| সকাল ৮:৫৮ - শনিবার - ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

মিনি পাঠশালা প্রতিবন্ধিতা নিপাকে দমাতে পারেনি

নেত্রকোনা প্রতিনিধি : ১৬ জুন ২০১৫, মঙ্গলবার: 

জেলার কেন্দুয়ার প্রত্যন্ত পল্লী বেজগাও গ্রামের মেয়ে নিপা আক্তার বয়স ১৮ কি উনিশ। বাবা দেলোয়ার হোসেন পেশায় কৃষক। তার দুই সন্তানের মধ্যে নিপা বড়। জন্ম থেকে সে প্রতিবন্ধি। উচ্চতা প্রায় দুই ফুট। সোজা হায়ে দাড়াতে পারেনা। চলাফেরা করে হামাগুড়ি দিয়ে এবং অন্যের সাহায্যে। প্রবল ইচ্ছা শক্তির কাছে প্রতিবন্ধিতা তাকে দমাতে পারেনি। এইচএসসি পাশ করে সে এবার ডিগ্রিতে ভর্তি হবে। আশা দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে মানুষের সেবা করা এবং নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী রোজগার করে আত্ম মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকা। নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছে পাঠশালা। ঘরের বারান্দায় তিন বেলায় তৃতীয় থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন- গ্রামের প্রায় ৩০জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করে।
নিপা শারিরিক প্রতিবন্ধি। ১৯৯৫ সালে জেলার কেন্দুয়ার বলাইশিমূল ইউনিয়নের বেজগাও গ্রামে তার জন্ম। নিপা বাড়ির অদূরে বেজগাও সরকারী প্রাথমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। পরে নওয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেবে ২০১১ সালে এসএসপি পাশ করে। হেটে চলাফেরা করতে না পাড়ায় তার সহপাটিরা কুলে করে বিদ্যালয়ে আনা নেয়া করত। এসএসসি পাশ করার পর বাবা দেলেয়ার হোসেন লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে চান। কিন’ নিপার ইচ্ছার কাছে হার মানতে হয় সবাইকে। ভর্তি হয় কেন্দুয়া ডিগ্রি কলেজে। ওই কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এইচএসসি পাশ করে। এসএসসি পাশ করার পর থেকে বাড়িতে আশপাশের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে সে নিজের লেখাপড়া এবং অন্যান্য খরচ জোগায়। নিজের পড়ার পাশাপাশি সে গ্রামের ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট পড়ায়।
নিপা কারো বোঝা হতে চায়না। সকাল থেকে বিকেল পর্যন- তিন বেলায় সে তৃতীয় থেকে নবম শ্রেণি পর্যন- ৩০জন শিক্ষার্থীকে পড়ায়। তার পথচলায় বাবা মা ও তার কয়েক সহপাটির সহযোগিতা পেয়েছে। কলেজ থেকে বা সরকারীভাবে কোন ধরনের সহযোগিতা পায়নি। নিজের যোগ্যতা বলে কোন সরকারী চাকুরি করে নিজের জীবন চালাতে চায়। হোক শিক্ষকতা, স্বাস’্য কর্মী বা ব্যাংকার। এ জন্য সে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট মহলের সহযোগিতা কামনা করছে।
নিপা নিজের যোগ্যতায় কাজ করে সমাজে অন্য দশজন মানুষের মত বেঁচে থাকতে চায়। সে বলে, আমি নিজের উপার্জন দিয়ে লেখাপড়া করি এবং নিজের খরচ চালাই। শিক্ষকতা ও স্বাস’্য বিভাগে কোন চাকুরী হলে আমি করতে পারব। আমি কারও বোঝা হতে চাইনা। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ছোট বেলা থেকে নিপা খুব জেদি এবং লেখাপড়ায় মনযোগি। মেট্রিক পাশ করার পর লেখাপড়া না করতে বলেছিলাম। কিন’ পারলামনা কান্নাকাটি করে। তার ইচ্ছার কাছে আমাকে হার মানতে হয়েছে। তার লেখাপড়ার খরচ নিজেই প্রাইভেট পড়িয়ে যোগার করে। প্রতিবন্ধি হওয়ার পরও সরকারী কোন সহযোগিতা পায়নি সে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৫:৪২ অপরাহ্ণ | জুন ১৬, ২০১৫