প্রলোভনে ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরলো শিশু ইয়াছিন
সিম্মী আহাম্মেদ, কিশোরগঞ্জ, ২২ অক্টোবর ২০১৫, বৃহস্পতিবার,
সামান্য টাকার প্রলোভনে ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে ফিরলো শিশু ইয়াছিন। কিশোরগঞ্জে সদর উপজেলার কড়িয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর এই ছাত্রকে অর্থের প্রলোভনে লাগানো হয়েছিল ইট ভাটার কাজে। ইটের উঁচু স’প থেকে ইট নামাতে গিয়ে ইটের নীচে চাপা পড়ে সে। মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত বেরোয়। নাক আর মুখম-ল কেটেও রক্তড়্গরণ হতে থাকে। অসহ্য যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠা কচি দেহ নেতিয়ে পড়ে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী মুমূর্ষু অবস’ায় শিশুটিকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কাটা জায়গায় বিশটির মতো সেলাই করতে হয়। সোমবার সকালে এ ঘটনার পর দু’দিন হাসপাতালে রাখা হলেও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা না দিয়েই রহস্যজনক কারণে বুধবার আহত শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়া হয়। বাড়িতে ফেরার পর শিশু ইয়াছিনের অবস’া খারাপ হতে থাকলে তাকে বৃহস্পতিবার ফের হাসপাতালে নেয়া হয়। শিশু ইয়াছিনের বাবা কড়িয়াইল গ্রামের দিনমজুর আবদুল কুদ্দুছ ছেলের সুচিকিৎসা ও সুস’তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কড়িয়াইল গ্রামে গিয়ে জানা যায়, শিশু ইয়াছিন একই গ্রামের মোক্তার হোসেনের ছেলে আলহাজ্ব ওয়াজেদুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র আজহারম্নল ইসলাম হাতিমের সঙ্গে সোমবার সকালে খেলতে যাচ্ছিল। এ সময় পার্শ্ববর্তী এসটিডি ইটভাটার এক কর্মচারী তাদেরকে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ভাটার বিশাল বিশাল স’প থেকে ইট নামাতে বলে। এক গাড়ি ইট নামিয়ে দিলে তাদের ১০ টাকা দেয়া হবে, এমন প্রলোভনে পড়ে অবুঝ শিশুরা ইট নামানোর কাজে লেগে যায়। এক পর্যায়ে পুরো স’পের ইট ইয়াছিন এবং হাতিমের ওপর পড়ে যায়। তাদেরকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাতিম একটু বড় হওয়ায় কোমড় এবং পীঠে ব্যথা পেয়ে কিছুটা সামলে উঠলেও ইয়াছিনের অবস’া আশঙ্কাজনক। তার মাথা ফেটে যায়। নাক-মুখ ফেটে রক্তড়্গরণ হয়। কয়েকটি দাঁতও নড়ে গেছে।
ইয়াছিনের বাবা দিনমজুর আব্দুল কুদ্দুছ অভিযোগ করেন, তার ছেলের পড়নে স্কুল ড্রেস থাকার পরও তাকে প্রলোভন দেখিয়ে ইটভাটার কাজে লাগানো হয়। ইটভাটার কাজের মতো ভারি কাজে তার ছেলের মতো একটি শিশুকে কাজে লাগানোর আগে ইটভাটার কেউ তার অনুমতিও নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। সেখানে ইটের নিচে চাপা পড়ে ইয়াছিন গুরম্নতর আহত হওয়ার পর ইটভাটার কেউ তার ছেলের কোন খোঁজখবর নেয়নি। এছাড়া চিকিৎসার জন্য ভাটার মালিক আব্দুল আহাদ মানিক কোন খরচও বহন করেননি। এমনকি রোগীর অবস’া খারাপ থাকার পরও বুধবার তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে অসহ্য যন্ত্রণা হওয়ায় বৃহস্পতিবার ইয়াছিনকে আবার হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, ইটভাটার কাজের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের নিয়োজিত করার বিরম্নদ্ধে শাসিত্মযোগ্য অপরাধের বিধান থাকলেও এলাকার শিশুদের নিয়মিতই ইটভাটাটিতে সামান্য অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে কাজে লাগানো হয়। এছাড়া লোকালয়ের পাশে ফসলি জমিতে অবসি’ত এই ইটভাটাটি বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী সম্প্রতি মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচীও পালন করেছে।
ভাটায় গিয়ে মালিকের প্রতিনিধি নূরম্নজ্জামানকে বিদ্যালয়ের দু’টি শিশুকে কি করে কাজে লাগানো হলো প্রশ্ন করলে বলেন, তাদেরকে তো আর জোর করে কাজে লাগানো হয়নি। এ ছাড়া শিশুরা তো সব জায়গায়ই কাজ করছে। তিনি ইয়াছিনের চিকিৎসা বাবদ কিছু টাকা দিয়েছেন বলেও জানান।
পার্শ্ববর্তী দামপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নজরম্নল ইসলাম এ ঘটনায় ড়্গোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন স্কুল বন্ধ। স্কুল খোলার পর তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে শিড়্গক-শিড়্গার্থীদের নিয়ে আন্দোলনে নামবেন।