| সকাল ১১:০০ - বৃহস্পতিবার - ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা জানাতে জনতার ঢল

অনলাইন ডেস্ক | ৩ অক্টোবর ২০১৫, শনিবার,

জনতার অভিনন্দন ও ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবর্ধনা জানাতে দীর্ঘ ১৪ কিলোমিটার পথজুড়ে জনতার ঢল নামে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০ তম অধিবেশনে যোগদান শেষে আজ শনিবার দুপুর ১টা ৫ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরে নামার পর থেকে গণভবনে পৌঁছানো পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি।
বেলা ২টা ১৭ মিনিটে তিনি গণভবনে পৌঁছান। এই পথে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে পতাকা উড়িয়ে, ফুল ছিটিয়ে, হাত নেড়ে ও মুহর্মূহু শ্লোগানে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান হাজারো নেতা-কর্মী। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাড়িতে বসে হাত নেড়ে উপস্থিত জনতার অভিনন্দনের জবাব দেন। বিমানবন্দর থেকে গণভবনে পৌঁছতে শেখ হাসিনার সময় লাগে প্রায় ৫০ মিনিট।
বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে জনতার ঢল নামে। ব্যান্ড পার্টি, ভুভুজেলা বাজিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো হয়। হাতে থাকা জাতীয় ও দলীয় পতাকা উড়িয়ে স্বাগত জানান। কখনো ছিটিয়ে দেন ফুল।
জাতিসংঘের পরিবেশ-বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার এবং আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের দেওয়া ‘আইসিটি অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
বিমানবন্দরে নামার পরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, শিশু ও নারী বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল মতিন খসরু, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ড. হাছান মাহমুদ, এডভোকেট আফজাল হোসেন এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিশেষ বিমান ঢাকার আকাশ সীমায় প্রবেশের আগেই বিজয় সরণি থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতে জনতার ঢল নামে। দুপুর ১২ টা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে দাঁড়ানোর কথা থাকলেও বেলা ১১ টা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের পূর্ব নির্ধারিত স্পটগুলোতে গিয়ে অবস্থান নিতে থাকেন।
এ সময়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ সেলিম খোলা জিপে করে দলীয় নেতাকর্মীদের অবস্থান পরিদর্শন করেন। এ সময়ে তাদের হাতে থাকা জাতীয় ও দলীয় পতাকা উড়াতে দেখা গেছে।
বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, কুড়িল বিশ্বরোড, শ্যাওড়া, কাকলী, বনানী, সৈনিক ক্লাব, চেয়ারম্যানবাড়ি, আমতলী, মহাখালী, জাহাঙ্গীর গেট, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, বিজয় সরণি থেকে গণভবন পর্যন্ত পুরো সড়কই ছিল আওয়ামী নেতাকর্মীদের দখলে। নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, সাভার, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুরসহ ঢাকা ও ঢাকার আশপাশ থেকে শত শত বাস-ট্রাকে করে, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সংসদ সদস্য, দলীয় নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা-অভিনন্দন জানাতে আসেন। এছাড়াও গাজীপুরের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলের নেতৃত্বে হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা দক্ষিণখান এলাকায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।
ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারসহ ঢাকঢোল বাজিয়ে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, কৃষিবিদ, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক নেতা, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, সংস্কৃতি কর্মী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, নারী সংগঠন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারাসহ সর্বস্তরের মানুষ বিভিন্ন স্পটে সমবেত হয়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে সুশৃঙ্খল করতে বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত ৮টি রুটে বিভক্ত করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নেতৃত্বে ১৪ দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসব রুটে দাঁড়িয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেন। এর মধ্যে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, জাহিদ আহসান রাসেল ও ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা’র নেতৃত্বে বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত; রাশেদ খান মেনন, একেএম রহমত উল্লাহ ও সাবের হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে খিলক্ষেত থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার; হাবিবুর রহমান মোল্লা ও সানজিদা খানমের নেতৃত্বে কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে হোটেল রেডিসন; কামাল আহমেদ মজুমদারের নেতৃত্বে হোটেল রেডিসন থেকে কাকলী মোড়, কাকলী মোড় থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত দলের সহযোগী সংগঠনগুলো; জাহাঙ্গীর গেট থেকে বিজয় সরণি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং র‌্যাংগস ভবন থেকে গণভবন পর্যন্ত ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে নিজ নিজ এলাকার দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অবস্থান নেন।
এছাড়া কেন্দ্রীয় ১৪ দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলালীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্পটে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
এদিকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় দাঁড়িয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানানো হয়। এ সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাসভবন গণভবনে পৌঁছানোর পরে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, ক্রিকেটারসহ গুণীজনেরা। জাতিসংঘে গিয়ে দু’টি সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করায় শনিবার প্রধানমন্ত্রী গণভবনের মূলভবনের ফটকে পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রিজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও তাসকিন আহমেদ, এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম ও নিশাত মজুমদার প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী ফটকে পা রাখতেই রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী বন্যা সুর তোলেন- ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’। এসময় উপস্থিত অন্যরা তার সঙ্গে খালি গলায় গেয়ে ওঠেন, ‘মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে/ বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে।’
এ অভ্যর্থনা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ অর্জন জনগণের, জনগণের প্রাপ্য এ পুরস্কার। দু’টি পুরস্কারই পুরো জাতির ও দেশের জন্য সম্মানের।’
এর পরে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সবার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ।  (বাসস) :

সর্বশেষ আপডেটঃ ৯:০৯ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ০৩, ২০১৫