| রাত ১১:৫১ - বৃহস্পতিবার - ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা চাকরি আত্মীকরণ না করায় জামালপুর এলজিইডির ৩৯ কর্মচারীর মানবেতর জীবন যাপন

 

জামালপুর প্রতিনিধি, ১০ আগস্ট ২০১৫, সোমবার: 
মহামান্য হাইকোর্ট ও সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে জামালপুর স’ানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) দীর্ঘদিন ধরে মাস্টাররোলে কর্মরত ৩৯ কর্মচারীর চাকরি আজো আত্মীকরণ করা হয়নি। এসব কর্মচারীদের বকেয়া বেতনও পরিশোধ করা হয়নি। এসব কর্মচারীর মধ্যে ২০ থেকে ২৫ বছর যাবত মাস্টার রোলে কাজ করছেন এমন কর্মচারীও রয়েছেন। গত একবছর যাবত তারা কোন বেতন-ভাতাদি না পেয়ে চরম কষ্টের মধ্য দিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
জানা গেছে, জামালপুরসহ সারাদেশে এলজিইডি’র মাস্টাররোলে কর্মরত আছেন এমন কর্মচারীর সংখ্যা মোট ৮শ ৯০ জন। যাদের চাকরি এখনও আত্মীকরণ হয়নি। চাকরি আত্মীকরণ ও বকেয়া বেতন-ভাতাদি না পাওয়ায় এসব র্কমচারীর মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। তারা এ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বৃহত্তর আন্দোলন-কর্মসূচীর দিকে যাচ্ছেন।
জানা যায়, জামালপুরে এলজিইডিতে মাস্টাররোলে কর্মরত র্কমচারীর মধ্যে গাড়ি চালক, রোলার চালক, অফিস সহকারী, হিসাব সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহায়ক ও নইটগার্ড পদে কাজ করছেন। এদের মধ্যে দীর্ঘ ২০ থেকে ২৫ বছর যাবত কাজ করছেন এমন র্কমচারীও রয়েছেন। প্রতি কর্মদিবসে ২শ ২২ টাকা হিসেবে বেতন দেয়া হলেও তাও আবার বিগত এক বছর ধরে রয়েছে বকেয়া। গত ঈদ-উল-ফিতরে উৎসবেও তাদের কোন উৎসব ভাতা-বেতন প্রদান করা হয়নি।

জামালপুর এলজিইডির রোলার চালক হযরত আলী জানান, এ ব্যাপারে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করা হলে মহামান্য হাইর্কোট ২০১১ সালের ১৬ নভেম্বর র্কমচারীদের পক্ষে নিয়োগ প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেন। বিষয়টি নিয়ে পরে সুপ্রীম কোর্টে আপীল করা হলে সুপ্রীম কোর্ট ২০১৩ সালের ৭ এপ্রিল রায় প্রদান করেন।
ওই রায়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রাখা হয়। এর প্রেক্ষিতে স’ানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স’ানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব প্রধান প্রকৌশলীকে আদালতের নির্দেশনা ও র্শতসমূহ পূরণ করে স’ানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে র্কমরত দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চর্তুথ শ্রেণির বিভিন্ন পদের ৮৯০ জন র্কমচারীকে রাজস্ব খাতে শূন্য পদে আত্মীকরণের/নিয়মিতকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস’া গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন’ আজ র্পযন- আদালত ও সহকারী সচিবের ওই নির্দেশ র্কাযকর হয়নি।
হযরত আলী জানান, ১৯৯০ সালে জামালপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে রোলার চালক পদে তিনি যোগ দেন। চাকরি নিয়মিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের যোগদান করানো হলেও ২৫ বছরেও তা করা হয়নি। প্রতি কর্মদিবসে মাত্র ২শ ২২ টাকা হারে বেতন দেয়া হলেও প্রায় ১ বছর ধরে বকেয়া। ২ ছেলে, বৃদ্ধ মা-বাবা, ভই-বোনসহ ৯ সদস্যর সংসার চালাতে তার কয়েক লাখ টাকা ঋণ হয়েছে। দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা নেয়ায় প্রতিদিন ঋণের বোঝা বাড়ছে। বেতন ভাতা না পাওয়ায় গত ঈদে তার পরিবারের সদস্যরা সেমাই চিনি পর্যন- মূখে দিতে পারেনি। আর নতুন জামা কাপর ক্রয় করা স্বপ্নের মত তার কাছে। তিনি জানান, বড় ছেলে অনার্সে এবং ছোট ছেলে এইচ এসসিতে লেখাপড়া করছে। বর্তমানে আর্থিক সংকটে তাদেরও লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
১৯৯১ সালে জামালপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে রোলার চালক পদে যোগ দেন গোলাম মোস-ফা। তিনি জানান, একমাত্র ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। অর্থ সংকটে লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়েছে। তিনি বলেন, চাকরি অত্মীকরণ হবে হবে আশায় ২৪ বছর কেটে গেল। এখন জীবনের শেষপ্রানে- এসেও চাকরি নিয়মিত হচ্ছে না। বেতন ভাতাও পাচ্ছে না। তিনি বলেন, তার সহকর্মীদের দু’ একজন দাদন ব্যবসায়ীর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
জামালপুর এলজিইডিতে ১৯৯৩ সালে পিকআপ চালক পদে যোগ দেন এস এম রহুল আমীন। তিনি জানান, চাকরি নিয়মিতকরন না হওয়ায় ১ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে চরম কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।  তারা জানান, দীর্ঘদিন যাবত চাকরি করার কারণে সরকারি চাকরির বয়স সীমাও ছাড়িয়ে যাওয়ায় আর কোথাও চাকরির আবেদনও করতে পারছেন না। এমতাবস’ায় তারা হতাশাগ্রস- জীবন যাপন করছেন।
অবিলম্বে তাদের চাকরি আত্মীকরণ/নিয়মিতকরণ করা না হলে তাদের বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
এ ব্যাপারে জামালপুর এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মির্জা তাহেরুল ইসলাম জানান, রাজস্ব খাতে শূন্য পদ সৃষ্টি হলে সেখানে মাস্টাররোল র্কমচারীদের আত্মীকরণ/নিয়মিতকরণ করার। কিন’ বর্তমানে শূন্য পদ না থাকায় ওই র্কমচারীদের আত্মীকরণ করার বিষয়টি জটিলতার মধ্যে রয়েছে।#

সর্বশেষ আপডেটঃ ৬:১৪ অপরাহ্ণ | আগস্ট ১০, ২০১৫