান্নাকাটি করলেও আর ফিরে আসতে পারেনি।’ তখন সাপুড়েদের আসত্মানায় দিলীপ নামে এক সাপুড়ে আমাকে তার ছেলে বানায়। তারপর তার পরিবারের সঙ্গে যাযাবরের মতো বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। সমপ্রতি দীলিপ তার মেয়ে সুমির সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক করে। কিন’ আমি তার মেয়েকে বিয়ে করতে আগ্রহী ছিলাম না। তাই সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে বেনাপোল সীমানত্ম দিয়ে কিছুদিন আগে বাংলাদেশে আসি। এরপর প্রথমে ঢাকা, তারপর সেখান থেকে গৌরীপুর আমার বাবার বাড়িতে চলে আসি।’
এদিকে তোফাজ্জল অপহরণ মামলার আসামি কলিম উদ্দিন বলেন, ‘তোফাজ্জলের পরিবারের মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে আমি ও আমার ভাতিজা খালেক জেল খেটেছি। মামলা চালাতে গিয়ে আমাদের জমি-বাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে। আমরা এর বিরম্নদ্ধে আইনানুগ ব্যবস’া নেব।’
গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার মোর্শেদ জানান, যেহেতু তোফাজ্জল অপহরণ মামলার ভিকটিম, তাই জবানবন্দি নেয়ার জন্য তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৭:২৬ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ২৩, ২০১৫