| সকাল ১১:০৬ - বৃহস্পতিবার - ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

মোদিকে স্বাগত জানাতে ঢাকা প্রস্তুত

  অনলাইন ডেস্ক, ০৫ জুন, শুক্রবার,,

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দু’দিনের রাষ্ট্্রীয় সফরে কাল এখানে আসার পর তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভারতের ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ২০১৪ সালের ২৬ মে শপথ নিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আগামিকাল সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় এসে পৌঁছবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তাঁর এ সফর প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমুখী সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বৃহস্পতিবার এখানে বাসস’র সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, বাংলাদেশ মোদিকে স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা রয়েছে।
তাঁর সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাবে এবং অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট উপ-আঞ্চলিক বিষয়গুলো এ সময় বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী আজ এক সংবাদ সম্মেলনে মোদির সফর উপলক্ষে বলেছেন, এ সফর এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
আমাদের দিল্লী সংবাদদাতা জানান, মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক সচিব ড. জয়শংকর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এ সফর দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সফরের বিস্তারিত জানিয়ে বলেন, মোদির বাংলাদেশ সফরকালে দুটি দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে এবং বাণিজ্য জোরদার, যোগাযোগ ও সন্ত্রাস বিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি, অভ্যন্তরীণ পানি বিষয়ক প্রটোকল, উপ-কূলীয় জাহাজ চলাচল, পণ্যের মান সংক্রান্ত সহযোগিতা এবং সংস্কৃতিক বিষয়ক বেশ কিছু চুক্তি এ সফরকালে স্বাক্ষরিত হতে পারে। এ ছাড়াও উভয় দেশের সমুদ্র নিরাপত্তা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মানব পাচার ও জাল নোট রোধ এবং নিরাপত্তা বিষয়ে পৃথক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে।
আগামিকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠককালে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্থলসীমান্ত চুক্তির অনুমোদনের দলিলপত্র হস্তান্তর করা হবে।
তিস্তা ইস্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, বিষয়টি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে আলোচনায় আসবে না। কারণ, আমরা বিষয়টি নিয়ে এখনো কাজ করছি।
নরেন্দ্র মোদির সফরের কর্মসূচি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন। ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি জেট ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অনার প্রদান করবে। তিনি বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মাকের কাছে একটি অস্থায়ী সালাম গ্রহণ মঞ্চ থেকে সালাম গ্রহণ করবেন।  বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন এবং সামরিক কায়দায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
মোদি পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে যাবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করবেন।
মোদি জাদুঘর থেকে ফেরার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বিকেলে তাঁর সঙ্গে হোটেল কক্ষে সাক্ষাৎ করবেন।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কোলকাতা-আগরতলা এবং ঢাকা-শিলং-গৌহাটি বাস সার্ভিস চলাচল যৌথভাবে উদ্বোধন করবেন।
পরে দুই প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করবেন এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দ্বিপাক্ষিক শীর্ষক বৈঠকের আগে তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি ২৫ মিনিট একান্ত বৈঠক করবেন।
একান্ত বৈঠকের পর ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কোলকাতায় প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণের একটি সিডি এবং স্থলসীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনের ভারতীয় সংসদের কার্যবিবরণী হস্তান্তর করা হবে।   শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী সৈন্যদের আত্মসর্ম্পণ অনুষ্ঠানের আলোকচিত্র ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেবেন।
দুই নেতা পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদলের সদস্যদের নিয়ে শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেবেন।
এ বৈঠক এক ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। পরে দুই নেতা যৌথ বিবৃতি দেবেন।
পরে সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী সোনারগাঁও হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেয়া নৈশভোজের আগে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদি ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিনে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ও পুরনো ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শনে যাবেন। তিনি পরে বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সারি কমপ্লেক্সে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে প্রায় ১২টা ৪০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে তাঁর সম্মানে দেয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন।
তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর পক্ষে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ গ্রহণ করবেন।
সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বেলা ৩টা ১০ মিনিটে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের উদ্ধৃতি দিয়ে আমাদের নয়াদিল্লী সংবাদদাতা জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৩৬ ঘন্টা ঢাকা সফরকালে তাঁর হোটেল কক্ষে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার মাধ্যমে তাঁর দু’দিনের সফর সমাপ্ত করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নরেন্দ্র মোদিকে বিদায় জানাবেন  (বাসস) :

সর্বশেষ আপডেটঃ ১০:৩৫ অপরাহ্ণ | জুন ০৫, ২০১৫