| দুপুর ১:৩৮ - বুধবার - ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ইয়াবার চালানসহ আটক এএসআই মাহফুজ

সারাজীবন নিজেই ইয়াবা ধরতে চালিয়েছে অভিযান। কিন্তু টাকার লোভ সামলাতে পারেনি পুলিশের এএসআই মাহফুজুর রহমান। স্পেশাল ব্রাঞ্চের এ সদস্য কোটিপতি হতে গিয়ে ২৭ কোটি ২০ লাখ টাকার ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়লেন শেষমেশ।
গতকাল ফেনীর লালপুল এলাকা থেকে ৬ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবাসহ তার গাড়ির ড্রাইভারকেও আটক করে র‌্যাব-৭ এর সদস্যরা। এরপর তাদের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে নিয়ে আসা হলে সেখানে মাহফুজ জানায়, পুলিশের টাকায় সংসার চলে না এএসআই মাহফুজের। তাই ইয়াবা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। গত কয়েক বছর ধরে এভাবেই পুলিশ পদের আড়ালে মাদক বিক্রি করে আসছিল সে।
ঢাকার অনেক অভিজাত হোটেলে এসব ইয়াবা বিক্রি করা হয়। সেখানে এক শ্রেণীর ক্রেতা রয়েছে যাদের বেশির ভাগই অভিজাত পরিবারের সন্তান। অন্যদিকে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের মাদক ব্যবসায়ীরাও মাহফুজের কাছ থেকে মাদক কিনতো।
জিজ্ঞাসাবাদে স্পেশাল ব্রাঞ্চের এ সদস্য আরও বলেন, কক্সবাজারের ১০-১২টি চক্র রয়েছে। যারা নিয়মিতভাবে তাকে ইয়াবা সরবরাহ করে। এসব মাদক বিক্রি করে কমিশনের ভিত্তিতে টাকা পয়সা ভাগবাটোয়ারা করা হয়। প্রথম জীবনে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করার পর তার সঙ্গে আলাপকালে এই জগতের খোঁজ পায় মাহফুজ।
রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার জন্য এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে সে। কক্সবাজার ও টেকনাফে নিয়মিত যাতায়াত করার সুবাধে মায়ানমার-থাইল্যান্ডের অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে সখ্য রয়েছে তার। সাগর সীমান্তে ইয়াবা তৈরির জন্য গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি কারখানার মালিকের সঙ্গে মাসে একবার করে দেখা হতো তাদের।
এএসআই মাহফুজুর রহমান র‌্যাব সদস্যদের বলেন, সারা জীবন চাকরি করে কোন গাড়ি বাড়ির মালিক হতে পারবো না। তাই যখনি গ্রামের বাড়িতে যেতাম তখন দেখতাম সহপাঠীরা সব বড় বড় দালান কোঠার মালিক হয়ে গেছে। এ নিয়ে একটা আফসোস কাজ করতো।
তিনি আরও বলেন, ইয়াবা ব্যবসায় ধরা খাওয়া একাধিক আসামির নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর ধীরে ধীরে এই জগতে নাম লেখাই। প্রথম জীবনে ১০,০০০ টাকা পেয়ছিলাম কমিশন হিসেবে। এ চালান বিক্রি করে আয় হতো ১০ কোটি টাকা। যার ভাগ পেতো আরও ৩ কনস্টেবল।
র‌্যাব-৭ এর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সদস্যরা জানান, গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপুল এলাকায় একটি বাচ্চাকে ধাক্কা দেয় একটি গাড়ি। এই সময় গাড়িটি ধাওয়া করে র‌্যাব সদস্যরা। এক পর্যায়ে গাড়িটি আটক করে তল্লাশি চালানো হয়।
উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ সাত লাখ টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন সেট, বিভিন্ন ব্যাংকের ৮টি  ক্রেডিট কার্ড ও মাদকের টাকার হিসাব লেখা নোটবুক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আটক হওয়া ব্যক্তিটির নাম মাহফুজুর রহমান। তিনি ঢাকায় পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের টেকনিক্যাল বিভাগের এএসআই। আর তার ড্রাইভারের নাম জাভেদ আলি। তার এ কাজে পুলিশ বিভাগের আরও কয়েকজন অসাধু পুলিশ সদস্য জড়িত রয়েছে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের দুই পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে ইয়াবার চালানটি নিয়ে আসছিলেন তিনি। ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের ৩ কনস্টেবলের কাছে সেগুলো পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল তার।
র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক সোহেল মাহমুদ বলেন, আমরা বিস্মিত। খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আড়ালে এই ধরনের ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল ইয়াবা ব্যবসায়ী মাহফুজ। তার সঙ্গে অনেক বড় মাদক ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ রয়েছে। একটি নোটবুক থেকে পাওয়া লিস্টে এসব তথ্য রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা চলছে। আশা করছি অনেক গোপন তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ ব্যবসায় আর কেউ জড়িত কিনা সেই ব্যাপারেও বিস্তারিত জানা যাবে বলে মনে করছি।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ | জুন ২২, ২০১৫