| দুপুর ২:৫৪ - বৃহস্পতিবার - ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের স্বল্প সুদের ক্ষুদ্র ঋণ : গ্রামাঞ্চলে আগ্রহ বাড়ছে

 

॥ আব্দুল খালেক খান পিভিএম-সেবা ॥
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী এদেশের একটি সর্ব বৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এত বড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পৃথিবীর অন্য কোন দেশে নেই। এটা আমাদের দেশের জন্য কম গৌরবের কথা নয়। এ বিশাল গণ-বাহিনীর একটা বড় অংশ নিজেদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। এরা দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়োজিত। এমন সংগঠনের সদস্য হতে পারা অবশ্যই গর্বের। যারা এ সংগঠনের সদস্য এবং কর্মকর্তা তারা সত্যই গর্বিত এবং আনন্দিত। দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কাজ করা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করা, দেশের যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলা করাসহ সমাজের সর্বত্রে শান্তি বজায় রাখা এদের দায়িত্ব। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ও কর্মকর্তাগণ দেশ গঠনে এবং দেশের নিরাপত্তার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৭৬ সালে দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ভিডিপি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর অদ্যাবধি সমগ্র দেশব্যাপী এ সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬০ লক্ষাধিক। এদের অধিকাংশ মৌলিক প্রশিক্ষণ ও আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং বিভিন্ন পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এ সকল প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত সদস্যদের আত্ম-নির্ভরশীল পারিবারিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে। ব্যাংকটি সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি বিশেষায়িত সংবিধিবদ্ধ উন্নয়ন সংস্থা। সংগঠনের সদস্যদের সহযোগিতা ও উন্নয়নের জন্যই এ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যার মালিক সরকার পড়্গ ২৫% এবং সংগঠনের সদস্য ও কর্মকর্তাগণ ৭৫%। ১৯৯৬ সালে ব্যাংকটি মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করে। দেশের বিভিন্ন এনজিওদের মত বেশি সুদ না নিয়ে কম সুদে ঋণ খাটিয়ে সদস্যরা সুফলদায়ক হচ্ছে তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এ বিশেষায়িত আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক। সারাদেশের ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডার সংখ্যা প্রায় ২৮ লক্ষাধিক। এ সকল সদস্যরা ব্যাংকের শেয়ার ক্রয় করেছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। সরকার দিয়েছে তিন ধাপে ৫০ কোটি টাকা। বর্তমান সারাদেশের শেয়ার ক্রয়ের ৩০ কোটি, সরকারের দেয় ৫০ কোটি এবং বিভিন্ন সংস্থা হতে ধার-দেনা করে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার সদস্যদের মধ্যে ২১৭টি শাখার মাধ্যমে প্রায় ৩ শত ৮০ কোটি টাকার ঋণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দেশব্যাপী এ ব্যাংকের ২১৭টি শাখাই এখন সংগঠনের সদস্যদের দারিদ্র মুক্তির প্রাণ কেন্দ্র হিসাবে কাজ করছে। ব্যাংকের স্বল্প সুদের ক্ষুদ্র ঋণ গ্রামাঞ্চলের ভিডিপি সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পাবনা জেলাসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলার শত শত ভিডিপি সদস্য আজ স্বনির্ভর। পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় ক্ষেত্রে তারা আজ বোঝা নয়। তারা এখন অগ্রসর ডিজিটাল বাংলার কর্মীবাহিনী। নানা সীমাবদ্ধতা এবং আর্থিক প্রতিকুলতার মধ্যে গ্রাম পর্যায়েও কাজ করছে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক। ব্যাংকের আর্থিক সংকট ও সীমাবদ্ধতার কারণে বর্তমান দেশের সকল উপজেলার সকল সদস্যগণ এখনও ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। হয়ত অল্প সময়ের মধ্যে সরকারের সহযোগিতায় দেশের সকল উপজেলায় ব্যাংকের শাখা খোলা সম্ভব হবে। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, প্রতি উপজেলা তথা প্রতি শাখার অধীনে যত জন সদস্য আছেন, তাদের অর্ধেকই নারী সদস্যা। এদের মধ্যে অনেকেই আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ গ্রহণ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। সুফলভোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে কয়েক হাজারে দাঁড়িয়েছে। কর্মকর্তারা আরও জানান, সুফলভোগীর গ্রম্নপ সংখ্যা ও ঋণের চাহিদার পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এ ব্যাংকের কর্মপরিধি দ্রুত বেড়েই চলেছে। ঋণ গ্রহিতাদের গৃহিত প্রকল্পের ড়্গেত্র অনুযায়ী ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জন প্রতি ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকায় উন্নীত করেছে। সেই সাথে এসএমই, কনজুমার এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে লড়্গ টাকার অধিক ঋণ বাড়িয়েছে। এরই মধ্যে অনেক সদস্যরা ব্যাংকের এসডিপিএস, লাখপতি স্ক্রীম, হজ্জ সহায়ক জামানত, দ্বিগুন মুনাফা আমানত ও এফডিআরসহ বিভিন্ন আমানত প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণের প্রতি সদস্যদের এত আগ্রহ কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, আমাদের দেশের অনেক এনজিওদের প্রচলিত ঋণ সুদের চেয়ে এ ব্যাংকের সুদের হার তুলনামূলক কম, পরিশোধ পদ্ধতি সহজ ও সুবিধাজনক, সেই সাথে ঋণের পরিমাণও বেশি পাওয়া যায়। এদিকে ব্যাংকের শাখা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিক সংখ্যক সদস্যরা এর সুফল পাওয়া শুরম্ন করেছে। ফলে কয়েক হাজার ভিডিপি পরিবার এ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণে তাদের পরিবারের উন্নতিসহ ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নিয়েছে। দেশের স্থানীয় মৌসুমী ফসল পিয়াজ, আদা, কলা, আলু, আম, মুগডাল, বড়ই ও মসলা জাতীয় ফসল চাষ প্রধান এলাকাসহ দেশের স্থানীয় মৌসুমী প্রধান ফসল উৎপাদনকারী ভিডিপি সংগঠনভূক্ত চাষীদের মধ্যে ঋণ নেওয়ার ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। কিন’ ব্যাংকের আর্থিক সংকট ও কিছু নীতিমালার অভাবে মৌসুমী ফসলের উপর ঋণ প্রদান সমস্যা হচ্ছে। হয়ত ব্যাংক ব্যবস’াপনা কর্তৃপড়্গ বিষয়টি ভেবে দেখবেন এবং সংগঠনভূক্ত চাষীদের মধ্যে আগামীতে বিশেষ প্যাকেজে “মৌসুমী ঋণ” সুবিধা চালু করা হবে। এতে আনসার-ভিডিপি সংগঠনভূক্ত ক্ষুদ্র চাষীরা এ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েই বড় সংসার গঠনের স্বপ্ন দেখতে পারবে। (লেখকঃ আব্দুল খালেক খান পিভিএম-সেবা, পরিচালক আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, পরিচালনা পর্ষদ, রাজশাহী রেঞ্জ, পাবনা, মোবাইল-০১৭১৬-৬৯৭২৬২,ই-মেইল: khalequekhan30@gmail.com)

সর্বশেষ আপডেটঃ ৬:১৫ অপরাহ্ণ | আগস্ট ২৩, ২০১৫